ঢাবির বাংলা বিভাগের নোটিশ ধর্মীয় স্বাধীনতার চূড়ান্ত পরিপন্থী : হেফাজত

  © ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বাংলা বিভাগ সব পরীক্ষা, প্রেজেন্টেশন এবং ভাইভায় কানসহ মুখমণ্ডল খোলা রাখার নির্দেশনা দিয়ে একটি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিসটি ধর্মীয় স্বাধীনতার চূড়ান্ত পরিপন্থী হিসেবে আখ্যায়িত করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। এছাড়াও হিজাব-নিকাব পরা শিক্ষার্থীদের হেনস্তা করা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। সোমবার (২৮ আগস্ট) সংগঠনটির প্রচার সম্পাদক মুফতি কিফায়াতুল্লাহ আযহারী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতি এ তথ্য জানানো হয়।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান বিবৃতিতে বলেন, বাংলা বিভাগের নোটিসটি ছিল ধর্মীয় স্বাধীনতার চূড়ান্ত পরিপন্থী। নোটিসটির বিরুদ্ধে ঢাবির ধর্মপ্রাণ শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। চূড়ান্ত মীমাংসার জন্য তারা গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট উক্ত নোটিসটি ছয় মাসের জন্য স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন। চেম্বার জজ আদালতও এ স্থগিতাদেশ বহাল রাখেন। পরবর্তীতে আপিল বেঞ্চ সেই স্থগিতাদেশ বাতিল করে দুই মাসের মধ্যে রিটটি নিষ্পত্তি করার আদেশ দেন। বর্তমানে রিট নিষ্পত্তির শুনানি চলমান রয়েছে।

গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে হেফাজত নেতারা বলেন, দুঃখজনক ব্যাপার হলো এই স্থগিতাদেশ বাতিল করাকে পুঁজি করে ঢাবির সর্বশেষ পরীক্ষাগুলোতে বিভিন্ন বিভাগে হিজাব পরিহিত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জঘন্য আচরণ করা হয়েছে। বাংলা বিভাগের মেয়েদের ওই নোটিস মানতে বাধ্য করা হয়েছে। শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) চূড়ান্ত পরীক্ষার ভাইভায় অনেককে পুরো সময় মুখ খোলা রাখতে বাধ্য করা হয়েছে। কয়েকজন মুখ খুলতে রাজি না হওয়ায় হেনস্তার শিকার হয়েছেন, কারও কারও ভাইভা নেওয়া হয়নি। অন্যান্য বিভাগের ব্যাপারেও অনুরূপ অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা আশা করছি, হিজাব-নিকাবের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশে পবিত্র কুরআন, হাদীস এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ অক্ষুণ্ন রেখেই আদালত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদান করবেন। এর ব্যত্যয় ঘটলে শিক্ষাঙ্গন থেকে মুসলিম নারীরা ঝরে পড়ার সর্বোচ্চ আশংকা রয়েছে। এতে করে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিও সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে পড়বে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।

হেফাজত আমির ও মহাসচিব দাবি করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পরিচয় শনাক্তকরণে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে। অন্যথায় নারী কর্মচারী কিংবা নারী শিক্ষিকার মাধ্যমে আলাদা কক্ষে পরিচয় শনাক্ত করার ব্যবস্থা চালু করতে হবে। দ্রুততম সময়ে সব অনুষদের সব বিভাগে হিজাব-নিকাব পরিধানকারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তা করা বন্ধে নোটিস প্রদান করতে হবে। বিভিন্ন সময়ে ক্লাসরুমে, ভাইভা বোর্ডে অথবা পরীক্ষার হলে নিকাব খুলতে বাধ্য করার মতো ঘটনাগুলো তদন্তপূর্বক বিচারের আওতায় আনতে হবে। হিজাব বা নিকাব পরিধান সংক্রান্ত ঘটনায় ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের পুনরায় ফিরিয়ে এনে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশে ধর্মীয় মূল্যবোধ বিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত জনতা মেনে নেবে না।

প্রসঙ্গত, গত ২০২২ সালের ১১ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এক নোটিশে বিভাগের সব প্রেজেন্টেশন, টিউটোরিয়াল, মিডটার্ম পরীক্ষা, চূড়ান্ত পরীক্ষা এবং ভাইভাতে কানসহ মুখমণ্ডল দৃশ্যমান রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়। না হলে তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়। এদিকে সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) ছাত্রীদের নমৌখিক পরীক্ষায় নিকাব ও হিজাব পরিধান করায় একজনকে জোরপূর্বক নিকাব খুলে ভাইভা নেওয়া হয় এবং অন্য একজন শিক্ষার্থীকে ভাইভা দিতে দেওয়া হয়নি। আরও কিছু শিক্ষার্থীকে জোরপূর্বক হিজাব খুলে মুখ ও কান দেখে ভাইভা নেয়া হয়। তাছাড়া ওই ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন সময়ে হিজাব-নিকাব পড়ায় শ্রেণিকক্ষে কয়েকজন শিক্ষক কর্তৃক নানাভাবে হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।


সর্বশেষ সংবাদ