গণপিটুনিতে নিহত ছাত্রলীগ নেতা চারদিন আগেই সন্তানের বাবা হন

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ  © সংগৃহীত

রাজশাহীর সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল মাসুদ গণপিটুনিতে প্রাণ হারিয়েছেন। নিহত আব্দুল আল মাসুদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিকেল সেন্টারে স্টোর অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন। গণপিটুনিতে নিহত ছাত্রলীগ নেতা চারদিন আগেই সন্তানের বাবা হয়েছেন।

শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে তিনি গণপিটুনির শিকার হন। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। হাসপাতালে নেয়া হলে রাত ১২টার দিকে তিনি মারা যান। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, রাজশাহী বোয়ালিয়া থানার ওসি মাসুদ পারভেজ।

পুলিশ জানায়, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে রাতে বিনোদপুর বাজারে মাসুদের ওপর হামলা হয়। পরে সেখানই গণপিটুনি দিয়ে প্রথমে মতিহার থানা পুলিশের কাছে দেয়। কিন্তু ওই থানায় ৫ আগস্টের সহিংসতার কোনো মামলা নেই। তাই তাকে বোয়ালিয়া থানায় আনা হয়, যাতে কোনো সহিংসতার মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। সেখান থেকে গুরুতর আহত হওয়ায় মাসুদকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

বোয়ালিয়া থানার ওসি এসএম মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘গণপিটুনিতে গুরুতর আহত হয়েছিলেন মাসুদ। শারীরিক অবস্থা দেখে সেনাবাহিনীর সহায়তায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। এখন পরিবার চাইলে এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এদিকে, গত ৩ সেপ্টেম্বর কন্যা সন্তানের বাবা হন মাসুদ। শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) নবজাতক শিশুর ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে মাসুদ লেখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ তাআলার। গত ৩-৯-২০২৪ তারিখে কন্যা সন্তানের পিতা হয়েছি। মহান আল্লাহর কাছে নেক হায়াত ও সুস্থতা কামনা করি। সকল আত্মীয়-স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষী ও বন্ধু-বান্ধবের কাছে আমার ও আমার মেয়ের জন্য দোয়া প্রার্থনা করছি।’

জানা যায়, আব্দুল্লাহ আল মাসুদ রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য। তিনি নগরের বুধপাড়ার বাসিন্দা ছিলেন। ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল সকালে ক্লাসে যাওয়ার পথে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া হলের সামনে এক হামলার শিকার হন মাসুদ। 

এতে তার ডান পায়ের নিচের অংশ গোড়ালি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়; বাম পায়েও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার হাতের রগও কেটে দেয়া হয়েছিল। প্রতিপক্ষ একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের সদস্যরা ওই হামলা চালায়। পা হারিয়ে মাসুদ পরে একটি প্লাস্টিকের পা লাগিয়ে চলাচল করতেন। শনিবার রাতে তার অন্য পা-ও ভেঙে দেয়া হয়।

জানা যায়, দীর্ঘদিন বেকার থাকার পর নিজের দুর্দশার কথা জানিয়ে একটি চাকরি চেয়ে ২০২২ সালের শেষের দিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি লেখেন মাসুদ। এরপর ওই বছরের ৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৭ মীর তাফেয়া সিদ্দিকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে পাঠানো চিঠিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার পদে আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে নিয়োগ দিতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে স্টোর অফিসার পদে নিয়োগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নিয়োগপত্র পেয়ে ২২ ডিসেম্বর চাকরিতে যোগদান করেন তিনি। সেই থেকে তিনি এ পদেই চাকরি করতেন। 


সর্বশেষ সংবাদ