বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

ঈদের আগে সব পুড়ে ছাই, আগুন লাগার যে কারণগুলো খুঁজছেন ব্যবসায়ীরা

কান্নায় ভেঙে পড়ছেন অনেক ব্যবসায়ী
কান্নায় ভেঙে পড়ছেন অনেক ব্যবসায়ী  © সংগৃহীত

আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে মজুত করা নতুন কাপড়ে স্বপ্ন বুনেছিলেন রাজধানীর বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ঈদের আগেই নিঃস্ব হয়ে গেলেন অনেকে। আজ মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) সকাল ৬টা ১০ মিনিটের দিকে বঙ্গবাজারে আগুন লাগে। দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এখন আর আগুন ছড়াবে না। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিট কাজ করেছে। তবে পুরোপুরি নির্বাপণ করতে আরও কিছু সময় লাগবে।

এই আগুনের সূত্রপাত আদর্শ মার্কেটের একটি দোকান থেকে হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীরা। আদর্শ মার্কেট বঙ্গবাজারের আওতাধীন ৪টি মার্কেটের মধ্যে একটি। আগুনের সূত্রপাত ওই মার্কেট থেকে। পরে দ্রুতগতিতে পাশের মার্কেটগুলোর চারদিকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

ঈদের আগে যখন বেচাকেনা জমতে শুরু করছে ঠিক সেই সময় এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো। অনেকেই ঈদকে কেন্দ্র করে দোকান ও গোড়াউনে মালামাল মজুদ রেখেছেন। সেসব জিনিসপত্র পুড়ে যাওয়ায় তাদের মাথায় হাত পড়েছে। কেউ কেউ ঝুঁকি নিয়ে দোকান থেকে কিছু মালামাল উদ্ধারের চেষ্টাও করেছেন। আগুনে মালামাল পুড়ে যাওয়ায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।

এ দুর্ঘটনায় বঙ্গবাজারসহ আশপাশের ৬টি মার্কেটের ৫ হাজার ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। বিকেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

এই অগ্নিকাণ্ডে চোখে মুখে হতাশার ছাপ দেখা গেছে সেখানকার ব্যবসায়ীদের। কান্নায় ভেঙে পড়ছেন অনেকে। নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে ছাই হতে দেখে কষ্ট সহ্য করতে না পেরে অনেক ব্যবসায়ী ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করছেন আগুনে দিকে।

কান্না জড়িত কণ্ঠে শাড়ি ব্যবসায়ী মতিন মিঞা বলেন, আমার দোকানে দেড় কোটি টাকার মাল ছিল। কিছুই বের করতে পারি নাই। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

এ দিকে ঘটনার আগুন লাগার কারণগুলো খুঁজছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। আগুন লাগার পেছনে একেকজনে একেক ধরনের কারণ থাকতে পারে বলে জানান তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেখানকার এক ব্যবসায়ী এই প্রতিবেদককে জানান, এটা সিটি কর্পোরেশনের মার্কেট। সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের সময় থেকে এখানে সিটি কর্পোরেশন বহুতল ভবন করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু ব্যবসায়ীদের শর্ত হচ্ছে, ভবন নির্মাণকালীন সময়ে তাদেরকে অন্য কোথাও ব্যবসা করার সুযোগ করে দিলে তারা এই জায়গা ছাড়বে, তার আগে না। পরবর্তীতে সিটি করপোরেশন থেকে এটা মেনে নেয়া হচ্ছিল না। তাই ঈদের আগের তাদের উচ্ছেদের জন্য সিটি করপোরেশন পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগিয়েছে।

আরেক ব্যবসায়ী জানান, বঙ্গবাজার ও নিউমার্কেট ব্যবসায়ীদের মধ্যকার দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব চলে। আর তাই নিউমার্কেট অংশের কেউ এই আগুন লাগিয়েছে। যেন এবার ঈদে কেবল নিউমার্কেটেই বেঁচাকেনা হয়। আরেকজন জানান, ব্যবসায়ীরা নিজেদের দ্বন্দ্ব থেকে তাদের মধ্য থেকে কেউ শত্রুতার বসে এই আগুন লাগিয়েছে।

ব্যবসায়ীরা আগুন লাগার এমন কারণ খুঁজলেও কেউ মনে করেন না, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট বা দুর্ঘটনাক্রমে এই আগুন লেগেছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সরকারি-বেসরকারিভাবে সহয়তা চেয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।


সর্বশেষ সংবাদ