সাবেক প্রধান বিচারপতি যখন বিচারের কাঠগড়ায়

এস কে সিনহা
এস কে সিনহা  © ফাইল ফটো

এক সময় বিচার বিভাগের প্রধান কর্তাব্যক্তি ছিলেন। আর তিনিই এখন বিচারের কাঠড়ায়।সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে প্রায় চার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে রায় হতে যাচ্ছে আজ মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর)। এধরনের রায় দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করেন এসকে সিনহা। দুই বছর ৯ মাস ২৪ দিন দায়িত্ব পালনের পর ২০১৭ সালের ১১ নভেম্বর ছুটিতে বিদেশে থাকা অবস্থায় দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।

এরপর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ পাওয়ার কথা সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়। পরে বিদেশ থেকেই তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন।

পদত্যাগের এক বছর আট মাস পর ২০১৯ সালের ১০ জুলাই ক্ষমতার অপব্যবহার করে ফারমার্স ব্যাংক (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) থেকে ভুয়া ঋণের মাধ্যমে চার কোটি টাকা স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করার অভিযোগে দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন বাদী হয়ে মামলা করেন। পাঁচ মাসেরও কম সময়ের মধ্যে সেই মামলায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়।

২০২০ সালের ১৩ আগস্ট বিচার শুরু হয়। এক বছর এক মাসে বিচার প্রক্রিয়া শেষে রায়ের জন্য আজ দিন ধার্য করা হয়। একজন সাবেক প্রধান বিচারপতির বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোকে দুর্ভাগ্যজনক বললেও এতে আইনের শাসনের দৃষ্টান্ত দেখছেন দুদক কৌঁসুলি মীর আহমেদ আলী সালাম।

তিনি বলেন, একজন প্রধান বিচারপতির ফৌজদারি অপরাধে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি। এমনকি সুপ্রিম কোর্টের কোনো বিচারপতির এভাবে বিচার হওয়ার ঘটনাও আমার জানা নেই। তবে প্রধান বিচারপতি ছিলেন বলেই অপরাধ করে পার পেয়ে যাবেন, তা হয় না। অপরাধী যতো বড় প্রভাবশালীই হোক না কেন তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে, এই মামলায় তাই প্রমাণিত হলো।

এই মামলায় আইন অনুযায়ী সিনহাসহ আসামিদের সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তিই হবে বলে প্রত্যাশা দুদকের এই কৌঁসুলির।  

এই মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা শুরু থেকেই পলাতক থাকায় আদালতে তার পক্ষে আইনজীবী নিযুক্তির সুযোগ ছিল না। তবে দুই আসামি ফারমার্স ব্যাংকের অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক চিশতী (বাবুল চিশতী) ও ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হকের পক্ষে মামলায় আইনজীবী ছিলেন শাহিনুর ইসলাম। তিনি এসকে সিনহার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এসকে সিনহাসহ এ মামলায় মোট আসামি ১১ জন। এর মধ্যে ফারমার্স ব্যাংকের অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক চিশতী কারাগারে। একই ব্যাংকের সাবেক এমডি এ কে এম শামীম, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, সাবেক এসইভিপি গাজী সালাহউদ্দিন, টাঙ্গাইলের বাসিন্দা মো. শাহজাহান এবং একই এলাকার বাসিন্দা নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা জামিনে রয়েছেন।  

অপরদিকে, এসকে সিনহা, ফারমার্স ব্যাংকের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাফিউদ্দিন আসকারী, রণজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী সান্ত্রী রায় পলাতক।


সর্বশেষ সংবাদ