যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণের মৃত্যু
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৯:১৮ AM , আপডেট: ০৭ আগস্ট ২০২৫, ১২:২৪ PM
যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে প্রাণ গেল এক বাংলাদেশি তরুণের। উইন রোজারিও নামে ২২ বছর বয়সী যুবককে নিজ বাসায় ঢুকে গুলি করে পুলিশ। এরপর হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহতের বাবার অভিযোগ, তার নিরপরাধ ছেলেকে হত্যা করেছে পুলিশ।
ঘটনাস্থল নিউইয়র্কের ওজন পার্ক। ১০৩ স্ট্রিট ও ১০১ অ্যাভিনিউয়ের বাসা থেকে নিজেই ৯১১ নম্বরে কল করেন বাংলাদেশি তরুণ উইন রোজারিও। পুলিশকে জানান, তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। নিজের মৃত্যুর মাধ্যমে মানসিক রোগের ইতি টানতে চান।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে ফোন কল পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিশ জানায়, বাড়িতে পৌঁছে উইন রোজারিওকে কাঁচি হাতে দেখতে পান তারা। এসময় কাঁচি নিয়ে তেড়ে আসলে সরাসরি গুলি চালায় পুলিশ।
পুলিশ ডিপার্টমেন্টের টহল প্রধান জন চেল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, দুজন অফিসার মানসিক যন্ত্রণায় থাকা এক ব্যক্তি সম্পর্কে ৯১১ নম্বরে ফোনকলের প্রতিক্রিয়ায় অ্যাপার্টমেন্টে যাওয়ার পরে গুলি চালানোর এই ঘটনা ঘটে। তিনি বলেছেন, সেখানে পরিস্থিতি ‘বেশ উত্তেজনাপূর্ণ, বিশৃঙ্খল এবং বিপজ্জনক ছিল। পুলিশ মনে করছে, নিহত রোজারিও নিজেই ৯১১ নম্বরে কল করেছিলেন।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, কিন্তু নিহত তরুণের ভাই এই গুলি চালানোর ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং তিনি ঘটনার পুলিশি বিবরণের বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেছেন, তার মা তার ছেলেকে আটকাচ্ছিলেন এবং তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, পুলিশ অফিসারদের তাদের বন্দুক থেকে গুলি করার দরকার ছিল না।
চিফ চেল বলেছেন, অ্যাপার্টমেন্টে যাওয়ার পর অফিসাররা রোজারিওকে হেফাজতে নেওয়ার চেষ্টা করলে তিনি একটি ড্রয়ার থেকে কাঁচি বের করে অফিসারদের দিকে ধেয়ে আসেন। পরে উভয় অফিসারই রোজারিওর ওপর টেজারের মাধ্যমে গুলি করেন এবং তাকে পরাস্ত করা হয়।
জন চেল আরও বলেন, ‘কিন্তু তার মা ছেলেকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেন। কিন্তু এটি করতে গিয়ে তিনি ঘটনাক্রমে রোজারিওর শরীর থেকে টেজার সরিয়ে দেন। আর সেই সময়ে রোজারিও কাঁচি তুলে আবার অফিসারদের দিকে তেড়ে আসেন।’
চেল বলেন, ‘এই পরিস্থিতেতে আত্মরক্ষা করার জন্য তাদের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।’
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, রোজারিওর ১৭ বছর বয়সী ভাই উশতো রোজারিও এক সাক্ষাৎকারে পুলিশি এই বর্ণনার বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, তার মা এনকাউন্টারের পুরো সময়জুড়ে তার ভাইকে তার কোলে ধরে রেখেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমার মা যখন তাকে জড়িয়ে ধরে ছিলেন, তখন তারা তাকে টেজার দিয়ে গুলি করে। টেজার দিয়ে গুলি করার পরও আমার ভাই নিচে পড়ে যাননি। তাই একজন পুলিশ বন্দুক বের করে তাকে গুলি করে এবং সেসময়ও আমার মা তাকে জড়িয়ে ধরে ছিলেন।’
তিনি বলেন, এভাবে গুলি করা ছিল অপ্রয়োজনীয়। উশতো রোজারিও বলেন, ‘প্রথমত, তার বিরুদ্ধে দুজন পুলিশ অফিসার সেখানে ছিলেন। এবং আমার মা আগে থেকেই তাকে ধরে রেখেছিলেন, তাই তিনি সত্যিই কিছু করতে পারতেন না।’
তিনি আরও বলেছেন: ‘আমি মনে করি না কেবল একটি কাঁচি দুজন পুলিশ অফিসারের জন্য হুমকি ছিল।’
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, নিউইয়র্কে গত দুই মাসে পুলিশের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত তৃতীয় ব্যক্তি হচ্ছেন রোজারিও।
উশতো এবং উইনের বাবা ফ্রান্সিস রোজারিও বলেছেন, তাদের পরিবার ১০ বছর আগে বাংলাদেশ থেকে নিউইয়র্কে অভিবাসী হয়েছিল এবং উইনের স্বপ্ন ছিল মার্কিন সেনাবাহিনীতে যোগদান করা। তবে গ্রিন কার্ড পেতে বিলম্বের কারণে তার সেই পরিকল্পনা স্থগিত করা হয়।
উশতো রোজারিও বলেছেন, তার ভাই দুই বছর আগে ওজোন পার্কের জন অ্যাডামস হাই স্কুল থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন এবং সম্প্রতি বিষণ্নতার মধ্যে ছিলেন।
তার বাবা বলেন, উইন রোজারিও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে গত বছর স্বল্প সময়ের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।