আন্তর্জাতিক নারী দিবস

তোমরা পর্দ্দার এদিকে আসিও না, আমি সিন্দুক খুলিয়া বাহির করিয়া দিতেছি

আজ ৮ই মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারী দিবসের কথা আসলেই আমাদের মনে যে নামটি চলে আসে তিনি বাঙালি মুসলিম নারী জাগরণের অগ্রদূত এবং প্রথম বাঙালি নারীবাদী বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন।

রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সে সময় মুসলিম সমাজে মেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর কোনো প্রচলন ছিল না। তাই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও পরিবারের সবার অগোচরে বড় ভাইয়ের কাছে উর্দু, বাংলা, আরবি ও ফারসি পড়া ও লেখা শেখেন।

আরও পড়ুন: নারীর সম-অধিকার ছুঁতে পারে না শারমীনদের জীবন

তৎকালীন বাঙালি মুসলিম সমাজে নারীদের নিয়ে বেশ কিছু কুসংস্কার প্রচলিত ছিল। কঠোর পর্দা প্রথার বেড়াজালে নারীদের জরুরী প্রয়োজনে বাইরে বের হওয়াও ছিল নিষিদ্ধ। বেগম রোকেয়া একে ডাকতেন 'অবরোধ' হিসেবে। তৎকালীন সময়ে এসকল ঘটনা গুলো নিয়ে তিনি লিখেছিলেন তার বিখ্যাত গ্রন্থ অবরোধবাসিনী। এই বইতে মজার কিছু ঘটনা তুলে এনেছেন তিনি। এমনই একটি ঘটনা হলো ঘরে চোর প্রবেশ করলে, পর্দা লঙ্ঘন হওয়ার ভয়ে গৃহকর্ত্রী স্বেচ্ছায় তার সকল গয়না চোরদের কাছে হস্তান্তর করেন। চোর চলে যাওয়ার পরও তিনি কোনও শব্দ করেননি, অন্য পুরুষ ঘরে প্রবেশ করবে বলে। 

বেগম রোকেয়া তার বইতে লিখেছেন,

এক মৌলভী সাহেবের মৃত্যু হইল। তাঁহার একমাত্র পুত্র এবং বিধবা অবশিষ্ট ছিলেন। মৌলবী সাহেব কিছু রাখিয়া যান নাই, সুতরাং অতি কষ্টে তাঁহার বিধবা সংসার চালাইতেন। পুত্রের বিবাহের জন্য তিনি বহু কষ্টে কতকগুলি অলঙ্কার গড়াইলেন। অলঙ্কারগুলি বেশ ভারী দামের হইল। বিবাহের দুই তিন দিন পূর্ব্বে সিঁধ কাটিয়া চোর গৃহে প্রবেশ করিল। সে ঘরে তিনি একমাত্র দাসীসহ শুইয়াছিলেন। চোরের সাড়া পাইয়া তিনি উঠিয়া বসিলেন এবং চুপি চুপি বাঁদীকে জাগাইলেন। চোর ভাবিল, সর্ব্বনাশ-দেই দৌড়!

কিন্তু চোরের সঙ্গীরা বলিল, আচ্ছা একটু ফিরিয়া দাঁড়াইয়া দেখি না, কি হয়। হইল বেশ মজা-

বিবি সাহেবার সঙ্কেত মত দাসী একখানা কাপড় দিয়া তাঁহার খাটের সম্মুখে পর্দা টাঙ্গাইয়া দিল। পরে চাবির গোছা দেখাইয়া চোরদিগকে বলিল, “বাপু সকল! তোমরা পর্দ্দার এদিকে আসিও না, তোমরা যাহা চাও, আমি সিন্দুক খুলিয়া বাহির করিয়া দিতেছি।” পরে সমস্ত দামী কাপড় ও অলঙ্কার বাহির করিয়া চোরের হাতে দিল। তাহারা গহনা নাড়িয়া চাড়িয়া দেখিয়া বলিল, -“নথ কই?-সেটা সিন্দুকে আছে বুঝি?” কর্ত্রীর সঙ্কেত অনুসারে দাসী বলিল, “দোহাই! তোমরা এদিকে আসিও না-আম্মা সা’ব কেবল নথটা রাখিয়াছেন যে পরশু দিন বিয়া একেবারে কোন গয়না রহিল না-নথটাও না থাকিলে বিয়া হয় কি করিয়া? তা যদি তোমরা চাও, তবে নেও-নথ লও পর্দ্দার এদিকে আসিও না।”

চোরেরা ভারী খুশি হইয়া পরস্পরে গল্প করিতে করিতে চলিয়া গেল। তখন রাত্রি তিনটা কি চারিটা। এত সহজে সিদ্ধিলাভ করায়। আনন্দের আতিশয্যে তাহারা একটু জোর গলায় কথা কহিয়াছিল। পথে চৌকিদার তাহা শুনিতে পাইয়া তাহাদিগকে ধরিবার জন্য তাড়া করে। সকলে পলাইল। একটা চোর হোঁচট খাইয়া পড়িয়া যাওয়ায় চৌকীদার তাহাকে ধরিয়া ফেলিল। অগত্যা সে চৌকীদারের সঙ্গে চূরি-করা বাড়ী দেখাইয়া দিতে গেল। ততক্ষণে ভোর হইয়াছে।

চৌকীদার গিয়া দেখে, বিবি সাহেবা তখনও পর্দার অন্তরাল হইতে বাহির হন নাই-“যদি ব্যাটারা আবার আসে”- তবে তাঁহাকে দেখিতে পাইবে যে! দাসীকেও চেঁচামেচি করিতে দেন নাই যে শোরগোল শুনিয়া যদি কোন পুরুষমানুষ তাঁহার ঘরে প্রবেশ করে। চোরের হাতে সৰ্ব্বস্ব সমর্পণ করিয়া তিনি অবরোধ প্রথার সম্মান রক্ষা করিলেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence