বেইলি রোডের আগুনে নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ৫ কোটি দিতে নোটিশ

নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ৫ কোটি দিতে নোটিশ
নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ৫ কোটি দিতে নোটিশ  © সংগৃহীত

রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। ঘটনা তদন্ত করতে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন এবং নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে পাঁচ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণের দাবিতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে রাজধানীর বেইলি রোডসহ সব আবাসিক স্থাপনায় রেস্টুরেন্ট বন্ধ চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে

রোববার (৩ মার্চ) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. সোলায়মান (তুষার) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, রাজউক’র চেয়ারম্যান ও ঢাকা জেলা প্রশাসককে ডাকযোগে এই লিগাল নোটিশ পাঠান।

নোটিশে বলা হয়, বেইলি রোড একটি ব্যস্ততম এলাকা। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের আনাগোনা। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, আইনজীবী, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এই রোডের আবাসিক এলাকায় বসবাস করেন। নোটিশে আরো বলা হয়, ওই ভবনে আগুনের ঘটনার খবর ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদপত্রে ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে। 

তাতে বলা হয়, যে ভবনটিতে আগুন লেগেছে সেখানে রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করার অনুমোদন ছিল না। ভবনটিতে কোনো অগ্নি নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল না। ঝুঁকিপূর্ণ জানিয়ে ভবন কর্তৃপক্ষকে তিনবার চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, ভবনটির অনুমোদন আটতলার। শুধু আটতলায় আবাসিক স্থাপনার অনুমোদন আছে। সেটিতে রেস্তোরাঁ করার অনুমোদন ছিল না। 

নোটিশে বলা হয়, ভবন কর্তৃপক্ষকে তিনবার সতর্কতা নোটিশ দেওয়া হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়নি। যার ফলে কর্তৃপক্ষের দায় ও ব্যর্থতা রয়েছে। কর্তৃপক্ষ কোনোমতেই তাদের দায় এড়াতে পারে না। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩২ অনুযায়ী প্রত্যেকের জীবনধারণের অধিকার রয়েছে ও ব্যক্তি স্বাধীনতা রয়েছে। অনুচ্ছেদ ৩৬ অনুযায়ী প্রতিটি নাগরিকের নিরবচ্ছিন্নভাবে চলাফেরার অধিকার রয়েছে। 

নোটিশে আরো বলা হয়, একটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা না করায় এবং যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার কারণেই এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে এবং ৪৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে এবং অনেকেই আহত হয়েছে। কর্তৃপক্ষ কোনোক্রমেই তাদের দায় এড়াতে পারে না। ঠিক কার ব্যর্থতার কারণে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে তা খুঁজতে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের দাবি করা হয়।

এছাড়া ওই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ও আহতদের চিহ্নিত করে প্রত্যেককে পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি জানানো হয়। নোটিশ গ্রহণের পাঁচ দিনের মধ্যে কী ধরনের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা লিখিতভাবে নোটিশ দাতাকে জানাতে বলা হয়। কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট দায়েরসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও নোটিশে বলা হয়। 

এবিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. সোলায়মান (তুষার) বলেন, নোটিশ গ্রহীতাদের ব্যর্থতার কারণেই বেইলি রোডের ওই ভবনটিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে নিরীহ ও নিরপরাধ ৪৬ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে এবং অনেকেই আহত হয়েছেন। যেহেতু কর্তৃপক্ষ ভবন মালিককে তিনবার সতর্কতা নোটিশ দিয়েছিল কিন্তু কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এবং ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়নি, সেহেতু  কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা রয়েছে। 

আরও পড়ুন: আবাসিক ভবনে রেস্টুরেন্ট বন্ধ চেয়ে রিট

ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার আরো বলেন, নোটিশ পাওয়ার পর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন ও ক্ষতিপূরণ দাবিতে জনস্বার্থে রিট দায়ের করা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ