এসএসসিতে অনুপস্থিত বেশিরভাগ ছাত্রী বাল্যবিয়ের শিকার

বাল্যবিবাহ রোধ
বাল্যবিবাহ রোধ  © প্রতীকী ছবি

দেশে বাল্য বিবাহের হার বেড়েছে ১০ শতাংশ। বাল্য বিবাহ নিয়ে করা এক জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায় জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ)। এ বছরের এসএসসি পরীক্ষায়ও দেখা গিয়েছে বাল্য বিবাহের প্রভাব। ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়েকে বাল্য বিবাহ বিবেচনা করা হয়।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কোভিড মহামারীর ২ বছরে ১৫-১৯ বছর বয়সী ২৭ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়েছে। যাদের অধিকাংশের বয়স গত ২ বছরে ১৮ এর নিচে ছিল। ২০ টি জেলার মোট ২ হাজার ৮২০ জন মেয়ের উপর এ জরিপ করা হয়েছিলো। 

বড় উদাহরণ হিসেবে দেখা যায় ফেনী জেলায় অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা। জেলার সোনাগাজী উপজেলায় এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের বড় অংশকেই বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন তাদের অভিভাবকরা। কর্তৃপক্ষের চোখ এড়িয়েই অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন তারা।

চলমান এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করার পরও শেষ পর্যন্ত ৮১ জন তাতে অংশ নিচ্ছে না, যার মধ্যে ৬৩ জনই ছাত্রী। বেশ কয়েকটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস বলছে যেসব ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেনা তাদের মধ্যে অন্তত ৫৫ জনের বিয়ে হয়ে গেছে। যাদের কারো বয়সই ১৮ হয়নি। 

আরও পড়ুনঃ প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট অ্যাওয়ার্ড জিতলেন বুয়েটের জারিন

বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বয়স বিয়ের উপযোগী নয়। আর সে কারণেই এসব বিয়ের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের চোখ এড়াতে নানা কৌশলের আশ্রয় নেয়া হয়েছিলো বলে বলছেন উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও স্থানীয় শিক্ষকরা। 

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মনজুরুল হক বলেছেন, 'এরা সবাই বিয়ের কারণে অনুপস্থিত কি-না কিংবা অনুপস্থিতদের মধ্যে ছাত্রী কতজন - এগুলো আমরা বিস্তারিত এখনো জানি না। তবে বাল্য বিয়ের খবর পেলেই আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। এটি অবশ্য সত্য যে অনেক ক্ষেত্রে অভিনব কৌশলে কেউ কেউ বাল্য বিয়ে দিচ্ছেন।' 

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ নূরুল আমিনের কাছ থেকে জানা যায়, যেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না তাদের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছে তারা এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, 'প্রতিষ্ঠান প্রধানরা যেটি বলছেন,অনেক শিক্ষার্থীই পারিবারিক কারণে পরীক্ষা দিতে পারছে না। এর মধ্যে বিয়েও একটি কারণ বলে তারা জানিয়েছেন।' 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক জানিয়েছেন, 'অনেকের বিয়ের খবর পাওয়া গেছে অনেক পরে। আবার অনেক ক্ষেত্রে অভিভাবকরা অনুরোধ করেছেন যেন এ নিয়ে উচ্চবাচ্য না করা হয়। ফলে শিক্ষকরা স্থানীয় হওয়ার কারণে এগুলো নিয়ে খুব একটা কিছু করতে পারেন নি।' 

উপজেলার একজন অভিভাবকের বক্তব্য থেকে জানা যায়, যেসব মেয়েদের বিয়ে হয়েছে তাদের কয়েকজনের পরিবার তার পরিচিত এবং মূলত দারিদ্রের কারণেই তারা মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। দরিদ্র মেয়েদের নিরাপত্তা কোথায়? পরিবারগুলোর অর্থ সংকটের কারণে মেয়েরাও স্কুল বা মাদ্রাসায় যেতে চাইতো না। সে কারণে যারা সুযোগ পেয়েছে বিয়ে দিয়েছে।

আরও পড়ুনঃ পরীক্ষা কেন্দ্রে অসুস্থ ছাত্রী, রাতে পাওয়া গেল ঝুলন্ত মরদেহ 

বাংলাদেশের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছিলো, ২০২১ সালে মাধ্যমিক স্তরের বার্ষিক পরীক্ষায় পৌনে পাঁচ লাখের বেশি শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। এদের মধ্যে ৪৭ হাজার ছাত্রী পরীক্ষা দিতে পারেনি বাল্য বিবাহের কারণে।

এবছরও দেখা যাচ্ছে বাল্য বিবাহের কবলে হারিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমশ বর্ধমান। এমন পরিস্থিতি নিরসনে কঠোর নিয়ম জারি করা জরুরি বলে মনে করছেন অনেকেই। এ প্রেক্ষিতে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফরিদা পারভীন জানিয়েছেন, ২০৪১ সালের মধ্যে দেশ থেকে বাল্য বিবাহ নির্মূলের লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে।