সড়ক দুর্ঘটনায় এক মেধাবী পর্বত আরোহী শিক্ষকের জীবনাবসান
- মোঃ বদরুল আলম মুকুল
- প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২০, ০২:৩৭ PM , আপডেট: ০৮ আগস্ট ২০২০, ০২:৫৭ PM
আমাদের ছেড়ে না ফিরার দেশে চলে গেলেন অদম্য সাহসী পর্বত আরোহী, ঢাকা মহানগরীর আইয়ুব আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রেশমা নাহার রত্না। এর আগে ২০১৯ সালে ১ ডিসেম্বর আমরা প্রধান শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তৃতীয় তলায় ডিজি স্যারের সাথে সাক্ষাতের অপেক্ষায় বসে আছি।
ইতিমধ্যে ঐক্য পরিষদের আহবায়ক মোঃ আনিসুর রহমানের সাথে ঐক্য পরিষদের কিছু নেতৃবৃন্দ এসে আমাদের সাথে যোগ দিলেন। আমাদের সবার একই উদ্দেশ্য ডিজি সারের সাথে সাক্ষাৎ করা।
আমরা সবাই ওয়েটিং রুমে বসে খোশগল্প করছি। ইতিমধ্যে দুজন মহিলা এসে আমাদের মাঝে উপস্থিত হলেন। তারা সালাম বিনিময় করে বললেন স্যারেরা কেমন আছেন? মহিলা দুজনের মধ্যে একজন হলো আমার সাবেক লালবাগ থানার গনকটুলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকর্মী জনাব, মাকসুদা বেগম।
বর্তমান ধানমন্ডি থানায় কর্মরত। মাকসুদা বেগম তার সাথের মেয়েটির সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন, স্যার ওর নাম রেশমা নাহার রত্না। আমাদের ধানমন্ডি থানার আইয়ুব আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। খুব ভালো মেয়ে শিক্ষক হিসেবেও খুবই সুনাম আছে।
ঐক্য পরিষদের আনিসুর রহমান সাহেব আমাকে জানালেন বদরুল ভাই, আমি ওর জন্যই ডিজি সারের সাথে সাক্ষাৎ করতে এসেছি। আপনি এসেছেন ভালোই হলো। মেয়েটি হাসিমুখে সবার সাথে কথা বলছিলেন। অতি সহজেই ও আমাদের সবার সাথে মিলে গেল। মনে হলো অনেক দিনের পরিচিত।
রত্না আমাকে বিনয়ের সাথে বাববার বলছিলেন স্যার, আমার জন্য ডিজি স্যারের কাছে একটু সুপারিশ করে দিবেন যাতে ডিজি স্যার আনার জন্য একটা স্পেনসারের সুযোগ করে দেন। আমি অভয় দিয়ে বললাম কোন সমস্যা নেই বলে দিব।
এরই মধ্যে ডিজি স্যারের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য আমাদের ডাক এলো। আমরা নেতৃবৃন্দ যথারীতি স্যারের কক্ষের মধ্যে প্রবেশ করলাম শিক্ষকদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আমরা ডিজি মহোদয়ের সাথে আলাপ আলোচনা করার পর আমরা রেশমাকে সাথে কথা বলার সুয়োগ করে দিলাম।
ওর কথা শুনে আমরা সবাই মুগ্ধ। স্যার ভীষন খুশি হলো ওর পূর্বের পর্বত আরোহনের অভিজ্ঞতার গল্প শুনে। অবশেষে ডিজি স্যার বললেন তোমাকে হিমালয় পর্বতে উঠার জন্য সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবো তুমি প্রস্তুতি নিতে থাক।
আমরা রেশমার মুখ থেকে পর্বত অভিযানের নানা রকম অভিজ্ঞতার গল্প শুনছিলাম। ইতিপূর্বে সে কিভাবে পাকিস্থান ও নেপালে গিয়ে ছয় হাজার ফুট উচু পর্বতে আরোহন করেছিলেন তার গল্প শুনালো।
এবার হিমালয়ের চুড়ায় উঠার পালা। এর জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ মিয়াদী প্রশিক্ষণ, পর্বতে উঠার জন্য বিভিন্ন প্রকার উপকরন ক্রয় ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক খরচ যা বহন করার সামর্থ রেশমার নেই।
ডিজি স্যার আর্থিক সহযোগিতা করার জন্য আশ্বাস প্রদান করলেন। এর পর ওকে নিয়ে আমরা পলিসি এন্ড অপারেশন এর পরিচালক জনাব, খান মোহাম্মদ নুরুল আমিন স্যারের সাথে পরিচয় করে দিলাম। পরিচয়ে নুরুল আমিন স্যার বললেন তোমার বাড়ি কোথায় ও বললো আমার বাড়ি নড়াইলে স্যার শুনে বললেন আমার বাড়িও তো নড়াইলে ভালোই হলো।
স্যার বললেন তুমি আমার জেলার মেয়ে হিসেবে আমি যতটুকু পারি তোমাকে সাহায্য সহযোগিতা করবো তবে একটা আবেদন রেখে যাও।
রেশমা ওর জীবন যুদ্ধের কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেললেন। বললেন ছোট বয়সে বাবা মারা গেছেন অভাবের সংসার। রেশমাই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি। এখনো বিয়ে হয়নি বয়স ২৫/২৬ বছরের মত হবে। মা ও ছোট ভাই বোন নিয়ে একসাথে থাকেন। জীবন যুদ্ধে সংগ্রাম করে এ পর্যন্ত এসেছে।
জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবার প্রবল আগ্রহ সাহসী ইচ্ছায় আপোষহীন। পবর্তে উঠার জন্য অনেকেই আজেবাজে মন্তব্য করে থাকেন। তারপরও কোন কিছুই তাকে হার মানাতে পারেনি। সবকিছুই অপূর্ণ রেখেই চলে গেলেন না ফিরার দেশে। সবই নিয়তি এখানে আমাদের কারোর কোন হাত নেই। আমরা রেশমার রুহের মাগফেরাত কামনা করি। আল্লাহ রেশমাকে যেন বেহেশত নছিব করে আমিন।
লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতি।