ওয়াসার এমডিকে ‘সুপেয় পানির শরবত’ খাওয়ানো কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা

  © সংগৃহীত

ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানকে ওয়াসার সুপেয় পানির তৈরি শরবত খাওয়াতে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা ওয়াসা ভবনে প্রবেশ করতে চাইলে এতে বাধা দেয় পুলিশ। ওয়াসা এমডির পদত্যাগ ও নোংরা খাবার পানি সরবরাহের প্রতিবাদে নারী ও শিশুসহ নাগরিক সমাজের ৫ প্রতিনিধি মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১১টার দিকে কারওয়ানবাজারে অবস্থিত ওয়াসা ভবনের কাছে অবস্থান নেয়।

এর আগে জুরাইন এলাকার মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে জুরাইন এলাকাবাসী ওয়াসা ভবনের কাছে অবস্থান নিলে উৎসুক জনতার জটলা তৈরি হয়। এমন সময়ে ব্যাগ থেকে জুরাইন এলাকার পানি বের করে জগে ঢালেন এবং বলেন, এ পানি দিয়ে শরবত বানিয়ে ওয়াসার এমডিকে খাওয়াতে চান মিজানুর রহমান।

গত ২০ এপ্রিল সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম খান মন্তব্য করেন, ঢাকা ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়। এরই প্রতিবাদ শুরু করেন পুরান ঢাকার জুরাইনবাসী। যার অংশ হিসেবে আজ মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে কারওয়ানবাজারে অবস্থিত ওয়াসা ভবনের সামনে জুরাইন এলাকাবাসী ওয়াসার পানি দিয়ে শরবত বানিয়ে এমডিকে খাওয়ানোর কর্মসূচি পালন করছেন।

মিজানুর রহমান নামের জুরাইন এলাকার ওই বাসিন্দা বলেন, আমাদের এলাকায় ওয়াসার পানি ড্রেনের পানির মতো অপরিষ্কার। এটা তো খাওয়া দূরের কথা গন্ধে হাতে নেওয়াই যায় না। এ অবস্থায় ওয়াসার এমডি কীভাবে বলেন ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়, বিশুদ্ধ! তাই আমরা এই পানি দিয়ে শরবত বানিয়ে খাওয়াতে এসেছি।

এদিকে জুরাইনবাসীর এমন কর্মসূচিতে ওয়াসার ভবনের গেটে অতিরিক্ত পুলিশ, আনসার সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন।

মিজানুর রহমান বলেন, পূর্ব জুরাইনের দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা এ উদ্যোগ নিয়েছেন। আমাদের এলাকার পানি খুবই খারাপ, দুর্গন্ধযুক্ত ও ড্রেনের পানির মতো।

২০১২ সালে আমরা জুরাইনের সাড়ে ৩ হাজার বাসিন্দা গণস্বাক্ষর নিয়ে ওয়াসার এমডি বরাবর একটি অভিযোগ করেছিলাম। সেই অভিযোগে কোনো কাজ হয়নি। এখনো প্রতিদিন ময়লা পানি আসে।

আমরা কয়েক বছর ধরে ওয়াসার পানি শুধুমাত্র গোসল, কাপড় ও বাসনকোসন ধোয়ার জন্য ব্যবহার করছি। খাওয়ার জন্য মসজিদের টিউবওয়েলের পানি কিনে খাচ্ছি। প্রতি ১০ লিটার পানির জন্য ২ টাকা দিতে হয়।

এ অবস্থায় ওয়াসার এমডি কী মনে করে পানিকে শতভাগ সুপেয় বললেন, তা আমাদের বোধগম্য হয়নি। আজ আমরা এসেছি এর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখানে অবস্থান করবো।

কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা যারা একসঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে পানি আনতে যাই, তাদের অনেকেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ কর্মসূচি দিয়েছি। প্রতিবাদের অংশ হিসেবে আমরা ওয়াসা ভবনে গিয়ে এমডির জন্য ওয়াসার বিভিন্ন কলের পানি নিয়ে এসেছি।

যদি তার ডায়াবেটিস থাকে তাহলে শুধু লেবু দিয়ে শরবত তৈরি করে খাওয়াব। তিনি খেয়ে বলবেন, পানি কতটুকু সুপেয়।

প্রসঙ্গগত, গত ১৭ এপ্রিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) পক্ষ থেকে ‘ঢাকা ওয়াসা : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে ওয়াসায় অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি উল্লেখ করে টিআইবি। এতে আরও বলা হয়, ঢাকা ওয়াসার পানির নিম্নমানের কারণে ৯৩ শতাংশ গ্রাহক বিভিন্ন পদ্ধতিতে পানি পানের উপযোগী করে। এর মধ্যে ৯১ শতাংশ গ্রাহকই পানি ফুটিয়ে বা সিদ্ধ করে পান করে।

গৃহস্থালি পর্যায়ে পানি ফুটিয়ে পানের উপযোগী করতে প্রতি বছর আনুমানিক ৩৩২ কোটি টাকার গ্যাসের অপচয় হয়। এ প্রতিবেদনের প্রতিবাদে শনিবার (২০ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলন করে ওয়াসার এমডি তাকসিম খান বলেন, ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়, বিশুদ্ধ। একে ফুটিয়ে খাওয়ার প্রয়োজন হয় না। এছাড়াও টিআইবির এই প্রতিবেদনকে তিনি নিম্নমানের বলে উল্লেখ করেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence