মোরগের ডাকে বিরক্ত, প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে জিডির হুমকি সাবেক অতিরিক্ত সচিবের

মাহবুব কবির মিলন
মাহবুব কবির মিলন  © সংগৃহীত

মোরগের ডাকে বিরক্ত সাবেক এক আমলা। এ জন্য প্রতিবেশীর বাসায় লোক পাঠিয়ে মোরগ পালনে নিষেধ করেছেন, আর না মানলে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার হুমকিও দিয়েছেন তিনি। রাজধানী আদাবরের বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটিতে বসবাসকারী অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির মিলনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে।

তবে বিষয়টি স্বীকার করেছেন তিনি। অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির মিলন বলেছেন, মোরগের ডাকে সারা রাত ঘুমাতে পারি না। বিশেষ করে শেষ রাত থেকে দিনের মধ্যভাগ পর্যন্ত। তাই সব বাসায় লোক পাঠিয়ে অনুরোধ জানিয়েছিলাম মোরগ না পালার জন্য। এক বাসায় আপত্তি জানালে, বলেছি তাহলে থানায় জিডি করা ছাড়া আমার কোন উপায় থাকবে না।

অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির মিলনের এক প্রতিবেশী বলেন, গত ১৮ মার্চ এক ব্যক্তি আমার কাছে এসে বললেন, সচিব সাহেব (মাহবুব কবির মিলন) আপনার নম্বর চেয়েছেন। আমি নম্বর না দিয়ে তার কাছ থেকে সচিব সাহেবের নম্বর নিয়ে নিজেই ফোন দিই। তিনি ফোন রিসিভ করে বলেন, ছাদে কি মুরগির ফার্ম করেছেন? আমি বলি ফার্ম নয় ঠিক, পাখির খাঁচা বানিয়েছিলাম। সেখানে এখন পাখি নেই। বাচ্চারা গ্রামে গিয়েছিল সেখান থেকে পাঁচটা মুরগি এনেছে, তার মধ্যে একটা মোরগ। তিনি বললেন, মোরগ ডাকাডাকি করলে তো এলাকাটা গ্রাম আর খ্যাত হয়ে গেল!

ফেসবুক স্ট্যাটাস

আমি তাকে বলি, এই এলাকায় অনেকেই মোরগ-মুরগি পালে, আপনার বাসার সামনেও আছে। তিনি বলেন, আমি সবাইকে বলব এসব সরাতে হবে, না হলে পুলিশের আশ্রয় নেব।

পুলিশের হুমকির পর মাহবুব কবিরের প্রতিবেশী উপায়ান্তর না পেয়ে মোরগটি জবাই করে ফেলেন। কিন্তু মুরগিগুলো রাখেন। 

এর দু’দিন পর আবারও ওই বাসায় লোক পাঠান মাহবুব কবির মিলন। বলেন মুরগি পালন পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে!

একই ধরনের অভিযোগ করেন মাহবুব কবিরের আরেক প্রতিবেশীও। তিনি বলেন, সচিব সাহেব বাসায় সোসাইটির লোক পাঠান। তারা বলে গেছেন, ছাদে কোনো মোরগ-মুরগি পালা যাবে না। এগুলো সরাতে হবে।

প্রতিবেশীরা বলছেন, নিজের জায়গায় মুরগি পালতে সমস্যা কোথায়? কোথাও এরকম বিধিনিষেধ তো নেই। প্রধানমন্ত্রীও বাসাবাড়িতে ফাঁকা জায়গায় পশুপালন ও চাষাবাদে উৎসাহিত করেন। ঢাকা শহর বলে কি এর ব্যতিক্রম হবে?

এ বিষয়ে সাবেক সচিব মাহবুব কবির মিলন বলেন, শহরে বসবাস। বাড়ির উপর বাড়ি। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। আমার পাশের কয়েকটি বাসায় মোরগ এবং মুরগি পালে। মোরগের ডাকে সারা রাত ঘুমাতে পারি না। বিশেষ করে শেষ রাত থেকে দিনের মধ্যভাগ পর্যন্ত। এই শব্দ দূষণে ফরজ নামাজের পর আর ঘুমানো যায় না। 

“সাথের ৩/৪ টি বিল্ডিং এ নিশুতি রাতে একসাথে কয়েকটি মোরগ ডাকলে পরিবেশে শব্দ দূষণের কী ভয়াবহ রূপ হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।  তাই সব বাসায় লোক পাঠিয়ে অনুরোধ জানিয়েছিলাম মোরগ না পালার জন্য। মুরগি পালায় কোন সমস্যা নেই। যেহেতু মুরগী ডাকে না।”

তিনি আরও বলেন, এক বাসায় আপত্তি জানালে, বলেছি তাহলে থানায় জিডি করা ছাড়া আমার কোন উপায় থাকবে না। কারণ এটা তো শহর, গ্রাম নয়। ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকা। এরপর সব বাসায় মোরগ সরিয়ে ফেলেছে। এখন কোন সমস্যা নেই।

“শখ করে যারা অন্যের কষ্ট আর মানসিক যন্ত্রণা সৃষ্টি করে, এই সামান্য বোধটুকু যাদের নেই, তাদের বোধহয় হওয়ার জন্য দোয়া করছি। শব্দ দূষণ রোধে আমি সারাজীবন কঠোর ছিলাম। এভাবেই প্রতিবাদ করা উচিত সবার।”

মাহবুব কবির মিলন অবসরে যাওয়ার আগে সর্বশেষ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। রেলওয়ের অনিয়ম-দুর্নীতি ঠেকাতে নানা উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। ফেসবুকেও তিনি পরিচিত। নানা বিষয়ে লেখালেখি করে।


সর্বশেষ সংবাদ