ববি ও বিএম কলেজে সংঘর্ষের নেপথ্যে চাঁদাবাজি

ববি ও বিএম শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ
ববি ও বিএম শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ  © সংগৃহীত

বরিশাল নগরীর ব্যাপ্টিস্ট মিশন রোডে জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) ও সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন দুই প্রতিষ্ঠানের অর্ধশত শিক্ষার্থী। এ সময় উভয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তিনটি বাস ও বিএম কলেজ ক্যাম্পাসে ভাঙচুর করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাত সা‌ড়ে ১২টা থেকে উভয় গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, যা দফায় দফায় হামলা ও সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে ভোর ৫টা পর্যন্ত চলে। উভয় ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পরস্পরকে চাঁদাবাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন। উভয় পক্ষ নিজেদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী বলে দাবি করেছে।

জানা গেছে, বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে এক পক্ষের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে বিএম কলেজের এক দল ছাত্র গত সোমবার রাতে অন্য পক্ষকে শাসাতে যায়। যাকে শাসাতে যায়, তার মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। ওই ছাত্রী সহপাঠীদের খবর দিয়ে আনেন। তখন দুই পক্ষে শুরু হয় মারামারি হয়। এতে মঙ্গলবার সারা দিন দুই ক্যাম্পাসে উত্তেজনা দেখা দিলে রাতে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে।

দুই ক্যাম্পাসে গতকাল বুধবারও (৪ সেপ্টেম্বর) ছিল উত্তেজনা। এদিন বিএম কলেজ শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, ১২ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের বিচার না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস নগরীতে চলতে দেওয়া হবে না। শিক্ষার্থীদের নগরীতে থাকতে দেওয়া হবে না।

এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আজ বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

নগরের বাইরে কীর্তনখোলা নদীর দক্ষিণ প্রান্তে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কের পাশে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। বিএম কলেজ থেকে এ প্রতিষ্ঠানের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। মঙ্গলবার রাত ১১টায় নগরীর বটতলা এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে মারধর করা হচ্ছে, এ খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পাল্টা হামলা চালাতে তিনটি বাস নিয়ে নগরে ঢোকেন। প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে হামলা করেন বিএম কলেজ শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পাল্টা হামলা চালান। রাত ৩টা পর্যন্ত বিএম কলেজ এলাকায় চলে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া।

এ বিষয়ে সংঘর্ষে আহত হয়ে শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শামিম আহমেদ জানান, সমঝোতা করতে তারা মঙ্গলবার রাতে বিএম কলেজে গিয়েছিলেন। কলেজ শিক্ষার্থীরা আক্রমণের জন্য আগেই প্রস্তুত হয়ে ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অপর শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, তাদের ভাইদের জিম্মি করায় উদ্ধার করতে তারা বিএম কলেজে গিয়েছিলেন। কিন্তু কলেজের শিক্ষার্থীরা পরিকল্পিতভাবে হামলা করেন।

গতকাল বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করে সার্বিক বিষয় তুলে ধরেন। লিখিত বক্তব্যে অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র সাব্বির হোসেন সোহাগ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গরিব এক লোকের কাছে ৬০ হাজার টাকা দাবি করেন। তাদের বটতলায় আটক করা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা এসে আলেকান্দা পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা করেন। হামলা করা হয় বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রীনিবাসে। তারা ভাঙচুর করেন ৫টি বাস।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী মো. তমাল বলেন, ‘বাংলা বিভাগের এক শিক্ষার্থীর ভাই মলম পার্টির খপ্পরে পড়েন। এতে বাস কর্তৃপক্ষকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করে জুনিয়ররা। জরিমানার টাকা নিতে এলে ইমন ও রাফিন নামে দুজনকে মারধর করেন বিএম কলেজ শিক্ষার্থীরা।’

তিনি আরও বলেন, ‘যা হয়েছে তা সমানে সমান। চাঁদাবাজির অভিযোগে তাদের একজনকে মারধর এবং আমাদের দুজনকে মারধর করা হয়।’

বরিশালের শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুল বলেন, শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। এখন একশ্রেণির মানুষ নানা অভিযোগ দিয়ে ছাত্রদের ভুল পথে ধাবিত করছে। এ সুযোগে একটি শ্রেণি চাঁদাবাজিতে নেমেছে। তিনি মনে করেন, যারা সালিসের নামে চাঁদাবাজি করছে, তাদের মুখোশ উন্মোচন করবে প্রশাসন।

ছুটি ঘোষণা প্রসঙ্গে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম জানান, তাদের অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। এই শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে পরীক্ষা ও ক্লাস নেওয়া যায় না। এ কারণে একদিন ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ঘটনার কারণ উদ্ঘাটনে অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক আইন অনুষদের ডিন সুপ্রভাত হালদার।

বিএম কলেজের অধ্যক্ষ আমিনুল হক বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বুধবার বিকালে বিভাগীয় কমিশনারের সভাপতিত্বে সভা হয়। এতে ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার, সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি, ডিসি এবং দুই প্রতিষ্ঠানপ্রধান ছিলেন। সভায় একটি লিয়াজোঁ কমিটি করা হয়েছে।

যুগ্ম সচিব মর্যাদার এক কর্মকর্তা কমিটির আহ্বায়ক থাকবেন। আর যাতে উত্তপ্ত পরিস্থিতি না হয়, সে বিষয়ে ছাত্রদের দুই পক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। কলেজের পক্ষ থেকেও একটি কমিটি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বরিশাল সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান গতকাল জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। পুলিশ সতর্ক রয়েছে। কোনো পক্ষ থানায় অভিযোগ দেয়নি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence