বেইলি রোড আগুনের ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের আড়াল করছে কর্তৃপক্ষ: টিআইবি

  © সংগৃহীত

রাজধানীর বেইলি রোডে আগুনের ঘটনায় সরকারি সংস্থাগুলো বিভিন্ন রেস্তোরাঁ ও ভবনে অভিযান চালাচ্ছে। এসব ‘লোকদেখানো’ অভিযান চালিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিজেদের দায় এড়ানো ও প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের আড়াল করার চেষ্টা করছে বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানিয়েছে সংস্থাটি।

বিজ্ঞপ্তিতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের নিষ্ক্রিয়তা, সমন্বয়হীনতা, দুর্নীতি, জবাবদিহির অনুপস্থিতি ও বিচারহীনতা মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের পুনরাবৃত্তির কারণ হিসেবে উল্লেখ করে, দায়িত্বে অবহেলা ও অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে আদালত বেশ কিছু নির্দেশনা প্রদান করেছেন এবং নানা সময়ে গঠিত তদন্ত কমিটি ও টাস্কফোর্স বেশ কিছু সুপারিশও প্রস্তাব করেছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের নিষ্ক্রিয়তা, দায়িত্বহীনতা, সমন্বয়হীনতা, পরিকল্পনার অভাব, অনিয়ম-দুর্নীতি এবং কর্মকর্তাদের জবাবদিহির ঘাটতির কারণে এ সকল সুপারিশের বেশির ভাগ বাস্তবায়ন হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রাজউক, সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিসসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন সংস্থা দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর বরাবরের মতো সমস্যার মূল কারণকে গুরুত্ব না দিয়ে, লোক দেখানো “অভিযান” পরিচালনা ও এমন ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করছে। যাদের নির্ধারিত দায়িত্বের সঙ্গে দুর্ঘটনার মূল কারণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বললেই চলে। ফলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিজেদের দায় এড়ানো ও প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের আড়াল করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।’

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ‘ধারাবাহিক এই অগ্নিকাণ্ডের ও প্রাণহানির পেছনে মূল কারণ হিসেবে আমরা দেখতে পাই, ভবন নির্মাণে সংশ্লিষ্ট আইন অনুসরণ না করা এবং মালিক কর্তৃক ভবনে অনুমোদনবহির্ভূত কার্যক্রম পরিচালনা।’

ইতিপূর্বে পুরান ঢাকায় একাধিকবার সংঘটিত ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে টিআইবি ২০২০ সালে ‘নিমতলী, চুড়িহাট্টা এবং অতঃপর: পুরোনো ঢাকার অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিতে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণা পরিচালনা করেছিল। এই গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, বারবার মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পরেও রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি এবং ব্যবসায়ী, ভবন মালিক, জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ ও অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে আবাসিক এলাকায় অবৈধভাবে রাসায়নিক পদার্থের গুদাম ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়।

গবেষণাটির উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের কার্যকর প্রতিরোধের লক্ষ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিতের পাশাপাশি অবিলম্বে আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক ভবন এবং ঝুঁকিপূর্ণ বাণিজ্যিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। আমরা দেখছি, অগ্নিকাণ্ডের জন্য প্রকৃত দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারায় নির্মম প্রাণহানির ঘটনা স্বাভাবিকতায় রূপ নিয়েছে।’


সর্বশেষ সংবাদ