শিশুর মেধা বিকাশে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাই যথেষ্ট

লেখক: ইশরাত জাহান
লেখক: ইশরাত জাহান

কোমলমতি শিশুদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বর্তমানে যে শিক্ষাক্রম নির্ধারণ করেছে তা একজন শিশুর মেধা বিকাশের জন্যই যথেষ্ট। অতি উৎসাহী কিছু অভিভাবক তাদের সন্তান কে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে না পাঠিয়ে কিন্ডারগার্টেন বা কে.জি. স্কুলে পাঠায়। একজন শিশুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণিতে যেখানে ২ টি বিষয়ে পড়ানো হয় সেখানে কে.জি. স্কুল গুলোতে ৬ টি বিষয়ে পড়ানো হয়। এছাড়া তৃতীয় শ্রেণিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ানো হয় ৬ টি বিষয় অন্যদিকে কে.জি. স্কুল গুলোতে পড়ানো হয় ১১ টি বিষয় এতে কোমলমতি শিশুরা মানসিক ভাবে অনেক চাপে পড়ে।

কে.জি. স্কুল গুলোতে একজন শিশু হয়তো সাময়িক ভাবে ভালো ফলাফল করে কিন্তু পরবর্তীতে যে কোন প্রতিযোগিতায় তারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের থেকে পিছিয়ে পড়ে। কারণ আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬ টি মূল বিষয়ের পাশাপাশি সহ শিক্ষা কার্যক্রম হিসাবে শারীরিক শিক্ষা, চারু ও কারুকলা ও সংগীত বিষয়ে নিয়মিত ক্লাস হয়। এতে একজন শিশুর বিভিন্ন  ধরনের প্রতিভার বিকাশ ঘটে।
 
শিশু মানেই নিষ্পাপ ঝলমলে মুখ, মায়াময় আকর্ষণ অপার সম্ভাবনা। প্রতিটি শিশুর মধ্যেই লুকায়িত থাকে অনন্য সুপ্ত প্রতিভা। শিশুদের মাঝে সেই প্রতিভাকে জাগিয়ে তুলতে নিরলস পরিশ্রমই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সার্থকতা। কোমলমতি শিশুদের মাঝে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত প্রতিভা জাগিয়ে তোলার মধ্য দিয়ে উদ্ভাসিত হয় আগামীদিন। আজকের শিশুরাই আগামীদিনের পরিণত মানুষ। তারাই বড়দের স্বপ্নের উত্তরাধিকার। শিশুরাই জাতির উত্তরাধিকার। এরাই জাতির কর্ণধার। আজকে যারা শিশু তারাই একদিন হবে শিক্ষক, অধ্যাপক, কবি, সাহিত্যিক, সেনাপতি, বিজ্ঞানী, দার্শনিক, অর্থনীতিবিদ ও শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক। শিশুরা শুধু পিতা মাতার আরাধনার ধন নয় বরং তারা দেশ ও জাতির সম্পদ। তারা দেশ ও জাতির শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ।

শিশুদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশ নিশ্চিত হলে দেশ ও জাতির উপর পড়বে তার প্রত্যক্ষ প্রভাব। তাই এ অনন্ত সম্ভাবনাময় সম্পদকে রক্ষা করা ও সুন্দর ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করার বিষয়টি অধিকতর জরুরি।  শিশুর মন, বুদ্ধিমত্তা, আদব-কায়দা, নৈতিকতা, ইত্যাদি সকল দিকে তার বিকাশ নিশ্চিত করতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জাতীয় দিবস সমূহ পালন করা হয়। এছাড়াও আন্ত:প্রাথমিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা জাতীয় শিশু পদক প্রতিযোগিতা বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ড কাপ প্রতিযোগিতা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এই ধরনের প্রতিযোগিতা অংশগ্রহণ করে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটে। এছাড়া বিভিন্ন মনোবিজ্ঞানীদের মতে  ১- ৬ বছরের শিশুদের মানসিক বিকাশ ঘটে বিভিন্ন ধরনের রঙ্গিন খেলনার সাথে খেলার মাধ্যমে যা কেবল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতেই চালু রয়েছে। তাই শিশুর শারীরিক, মানসিক, সামাজিক নৈতিক মানবিক গুনা বলীর বিকাশ সাধন কেবল প্রাথমিক বিদ্যালয়েই সম্ভব। 

তাই শুধু বই নির্ভর পড়ার দিকে না তাকিয়ে বাড়িতে শিশুর খেলাধুলার সুযোগ করে দিতে হবে, তার সামনে বাড়ির বড়রা ভাল কাজ ও উন্নত জীবন যাপনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। যেমন অন্যের মতামতের গুরুত্ব দেওয়া, শ্রদ্ধা করা, সময় মত কাজ করা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, সত্য ও ন্যায়ের পথে চলা, অসুবিধাগ্রস্তদের সাহায্য সহযোগিতা করা। এই আদব কায়দা গুলো পরিবার থেকে পেয়ে থাকে শিশুরা। শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ রূপকার। সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা প্রিয় এই দেশ সোনার বাংলাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বিশ্ব দরবারে। তারাই একদিন বিশ্ব পরিচালনায় নেতৃত্ব দেবে। আজকের শিশুদের হাতেই ন্যস্ত হবে আগামী দিনের নেতৃত্ব। 

শিশুর মেধা বিকাশে শিক্ষকের ভূমিকার বিকল্প নেই। শিক্ষক ছাড়া শিশুর বিকাশ সম্ভব নয়। শিক্ষকগণ হচ্ছেন মানুষ গড়ার কারিগর। একজন শিক্ষক শিশুর বিকাশে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখতে পারেন। শিশুরা সেই শিক্ষকদের থেকেই বিকশিত হবে। শিক্ষকগণ হচ্ছেন দেশ ও জাতির আলো। শিশুরা সেই শিক্ষকদের থেকে আলোকিত হবে, বিকশিত হবে। এজন্য প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য কী? এর জবাবে বলা হয়েছে শিশুর শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, নৈতিক, মানবিক, নান্দনিক, আধ্যাত্মিক ও আবেগিক বিকাশ সাধন এবং তাদের দেশাত্মবোধে, বিজ্ঞান মনস্কতায়, ও উন্নত জীবনের স্বপ্নদর্শনে উদ্বুদ্ধ করা। শিশুর এসব ধরনের বিকাশ সাধনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হয় শিক্ষকদেরকেই। শিশুরাই দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। সেই শিশুদের বাদ দিয়ে পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতির অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। তাই শিশুর বিকাশে আমাদের সকলের এগিয়ে আসা উচিত।

আমি একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে অভিভাবকদের কাছে অনুরোধ করবো আপনারা আপনাদের শিশুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ দিন। তাহলে আপনাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভীত মজবুত হবে এবং উন্নত ও সমৃদ্ধশালী জাতি গড়ে উঠবে। 

লেখক: সহকারী শিক্ষক, সিংগা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাজশাহী।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence