নিয়ম ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মান উন্নত করা সম্ভব না

ড. মো. কামরুল হাসান মামুন
ড. মো. কামরুল হাসান মামুন   © সংগৃহীত

যেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্ব রেঙ্কিং-এ ওপরের দিকে সেগুলোর একটি কমন জিনিস তারা কাকে দিয়ে কোন কাজটি করানো উচিত সেটা ভালো করে জানে। সবাইকে দিয়ে সব কাজ করানো যায় না। তাতে রিসোর্সের অপচয় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

যেই কাজ সাধারণ অনার্স/মাস্টার্স পাশ কাউকে দিয়ে করানো যায় সেই কাজ যার পিএইচডি + পোস্ট ডক আছে এমন অধ্যাপক দিয়ে কেন করাবে? যেই ক্লাসগুলো ভালো ফলাফল করা অনার্স/মাস্টার্স পাশ করাদের দিয়ে করিয়ে ফেলা যায় সেই কাজ কেন পিএইচডি + পোস্ট ডক করা কোন অধ্যাপক দিয়ে করাবে? তারা করায় না।

যাতে করাতে না হয় সেই জন্যই তো তারা adjunct প্রফেসর নিয়োগ দেয়, পার্ট-টাইম শিক্ষক নিয়োগ দেয়, টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট ইত্যাদি নিয়োগ দেয়। প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের অধিকাংশ তত্ত্বীয় ক্লাস adjunct প্রফেসর আর পার্ট-টাইম শিক্ষক দিয়ে করিয়ে ফেলার চেষ্টা করে। আর ল্যাব ক্লাস পুরোপুরিই টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্টদের দিয়ে করিয়ে ফেলে।

এমনকি আবাসিক হল চালানোর দায়িত্বও কোন শিক্ষককে দেয় না। ওটা একটা হোটেল ম্যানেজমেন্ট জাতীয় কাজ। ছাত্রদের হলে সিট বণ্টন এইটা কখনো কোন শিক্ষকের কাজ হতে পারে না। তাই এইটা করার জন্য তারা প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়।

আর আমাদের দেশে কি করা হয়? অধ্যাপকদের দিয়ে ফল বিন্যাসের কাজ পর্যন্ত করানো হয়। অথচ আমাদের একটা কন্ট্রোলার বা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস আছে এই কাজ করার জন্য। তাদের এই কাজের বিশেষজ্ঞ হওয়ার কথা। কিন্তু তাদেরকে বিশ্বাস করিনা বলে শিক্ষকদের দিয়ে এই কাজ করানো হয়।

আরও পড়ুন : বিবর্তন মানবা না তাহলে d/dt মানবা কিভাবে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিজেই যার ভার বহন করতে পারছিল না সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঁধে এখন ঢাকার বড় বড় ৭টি কলেজ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে যার প্রত্যেকটি হতে পারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমান বা বড়। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের নিজ বিভাগের দায়িত্বের বাহিরেও ওই ৭ কলেজের নানা কাজে ব্যস্ত থাকে।

শিক্ষকদের যদি এইসব নিজের এবং অন্যদের ফল বিন্যাসের কাজে ব্যস্ত রাখা হয় তারা কখন পড়বে এবং গবেষণা করবে? তার উপর শিক্ষকদের বেতন দক্ষিণ এশিয়ার সর্ব নিম্ন। এমনকি নিজ দেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন ৩ ভাগের এক ভাগেরও কম।

বেতন কম হওয়ার কারণে শিক্ষকদের জন্য নিয়ম করা হয়েছে যে তারা ইচ্ছে করলে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পার্ট-টাইম শিক্ষকতার কাজ করতে পারেন। তাহলে ঢাকা শহরে কোন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি একদিন একটা ক্লাস থাকে জ্যাম ও অন্যান্য কারণে সেইদিন সেই শিক্ষকের পক্ষে তার নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্ভিস দেওয়ার মত আর সময় কোথায়? তাহলে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। অন্যত্র যাওয়ার কারণে গবেষণায় সময় দিতে পারে না।

সমাধান কি? শিক্ষকদের বেতন বাড়ান যেন এক বা একাধিক পার্ট-টাইম চাকুরী না করতে হয় এবং আইন করুন যেন করতে না পারে। বেশি করে দেশ বিদেশের পোস্ট-ডক নিয়োগ দিন এবং তাদেরকে দিয়েও পাঠ দানের ব্যবস্থা করুন তাতে আমাদের শিক্ষার্থীরা বিদেশী শিক্ষকের flavor পাবে আর তাতে রেঙ্কিং এর উন্নতিও হবে।

শক্তিশালী পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করুন। তাতে পিএইচডি ছাত্রদের দিয়ে ল্যাবগুলো চালানো যায়। পিএইচডি ছাত্র দিয়ে ল্যাব চালালে ল্যাবগুলো আরও ডাইনামিক হবে। অবশ্যই ল্যাবগুলো অধ্যাপকদের তত্বাবধানেই চলবে কিন্তু অধ্যাপকরা ল্যাবে লকড হয়ে থাকবে না। এই কয়টা কাজ করলে আমি নিশ্চিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেঙ্কিং এর অনেক উন্নতি হবে। অধ্যাপকদের আরও বেশি করে গবেষণা করতে চাপ দেওয়া যাবে। 

যারা ভালো গবেষণা করবে তাদের আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া উচিত এবং একই সাথে ক্লাস লোড কমানো উচিত যাতে তারা আরও বেশি গবেষণায় মনোনিবেশ করতে পারে। এইসব কথাগুলো যে বললাম এইগুলো আমার আবিষ্কার বা আমার আইডিয়া না। এইসব নিয়ম দিয়েই উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উন্নত হয়েছে। এইসব নিয়ম ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মান উন্নত করা সম্ভব না কেউ করতে পারেনি।


সর্বশেষ সংবাদ