৪ লাখ টাকায় চুক্তি, শ্রমিক লীগ নেতার নির্দেশে বিআরটিসি বাসে আগুন
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৪, ০৪:৩২ PM , আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৪, ০৪:৫০ PM
চট্টগ্রামে শ্রমিক লীগ নেতা দিদারুল আলমের সঙ্গে চার লাখ টাকার চুক্তিতে বিআরটিসি বাস ডিপোতে থাকা চারটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেন লেগুনাচালক সোহেল রানা (৪০)। আগুন দেওয়ার ঠিক ১০ ঘণ্টা আগে ৫০০ টাকা অগ্রিম পরিশোধও করেন ওই শ্রমিক লীগ নেতা। কথা ছিল বাকি টাকা দেওয়া হবে কাজ শেষে।
মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) বিকেলে চট্টগ্রাম জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মুহাম্মদ জুনাইদের আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে এ কথা বলেন সোহেল রানা।
এর আগে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সোমবার (২২ জুলাই) সকালে নগরের বায়েজীদ বোস্তামী এলাকা থেকে পুলিশ লেগুনাচালক সোহেল রানাকে (৩২) গ্রেপ্তার করে। পরে তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওইদিন বিকাল ৫ টার দিকে নতুনপাড়ার বালুছড়া এলাকা থেকে দিদারুল আলমকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রাম জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। তারা দুইজনেই কারাগারে। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ নানা অপরাধে আরও চারটি মামলা রয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, পেশায় লেগুনা চালক সোহেলের গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাট জেলার বড়বাড়ি ইউনিয়নে। তবে দীর্ঘদিন ধরে তিনি চট্টগ্রামে বসবাস করেন। একসময় বিআরটিসি বাস ডিপোর কর্মচারী ছিলেন সোহেল। এ চাকরি চলে যাওয়ার পর তিনি অক্সিজেন-নাজিরহাট সড়কে লেগুনা চালাতেন। অন্যদিকে শ্রমিক লীগ নেতা দিদার বিআরটিসির ঠিকাদার ছিলেন। রুবেল নামে এক ঠিকাদারকে হত্যার অভিযোগে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ওইসময় তার ঠিকাদারি লাইসেন্স বাতিল হয়েছিল। পুনরায় লাইসেন্স পেতে চেষ্টা করছিলেন দিদার। এ কারণে বিআরটিসি ডিপো এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টায় ছিলেন তিনি।
ঘটনার বিষয়ে জানা যায়, পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে দিদারের কাছ থেকে মাঝেমধ্যে টাকা-পয়সা ধার নিতেন সোহেল। কয়েকদিন আগে থেকে কোটা আন্দোলন ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতা শুরু হয়। এর মধ্যে শনিবার সোহেলকে একটি লোভনীয় প্রস্তাব দেয় দিদার। বলা হয়, বিআরটিসি ডিপোতে থাকা পাঁচটি বাস পোড়াতে পারলে তাকে ৪ লাখ টাকা দেওয়া হবে। আগাম হিসেবে ৫০০ টাকাও দেওয়া হয়। কথামতো কাজ শুরু করে সোহেল। শনিবার (২০ জুলাই) রাতেই বাসে অগ্নিসংযোগ করেন।
এতে বিআরটিসি ডিপোতে থাকা চারটি বাস পুড়ে যায়। কিন্তু শর্তমতো পাঁচটি বাস পোড়াতে না পারায় সোহেলকে আর টাকা দেননি দিদার। এ কারণে রোববার রাতে পুনরায় বাসে আগুন দিতে যায় সোহেল। ওইসময় তিনি পুলিশের হাতে আটক হন। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল ঘটনা খুলে বলেন। এরপর ডিবির একটি টিম অভিযান চালিয়ে সোমবার শ্রমিক লীগ নেতা দিদারকে গ্রেপ্তার করে।
চট্টগ্রাম জেলা ডিবির পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম বলেন, বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নির্দেশদাতা হিসেবে দিদারকে গ্রেপ্তার করে হাটহাজারী থানায় সোপর্দ করা হয়।
হাটহাজারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নুরুল আলম বলেন, বিআরটিসি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় সোহেল ও দিদার নামে দুজনকে মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) আদালতে সোপর্দ করা হয়। এর মধ্যে সোহেল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসেন মোহাম্মদ জুনাইদের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।