গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল
'ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মত প্রকাশের জন্য হুমকি'
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২৩, ০৩:৪৩ PM , আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২৩, ১১:৫০ PM
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ও গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ছায়েদুল হক নিশান। তিনি বলেন, এই আইন মানুষের মত প্রকাশের জন্য বড় হুমকি।
বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) সকাল ১২টায় গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতৃত্বে আয়োজিত এক সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, গ্রেফতারকৃত সাংবাদিক শামসুজ্জামানের নিঃশর্ত মুক্তি ও RAB- এর হেফাজতে নিহত সুলতানা জেসমিন হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
এর আগে জোটের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিলটি মধুর ক্যান্টিন থেকে শুরু হয়ে এফবিএস অনুষদ, অপরাজেয় বাংলা দিয়ে সেন্ট্রাল মসজিদ ঘুরে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়।
আরো পড়ুন: সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ
তিনি বলেন, রাষ্ট্র যখন ফ্যাসিবাদী হয় তখন কোন গণতান্ত্রিক প্রতিবাদই সহ্য করতে পারেনা। র্যাব কর্তৃক জেসমিন সুলতানা হত্যাকাণ্ডের বিচারবিভাগীয় তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তার সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে নিঃশর্তে মুক্তি দিতে হবে। মানুষের মত প্রকাশের জন্য হুমকি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সকল কালাকানুন বাতিল করতে হবে। একই সাথে জনগনকে জিম্মি করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে আনার দাবি জানান।
ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক দিলীপ রায় বলেন, বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে আপনারা বাজার থেকে ফাঁকা ব্যাগ নিয়ে ফিরলেও শেখ হাসিনার অনুগতরা ঠিকই ব্যাগ ভরেই বাসায় ফেরেন। স্বাধীনতার এই ৫২ বছরে পরাধীনতা ছাড়া সাধারণ মানুষ কিছুই পায়নি যা পেয়েছে এই শেখ হাসিনার অনুগতরা। জেলে তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থা থাকলেও এই বৃহৎ জেলখানায় তিনবেলা খাবার নেই। এই তিনবেলা খাবারের সন্ধান করতে মানুষকে অমানুষিক পরিশ্রম করতে হয়।
আরো পড়ুন: আদালতে নেওয়া হয়েছে প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে
তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী বড়ই স্পর্শকাতর। তিনি বললেন স্পর্শকাতর নিউজ বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যারই ফলশ্রুতিতে মাছ মাংস ও চালের স্বাধীনতা চাই' বলে নিউজ করা প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে ভোরে ঘুম থেকে ডেকে তুলে নেওয়া হলো। তাকে সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে। তার স্পর্শকাতরা কতটা গনবিরোধী যে তিনি মানুষের চাল, ডাল, মাছ, মাংসের স্বাধীনতার কথা সহ্য করতে পারেন না। কিন্তু এতকিছুর পরেও হাজারো সাধারণ মানুষ ও সাংবাদিকরা তার পা-চাটা বন্ধ করে না। তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনা যদি পায়ে দুফোঁটা বিষ মাখিয়ে রাখেন হাজারো মানুষ ও সাংবাদিক মারা যাবে তবুও কেউ তার বিরুদ্ধে লিখতে সাহস করবে না।
তিনি ছাত্র, শ্রমিক, রিক্সাচালক সহ সকল শ্রমজীবী পেশার মানুষকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। আমাদের হাত আর আপনাদের হাত একত্রিত হয়ে আমাদের পেটে জ্বলা আগুন ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার গদিতে লাগিয়ে দেওয়া ছাড়া সারাজীবন সভা সমাবেশে কোনো কাজে আসবে না। এই যে র্যাবের হাতে জেসমিন মারা গেলো, লেখক মোশতাক জেলে মারা গেলো, আমরা যদি এই জালিমের গদি না চূর্ণ করি আমরা না খেতে পেয়েই মারা যাবো। এজন্য এই ফ্যাসিবাদী সরকারকে ও তার অনুসারীদের জেলে ভরতে হবে, তাদেরকে সামাজিকভাবে, রাষ্ট্রীয়ভাবে বয়কট করতে হবে বলেও তিনি আহবান ব্যক্ত করেন।
আরো পড়ুন: শামসুজ্জামানের মুক্তির দাবিতে রাবিতে মানববন্ধন
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকার বলেন, সাদা পোশাকে কাউকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গ্রেফতার করা যাবে, গ্রেফতারের পূর্বেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা, উচ্চ রক্তচাপে মানুষকে হত্যা করা বা বিরোধী সকল মতকে দমন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লেলিয়ে দেয়া বাংলাদেশের সংবিধানের কোন আইনে বলা না থাকলেও এটাই ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকারের চরিত্র। আজকে সাধারণ মানুষ জানে চাল ডাল মাছ মাংসের দাম কত। সেজন্য প্রথম আলোর সাংবাদিকের ভিডিওর বক্তব্য শুধু সেই শিশুটির বক্তব্য না, এটা সারা দেশের আপামর জনসাধারণের কথা। বর্তমানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে মানুষের স্বাধীনতা রোধ করা হচ্ছে, মানুষের কণ্ঠ বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে, মানুষকে রাতের আঁধারে গুম করে ফেলা হচ্ছে। সেজন্য এই সাংবাদিকের গ্রেফতারের বিরুদ্ধে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের ন্যায় সবাইকে রুখে দাঁড়ানোর আহবান ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সংগঠক তামজিদ হায়দার চঞ্চলের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট(বাসদ-মার্কসবাদী) সাধারন সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ, বৃহত্তর পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারন সম্পাদক অমল ত্রিপুরা।