মাধ্যমিক পরীক্ষায় সাফল্যের জন্য অতি জরুরি তিন পরামর্শ

শরীফ উল্যাহ
শরীফ উল্যাহ  © সংগৃহীত

আর ক'দিন বাদেই ২০২৩ সালের এসএসসি, দাখিল ও সমমান পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। এ সময় পরীক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েকটি বিষয়ে সচেতনতা থাকা অত্যন্ত জরুরি। এসব ক্ষেত্রে অবহেলা করলে কিংবা যথাযথভাবে গুরুত্ব ও মনোযোগ না দিলে প্রত্যাশিত ফলাফলের পরিবর্তে খারাপ ফলাফল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও বাস্তবতার আলোকে পরীক্ষার্থীদেরকে তিনটি  বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরত্ব ও মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ প্রদান করছি।

১। সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার করা:

গত পরশু রাত সাড়ে ৮টার পর আমি আমার প্রশাসনিক এলাকার স্থানীয় একটি মার্কেটে প্রবেশের সাথে সাথে কয়েকজন ছেলে একের পর এক আমাকে গণ সালাম দেওয়া শুরু করলো। আমি সকলের সালামের জবাব দিচ্ছিলাম আর তাদেরকে চেনার চেষ্টা করছিলাম। তারপর অনুমান থেকেই তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলাম— তোমরা এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী? তারা বললো, ‘জ্বি, স্যার।’ তাদের প্রতিষ্ঠানের নামও জেনে নিলাম।

তাদের জিজ্ঞাসা করলাম, তোমরা এ সময়ে মার্কেটে ঘুরাফেরা করছো কেন? তোমাদের এখন বাড়িতে থাকার কথা! পড়াশুনা করার কথা! তখন তারা কী যেন একটা প্রয়োজনে এখানে এসেছে বলে মৃদুস্বরে আমাকে বলার চেষ্টা করলো। সে যাই হোক। তাদের পরীক্ষার আর অল্প কিছুদিন বাকি। পরীক্ষা দরজায় কড়া নাড়ছে। কথায় আছে— সময় এবং স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না। সময় অতি দ্রুত গড়িয়ে যায়। সময়কে ধরে রাখা যায় না।

একজন শিক্ষার্থী তার সময়কে যেভাবে কাজে লাগানো দরকার বা কাজে লাগানো যৌক্তিক সে যদি সেভাবে কাজে না লাগায় তাহলে সময় তার জন্য অপেক্ষা করে কিংবা তার সাথে ভিন্ন আচরণ করে তার অনুকূলে কল্যাণকর কিছুই করে দিতে পারবে না। তাই প্রতিটি পরীক্ষার্থীর উচিত সর্বোচ্চভাবে সময় সচেতন হওয়া।

পরীক্ষার আগে এই সময়ে পড়াশুনা বহির্ভূত অহেতুক আড্ডা, বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া এবং আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। লম্বা সময় টিভি দেখে, ফেসবুকিং করে, ফোনে কথা বলে অথবা গল্প করে সময় নষ্ট করা যাবে না।

এ সময়টি এতো বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে, যদি একজন পরীক্ষার্থী ঠিকভাবে সময়কে ভাগ করে যথাযথভাবে প্রস্তুতি নিতে পারে তবে তার পক্ষে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করা অনেক সহজ হতে পারে। সুতরাং এসময়ে একজন পরীক্ষার্থী অযথা এক মূহুর্ত সময় নষ্ট না করে সময়ের সঠিক ব্যবহারে অধিক মনোযোগী হবে— এটিই প্রত্যাশিত।

২। পড়াশোনা বা প্রস্তুতি ও পর্যাপ্ত  অনুশীলন করা:

মনীষীদের মতে— ‘অনুশীলন একটি মানুষকে নিখুঁত করে তোলে।’ নিয়মিত পড়াশুনার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত অনুশীলনই প্রস্তুতিকে পূর্ণতা দান করে। শিক্ষাজীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি সার্টিফিকেট অর্জনের এ পরীক্ষা দিতে পারাটা বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর জন্যই অত্যন্ত সৌভাগ্যের ও আনন্দের বিষয়। ধারণা করছি— ইতোমধ্যে অনেক শিক্ষার্থী খুব ভালো প্রস্তুতি নিয়েছে। কেউ কেউ শেষ মূহুর্তে গুছিয়ে নিচ্ছে।

যাদের প্রস্তুতি তুলনামূলক খারাপ তাদের মধ্যে হয়তো কিছুটা টেনশন কাজ করছে। তবে আমি সকলের উদ্দেশ্যে বলবো— প্রতিটি বিষয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ প্রস্তুতির জন্য তোমাদেরকে অবশ্যই সর্বোচ্চ মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করতে হবে এবং প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। অনেকে হয়তো বেশ ভালো প্রস্তুতি নিয়েছো। তবে এতে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো সুযোগ নেই।

কোনো বিষয়কে বেশি সহজ মনে করা কিংবা কোনো বিষয়কে কম গুরুত্ব দেওয়া মোটেও সমীচীন হবে না। সব বিষয়কে অবশ্যই সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। কোনো সাবজেক্ট সহজ মনে হলে সেটিও ভালো করে পড়তে হবে, যথাসময়ে যথাযথভাবে রিভাইজ দিতে হবে। কঠিন বিষয়ে অবশ্যই তুলনামূলক সময় বেশি দিতে হবে।

প্রতিটি সাবজেক্টে দুর্বলতা চিহ্নিত করে একটু সময় দিয়ে তা দূর করতে হবে। সারাবছর যতই পড়াশুনা করে থাকো অনেক কিছুই ভুলে যেতে পারো। পরীক্ষার আগে এই সময়ে যত বেশি পড়বে তত বেশি মনে থাকবে এবং এতে করে পরীক্ষায় তোমাদের ভালো করার সম্ভাবনা অনেক গুণ বেড়ে যাবে।

আগামী দিনগুলো সুন্দর করে ভাগ করে সাবজেক্ট অনুযায়ী দিন ও সময় নির্ধারণ করে পুরোপুরি পড়াশুনায় লেগে থাকতে হবে। বিভিন্নভাবে পর্যাপ্ত প্র‍্যাকটিস বা অনুশীলন করে এবং কিছু মডেল টেস্ট দিয়ে নিজের অবস্থা যাচাই করতে হবে। দ্রুত ভুলগুলো সংশোধন করে নিতে হবে। এভাবে একটি ভালো প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে হবে। ‘শেষ ভালো যার, সব ভালো তার’—এ প্রবাদটি তোমাদের জানা থাকার কথা। এই জন্য শেষের প্রস্তুতিটা ভালো হওয়া জরুরি।

যারা এখন পর্যন্ত নিজেদের প্রস্তুতি কম মনে করছো তোমরাও সামনের দিনগুলো মনেপ্রাণে পড়াশুনায় লেগে থাকো। টেনশন করার কোনো প্রয়োজন নেই। পড়াশুনায় ঠিকভাবে সময় দিলে, মনোযোগ দিলে টেনশন করার সময় তোমরা একদমই পাবে না। সময়ের সাথে তোমারদেরও ভালো একটা প্রস্তুতি হয়ে যাবে।

আরেকটি বিষয়— প্রস্তুতির ক্ষেত্রে তোমাদেরকে অবশ্যই কৌশলী হতে হবে। এক্ষেত্রে সবার কৌশল একরকম নাও হতে পারে। সবাই নিজের জন্য প্রযোজ্য কৌশলগুলো প্রয়োগ করবে।

৩। স্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতন থাকা:

প্রবাদ আছে— ‘শরীর ভালো তো মন ভালো।’ মন ভালো থাকলেই ভালো প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হবে। তাই এ সময় শরীর ভালো রাখার বিষয়টিও গুরুত্বসহকারে দেখতে হবে। পরীক্ষার আগে এই সময়ে এবং পরীক্ষার সময়ে স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। সাধ্য অনুযায়ী পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ঘুমাতে হবে।

পড়াশুনা করতে করতে একঘেয়েমি বা ক্লান্তি তৈরি হলে পরিমিত পরিমাণে অল্প পরিশ্রমের খেলাধুলা করা যেতে পারে। এতে শরীর, মন ও মস্তিষ্ক ভালো থাকবে। তবে কোনোক্রমেই কঠোর পরিশ্রম হয় এমন খেলা বা ঝুঁকিপূর্ণ কোনো খেলায় অংশগ্রহণ করা এসময় উচিত হবে না। শারীরিক কোনো ক্ষতি হলে এতে অনেক বেশি ভুক্তভোগী হতে হবে। তাই এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। 

সবশেষে বলব— একজন পরীক্ষার্থী হিসেবে তুমি যেমন পড়াশুনা করবে এবং যেমন কষ্ট করবে তোমার ফলাফলেও এর প্রতিফলন ঘটবে। অতএব, নিয়মিত মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করতে থাকো। ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষার হলে যাবে। আশা করি, তোমার পরীক্ষা ভালো হবে। পরীক্ষার হলে নকল করা বা অসদুপায় অবলম্বন করার চিন্তা সম্পূর্ণ পরিহার করবে। সব ঠিক থাকলে এবং তাক্বদীর ভালো হলে অপ্রত্যাশিত সাফল্যও তোমার কাছে ধরা দিতে পারে।

লেখক: উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম।


সর্বশেষ সংবাদ