ছাত্র-জনতার ‘গণহত্যার’ তদন্ত হবে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে: আসিফ নজরুল

  © সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তী সময়ে সরকার পতনের আন্দোলনে যে ‘গণহত্যা ও গুলিবর্ষণ’ হয়েছে, তার বিচারের জন্য তদন্ত জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।

আজ বুধবার (১৪ আগস্ট) সকালে সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান। 

আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় ইতিমধ্যে বেশি কিছু মামলা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা নিজেরা... রাজপথে থাকা বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, জনগণের বিভিন্ন গোষ্ঠী দাবি করেছেন— এটাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে বিচার করা যায় কিনা। আমরা সেটা খতিয়ে দেখেছি। আমরা জানাতে চাই, আমাদের ১৯৭৩ সালের যে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট আছে; যা পরে ২০০৯ এবং ২০১৩ সালে সংশোধনী হয়েছে। সেই আইনে জুলাই গণহত্যা; এই গণহত্যা বলতে ১ জুলাই থেকে আগস্ট মাসের প্রথম পাঁচ দিনের গণহত্যাকে বোঝাচ্ছি, এই গণহত্যার বিচার সম্ভব। এর জন্য দায়ী যে ব্যক্তিরা আছেন, তাদের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য আমরা ইতিমধ্যে ছোটখাটো একটা গবেষণা করেছি। তাতে দেখেছি, এই আইনের অধীনে জড়িতদের; অর্থাৎ যারা আদেশ দিয়েছেন, বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন, তাদের সকলকে বিচারের আনা সম্ভব।

তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, এই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একটি ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি আছে, প্রসিকিউশন টিম আছে। এগুলোকে আমরা রি-অর্গানাইজ করার চেষ্টা করছি।’

এই তদন্ত জাতিরসংঘের তত্ত্বাবধানে চেষ্টা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ থেকে আমাদের বারবার সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। আমরা বিচারে সত্যিকারের স্বচ্ছতা-নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের ইনভেস্টিগেশন টিম জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে কাজ করবে।’ তদন্ত জাতিসংঘের ‘সর্বাত্মক তত্ত্বাবধানে’ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে উল্লেখ করেন আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা তার কাছে সহযোগিতা চাইবো। এছাড়া জাতিসংঘের বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ে কনসার্ন, এজেন্সির সঙ্গেও যোগাযোগ করা হবে। আমরা আশা করছি, শিগগিরই এটা শুরু করতে পারবো।

এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, জুলাই হত্যাকাণ্ডের অভিযুক্তরা আন্তর্জাতিকভাবে যে কোনও দেশ থেকে আইনজীবী আনতে পারবেন। এক্ষেত্রে সরকার বাধা দেবে না।

বিগত সময়ে যারা বিদেশে অর্থপাচার করেছে, তাদের বিচার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যারা জনগণের টাকা যারা পাচার করেছে, দুর্নীতি করেছে তাদের বিচার করা হবে। 

বিদ্যুৎ খাতের ইনডেমনিটি আইন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটি আমার আওতাধীন নয়। তবুও আপনারা বলেছেন, আমি এ বিষয়ে শিগগিরই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করে বাতিল করার বিষয়ে উদ্যোগ নিবো।’ 

আইন উপদেষ্টা জানান, সাইবার সিকিউরিটি আইনসহ যেসব নিবর্তনমূলক আইন আছে, সেগুলোর তালিকা করা হচ্ছে। এসব আইন বাতিল অথবা সংশোধন করা হবে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে যেসব মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দায়ের হয়েছে, সবগুলোই প্রত্যাহার করা হবে বলে জানান আইন উপদেষ্টা। তিনি জানান, এরইমধ্যে পুলিশ কাজে যোগ দিয়েছে। এখন আশা করছি, আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্য ঢাকার সব মামলা ও ৩১ আগস্টের মধ্যে সারা দেশের মামলা প্রত্যাহার করা হবে। 

সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম ও রাজনীতিবিদ মাহমুদুর রহমানের মামলা আগামীকালের মধ্যে প্রত্যাহার করা হবে বলেও জানান আইন উপদেষ্টা।

বিচার বিভাগ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘বিচার বিভাগ সংস্কার করা হচ্ছে। প্রধান বিচারপতিসহ অন্যদের সিভি দেখে বোঝা যাবে, কত যোগ্যদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, আর অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে দলীয় ভিত্তিতে নিয়োগ হয়েছে কিনা। 

বিচার বিভাগীয় সব কর্মকর্তাকে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে সম্পদের হিসাব জমা দিতে হবে বলেও জানান আইন উপদেষ্টা। 

নির্বাচন কমিশনও সংস্কার করা হবে বলে জানান আইন উপদেষ্টা। তিনি জানান, নির্বাচন আইন সংশোধন করা হবে। ভোটাধিকার নিয়ে উপহাস করা হয়েছে। ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ