ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়ি ভাঙার উসকানি শেখ হাসিনা নিজেই দিয়েছেন: ফরহাদ মজহার

ফরহাদ মজহার
ফরহাদ মজহার  © ফাইল ফটো

ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার ভেঙে দেওয়া প্রসঙ্গে বুদ্ধিজীবী ও লেখক ফরহাদ মজহার বলেছেন, এই উসকানি ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা নিজেই দিয়েছেন। এই সময়ের তার ভাষণ দেওয়ার সিদ্ধান্তই ছিল উসকানিমূলক।

আজ বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে তিনি এ কথা বলেন। ফরহাদ মজহার এই বাড়ি ভাঙার ঘটনাকে আওয়ামী লীগের বৈশ্বিক পরিসরে প্রদর্শনের ওপর নজর রাখারও তাগিদ দিয়েছেন।

ফরহাদ মজহার বলেন, ৩২ নম্বর বাড়ি ভাঙার উস্কানি শেখ হাসিনা স্বয়ং দিয়েছেন, এই সময়ে তার ভাষণ দেওয়ার সিদ্ধান্তই ছিল উসকানিমূলক। হাসিনার মাথায় রয়েছে ফেব্রুয়ারিতে (যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট) ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে (ভারতের প্রধানমন্ত্রী) নরেন্দ্র মোদীর সাক্ষাৎকার এবং বাংলাদেশ নিয়ে ইন্দো-মার্কিন-ইসরায়েলি আঞ্চলিক পরিকল্পনা। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অলিগার্কি, অর্থাৎ অল্প কিছু বিলিয়নারদের আধিপত্যের প্রতিষ্ঠা। যেমন ইলন মাস্ক, জুকারবার্গ, বিল গেটস প্রমুখ। এর কুফলও বাংলাদেশসহ গরিব ও প্রান্তিক দেশগুলোতে পড়বে। হিন্দুত্ববাদের সঙ্গে মার্কিন বর্ণবাদী গোষ্ঠীর মৈত্রীও পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। ট্রাম্পের গাজানীতি ভয়াবহ। ইতোমধ্যে ট্রাম্প বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ঘোষণা দিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র গাজার ‘নিয়ন্ত্রণ নেবে’ এবং এর ওপর তার ‘মালিকানা’ প্রতিষ্ঠা করবে।

তিনি বলেন, এই নতুন ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাষণ বুঝতে হবে। নতুন ভূরাজনৈতিক সমীকরণের ওপর দাঁড়িয়ে তিনি রাজনীতির যে ছক কষছেন সেদিকে আমাদের পূর্ণ মনোযোগ নিবদ্ধ রাখতে হবে। ছাত্র-জনতার ন্যায়সঙ্গত ক্ষোভের পরিণতি হচ্ছে ৩২ নম্বর ধুলায় মিশিয়ে দেওয়া। এটা শুরু, শেষ নয়। আমরা দেখলাম একে রক্ষা করার কোনো পদক্ষেপ সরকার গ্রহণ করেনি। সেনাবাহিনী কিছুক্ষণের জন্য এলেও ফিরে গেছে। জনগণের বিপরীতে সেনাবাহিনীকে দাঁড় না করাবার নীতি সঠিক। 

‘‘কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে দিল্লি প্রমাণ করার চেষ্টা করবে যে জানমাল রক্ষা করতে উপদেষ্টা সরকার ব্যর্থ। আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাখ্যা করা হবে যে বাংলাদেশে কার্যত কোনো সরকার নেই। এটাই দিল্লি হাসিনার পক্ষে প্রতিষ্ঠা ও প্রচার করবে। দিল্লি দাবি করবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি। ফলে দিল্লি আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় বাংলাদেশে হস্তক্ষেপের পরিকল্পনা করতে পারে। এই বাস্তবতা এবং সম্ভাব্য ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি অবশ্যই আমাদের মনে রাখতে হবে। যদি আমরা সামনের দিনে আরও গভীর সংকটে পতিত হওয়া থেকে মুক্ত থাকতে চাই তাহলে অবিলম্বে শেখ হাসিনার সংবিধান বাতিল করে পূর্ণ ক্ষমতাসম্পন্ন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করুন, নতুনভাবে বাংলাদেশ গঠন করার প্রক্রিয়া শুরু করুন। এটা পরিষ্কার, ফ্যাসিস্ট সংবিধান বহাল রাখার শপথ করে আমরা আদতে ফ্যসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম রেখেছি। এটা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বাড়ি ভাঙলাম অথচ শেখ হাসিনার বানানো ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা পুরোপুরি কায়েম রাখলাম এটা কি হয়!’’

ফরহাদ মজহার বলেন, অতএব পরিবর্তিত ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় আমরা যেন কোনো গভীর সংকটে না পড়ি সেজন্য এখনই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। জনগণের ক্ষোভকে আমলে নিতে শিখুন। ছাই দিয়ে আগুন নেভানো যায় না।


সর্বশেষ সংবাদ