শেরপুরের ভয়াবহ বন্যায় পানিবন্দি লাখো মানুষ, ৫ জনের মৃত্যু
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:১৬ AM , আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৩১ AM
পাহাড়ি ঢল আর ব্যাপক বৃষ্টির কারণে শেরপুর জেলার শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। এরমধ্যে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে পড়েছে নালিতাবাড়ী উপজেলা। মূলত ভারতের মেঘালয় থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের পাশাপাশি বৃহস্পতিবারের ব্যাপক বৃষ্টির কারণেই নালিতাবাড়ী ও আশেপাশের এলাকায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। গত দু’দিনে বন্যার পানিতে ডুবে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
গত শুক্রবার থেকে শনিবার (৫ অক্টোবর) রাত পর্যন্ত বন্যার পানিতে ডুবে নারী, বৃদ্ধ ও কিশোরসহ মোট ৫ জনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে।
নিহতরা হলেন নালিতাবাড়ী উপজেলার অভয়পুর গ্রামের বাছির উদ্দিনের ছেলে হাতেম আলী (৩০) ও তার ভাই আলমগীর (১৬), উপজেলার বাঘবেড় বালুরচর গ্রামের মানিক মিয়ার স্ত্রী মিজা বেগম। একইদিন সন্ধ্যায় খলিসাকুড়া গ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে মারা যান বৃদ্ধ ইদ্রিস আলী। তবে মৃত আরেকজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে আকস্মিক বন্যায় নিম্নাঞ্চলে পানি বেড়েই চলেছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এতে বাড়ছে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা। ডুবে গেছে দুই শতাধিক গ্রাম। তলিয়ে আছে রাস্তাঘাট। ঘরবাড়িতে পানি ওঠায় আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে মানুষ। দেখা দিয়েছে খাবার সংকট। ঝিনাইগাতী এবং নালিতাবাড়ী উপজেলার সব সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। গত ৩৫ বছরের মধ্যে এমন ভয়াবহ বন্যা দেখেনি স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, জেলার শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার ৬০ ইউনিয়নের অবস্থা বেশি খারাপ। বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে শত শত পুকুরের মাছ, কাঁচা ঘরবাড়ি, গাছগাছালি, গবাদি পশু, বিধ্বস্ত হয়েছে কয়েকটি মহাসড়কসহ অসংখ্য গ্রামীণ কাঁচা-পাকা সড়ক। কার্যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অনেক এলাকা। সংকট তৈরি হয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির।
শুক্রবার দুপুরে উপজেলার অভয়পুর গ্রামের বাছির উদ্দিনের ছেলে হাতেম আলী ও সহোদর আলমগীর চেল্লাখালী নদীর ভেঙে যাওয়া পানির স্রোতে নিখোঁজ হন। পরে শনিবার (৫ অক্টোবর) পানি কিছুটা কমে আসায় বিকেল ৪টার দিকে কুতুবাকুড়া গ্রামের ধানখেত থেকে ওই ২ ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয়রা আরও জানান, শুক্রবার বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছেন উপজেলার বাঘবেড় বালুরচর গ্রামের মানিক মিয়ার স্ত্রী মিজা বেগম। একইদিন সন্ধ্যায় খলিসাকুড়া গ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে মারা যান বৃদ্ধ ইদ্রিস আলী। এছাড়া আরও একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও এখনও পর্যন্ত তার নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন একজন।
নালিতাবাড়ী থানার ওসি ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা চারজনের পরিচয় শনাক্ত করতে পেরেছি। বাকি একজনের পরিচয় জানা যায়নি।’
বন্যা পরিস্থিতির এক দিনের মধ্যে উন্নতি হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। কেন্দ্রের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সজল কুমার রায় বলেন, শেরপুরে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকলেও ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা পর পানি আরও কমে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। দুটি নদী ছাড়া দেশের সব নদনদীর পানি বর্তমানে বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।