স্কুলে ভর্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা মিলবে নগদে

  © সংগৃহীত

মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি নিশ্চিত করতে ৫৪ লাখ অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের সহায়তা দেবে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট। বিতরণ করা হবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নগদের মাধ্যমে। আগে থেকেই এর একটি বড় অংশ নগদের মাধ্যমেই এই সহায়তা পেয়ে আসছিল। তবে এবার বিভিন্ন জায়গায় না রেখে সব শিক্ষার্থীর আর্থিক সহায়তা এক জায়গায় করায় অসচ্ছল ও দরিদ্র শিক্ষার্থীরা দুশ্চিন্তা মুক্ত হয়েছেন।

শনিবার (১৬ মার্চ) এক বিজ্ঞপ্তিতে নগদ জানায়, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা এই প্রকল্পের আওতায় এককালীন ৫ হাজার টাকা করে সহায়তা পাবেন। এই টাকা পেতে অসচ্ছল শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যে অনলাইনে আবেদন করেছেন। খুব দ্রুতই এর বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এর আগে বেশ কয়েকটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এই ভাতা বিতরণ করা হলেও ভেতরে ভেতরে নানান বিশৃঙ্খলা থেকেই গিয়েছিল। সহায়তা বিতরণ প্রক্রিয়ায় শৃঙ্খলা আনতে এবার শুধু মাত্র নগদের মাধ্যমে এটি বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মান্ত্রনালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের এক পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ‘সহায়তার অর্থ সঠিকভাবে বিতরণ হচ্ছে কিনা সেটা পর্যবেক্ষন এবং যাচাই বাছাই করাই আমাদের জন্যে প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এই সমস্যা থেকে মুক্তির জন্যে আমরা একটি প্ল্যাটফর্মকে বেছে নিয়েছি। তাছাড়া গত কয়েক বছর ধরে প্রাথমিক পর্যায়ের দেড় কোটির মতো শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি যেহেতু সফলবাবে নগদের মাধ্যমে বিতরণ হয়েছে সে কারণে আমাদের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হয়েছে।’
 
একদিকে শিক্ষার্থীরাও নগদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহায়তা পাওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। গোপালগঞ্জের ওহাব আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী কামরান জানায়, এর আগে প্রাথমিক পর্যায়ে নগদের মাধ্যমে উপবৃত্তি পেয়েছে সে। ফেলে নগদের ওপরে তার এক রকম বাড়তি আস্থা তৈরি হয়েছে।
 
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, এর আগে তারা দেখেছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সফটওয়ার বিভিন্ন রকম হওয়ায় তারা তাদের মতো করে বিভিন্ন পন্থায় দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সহায়তার এই অর্থ বিতরণ করে থাকেন। আর একেক প্রতিষ্ঠান একেক পদ্ধতিতে কাজটি করায় তাদের জন্যে এ এক বড় সমস্যার হয়ে দাঁড়ায়। এই সমস্যা থেকে মুক্তির জন্যেই নগদের স্মরণাপন্ন হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ।
 
অন্যদিকে আবার গ্রাহক সংখ্যায় নগদ এখন দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে নয় কোটির ওপর নিবন্ধিত গ্রাহক আছে তাদের। সারা দেশে রয়েছে পৌনে তিন লাখ এজেন্ট পয়েন্ট। ফলে যে কোনো জায়গা থেকে যে কোনো সময় টাকা উত্তোলন করাও সম্ভব। এ কারণেই সরকার তাদেরকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা বিতরণে পছন্দ করে থাকতে পারে বলে জানান নগদের নগদের হেড অব মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন জাহিদুল ইসলাম সজল।
 
তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে সরকারের ভাতা ও সহায়তা বিতরণ প্রক্রিয়াকে আমরা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে তুলে এনেছি। আমাদের ধারে কাছেও এখন আর কেউ নেই। এ কারণেই হয়তো সরকারি সংস্থাগুলো নগদের সেবাই বারবার নিতে চাইছে। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের সহায়তা বিতরণ একটি স্পর্শকাতর প্রকল্প। সেটিও নগদকে বেছে নেয়ার কারণ হতে পারে। আর নগদের খরচ তো সব সময়ই অনেক কম। এসবই নগদকে সব সময় অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখে।
 
এর আগে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। যেখানে বলা হয়, ট্রাস্ট থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের অধীন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২০২৪ সালে মাধ্যমিক ও সমমান পর্যায়ে ভর্তিকৃত ও অধ্যয়নরত অসচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিশ্চিত করতে ভর্তি–সহায়তা দেয়া হবে। ভর্তি–সহায়তা পেতে তখন শিক্ষার্থীকে নির্ধারিত ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে অনলাইনে অবেদন করতে বলা হয়।

এই সহায়তা পাওয়ার জন্যে মা–বাবা বা অভিভাবকের বার্ষিক আয় দুই লাখ টাকার কম হতে হবে। তাছাড়া সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীর সন্তানেরাও আর্থিক অনুদান পাওয়ার জন্য বিবেচিত হবে। ভর্তি–সহায়তা পেতে শিক্ষার্থীদের ছবি, স্বাক্ষর, জন্মনিবন্ধন সনদ, অভিভাবকের জাতীয় পরিচয়পত্র, নির্ধারিত ফরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানের সুপারিশ থাকতে হবে।

এদিকে, ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের আওতায় এক হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করা হয়। সেখান থেকেই প্রতিবছর মাধ্যমিক, উচ্চা মাধ্যমিক এবং স্নাতক ও সমমান পর্যায়ের দরিদ্র এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদের এককালীন সহায়তা দেয়া হয়। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে মাধ্যমিক পর্যায়ে ৫ হাজার টাকা, উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ৬ হাজার টাকা এবং স্নাতক ও সমমান পর্যায়ে ১০ হাজার টাকা হারে ভর্তি–সহায়তা দেয়া হচ্ছে।


সর্বশেষ সংবাদ