হালাল রিলেশনশিপ, হারাম রিলেশনশিপ

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি  © টিডিসি ফটো

রিলেশন মানেই আমরা বুঝি মন্দ কিছু। প্রেম ভালোবাসা জাতীয় কিছু একটা। এ ধরনের রিলেশনকে অনেকে অবৈধ-গর্হিত কাজ বলেই জ্ঞান করি। বিবাহ পূর্ববর্তী ছেলে মেয়েদের অভিসার, চুপিসারে মিট করা ইসলাম সমর্থন করে না। এটি হারাম রিলেশন হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।

অপরদিকে বিবাহের মাধ্যমে ছেলে মেয়েদের রিলেশন হালাল রিলেশন হিসেবে স্বীকৃত। বিবাহ বহির্ভূত সব রিলেশন হারাম এবং তা যিনার শামিল। বিবাহ সমন্ধ তৈরির পরের রিলেশন পবিত্র ও ছাওয়াব অর্জন হয়।

যিনা বা ব্যভিচার বলতে বুঝায় ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক বিবাহ ছাড়া অবৈধ পন্থায় যৌন তৃপ্তি লাভ করাকে। ইসলামী শরীয়াতে অবৈধ পন্থায় যৌন সম্ভোগ সম্পূর্ণ হারাম এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

৬টি জিনিস যিনার উৎপত্তি ঘটায়:

১. মন যেখানে ব্যভিচারের উৎপত্তি।
২. চোখের ব্যভিচার সবচেয়ে বড় ব্যভিচার।
৩. জিহ্বা দ্বারা ব্যভিচার হয় যখন একজন নর-নারী আরেকজন নর-নারীর সাথে কথা বলে রক্ত ও স্ত্রীর সম্পর্ক ছাড়া।
৪. কান এটা দিয়ে ব্যভিচার হয় যখন নর-নারীর কথা শুনা হয়। রক্তের সম্পর্ক থাকলে সমাস্যা নেই। ৫. হাত এটা দিয়ে ব্যভিচার হয় যখন কোন বিবাহিত-অবিবাহিত নর-নারীর শরীরের যেকোন অংশ স্পর্শ বা ধরা হয়।
৬. পা এটা দিয়ে ব্যভিচার হয় যখন পায়ে হেঁটে কাঙ্ক্ষিত কোন নর বা নারীর কাছে যাওয়া হয়।

রাসূল (সা) বলেছেন, ‘মানুষ তার সমগ্র ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে জিনা করে। দেখা হচ্ছে চোখের জিনা, ফুঁসলানো কণ্ঠের জিনা, তৃপ্তির সাথে কথা শোনা কানের জিনা, হাত দিয়ে স্পর্শ করা হাতের জিনা, কোনো অবৈধ উদ্দেশ্যে পথ চলা পায়ের জিনা, এভাবে ব্যভিচারের যাবতীয় ভূমিকা যখন পুরোপুরি পালিত হয়, তখন লজ্জাস্থান তার পূর্ণতা দান করে অথবা পূর্ণতা দান থেকে বিরত থাকে’। (বুখারি, মুসলিম ও আবু দাউদ)

রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেন, “আল্লাহর দৃষ্টিতে শিরকের পর সবচাইতে বড় গুনাহ হচ্ছে এমন কোন জরায়ুতে এক ফোটা বীর্য ফেলা, যা আল্লাহ তার জন্য হালাল করেননি।” (সহীহ বুখারী)
যিনা হারাম ও অত্যন্ত মন্দ কাজ আল্লাহ তাআ’লা যিনাকে হারাম ঘোষণা করে বলেছেন, “তোমরা যিনার কাছেও যাবে না। কেননা তা অত্যন্ত নির্লজ্জ এবং খারাপ কাজ”। (সুরা বনী-ইসরাঈল -৩২)

বর্তমানে, একশ্রেনীর বিপথগামী তরুণ-তরুণী লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে পরকীয়া প্রেমে অাসক্ত হয়ে যিনা করছে। যৌনাচারের মতো বিষাক্ত ভাইরাস চারিদিকে ছড়িয়ে দিচ্ছে।

হারাম রিলেশনে প্রতিটি ধাপেই রয়েছে পাপ ও ভয়ানক শাস্তি। আপনি যখন কোন হারাম রিলেশনে থাকেন, তখন আপনার গালফ্রেন্ড বা বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে তৃতীয় একজন উপস্থিত থাকে সে হলো শয়তান। ডেটিংয়ে পরস্পরের সঙ্গে উচ্চারণ করা কথাগুলো হয় মুখের যিনা। তার দিকে তাকানোটা হয় চোখের যিনা। তাকে টাচ করাটা হয় হাতের যিনা। তাকে সাথে নিয়ে হাঁটতে বের হলে হয় পায়ের যিনা। যা উপরে সবিস্তারে আলোচনা করা হয়েছে। তাহলে এধরনের রিলেশনে জড়ানো পাপ ও হারাম রিলেশন বলে বিবেচিত।

অপরদিকে বিয়ের পর একজন নর-নারীর যা কিছু হবে সবই সিদ্ধ তথা হালাল। এটাই হালাল রিলেশন। আগের সমন্ধের সম্পূর্ণ বিপরীত। এখানে টাচ করা, হাত ধরা, ও শারীরিক সম্পর্ক সবই হালাল। কতো সুন্দর এবং মধুর এই সম্পর্ক! রাসুলুল্লাহ (সা.) পুরুষদের নির্দেশ দিয়েছেন, ‘তুমি যখন খাবে, তাকেও খাওয়াবে এবং তুমি যখন পরিধান করবে, তাকেও পরিধান করাবে। তার চেহারায় কখনো প্রহার করবে না। তার সঙ্গে অসদাচরণ করবে না।’ (আবু দাউদ)

আপনি যখন আপনার স্ত্রীর দিকে ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকান, তখন আপনার জন্য ফেরেশতারা সওয়াব লিখে। আজকাল প্রেমিক প্রেমিকা রিলেশনে একে অপরকে জান, জানু, ময়না, টিয়া পাখি, বেবি কত নামেই ডেকে থাকে। কিন্তু স্বামী স্ত্রীর মধ্যে এসব ডাকে ছোয়াব হয়।

আয়েশা (রা.) কে নবী (সা.) আদর করে ডাকতেন হুমায়রা বলে। হুমায়রা অর্থ ‘লাল বর্ণের রমনী’। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর আদর মাখা ডাক শুনে আয়েশা (রা.) কাছে আসতেন তাকে জড়িয়ে ধরতেন, এরপর কবিতা পাঠ করে আল্লাহর রাসূলকে (সা.) শোনাতেন।

আপনি যখন আপনার স্ত্রীর মুখে ভালোবেসে খাবার তুলে দেন, ফেরেশতারা আপনার জন্য সাদাকার সওয়াব লিখে ফেলে।” তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যে লোকমা তুলে দিবে, সেটার বিনিময়েও আল্লাহ তোমাকে সওয়াব দান করবেন”। (বুখারী)

আপনি যখন স্ত্রীর জন্য উপহার নিয়ে আসেন, তাকে নিয়ে ঘুরতে যান, তার পাশে বসে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তার গল্প শুনেন- এ সবকিছুর জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া'তায়ালা আপনার জন্য সওয়াব বরাদ্দ রেখেছেন।

ভালোবাসা লুকিয়ে রাখার বস্তু নয়। যদি সেটা হালাল হয়।স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা হয়। নিজের স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসাও অন্যদের কাছে প্রকাশ করা যায়। খোদ নবীজি বলেছেন, আমাকে খাদিজার ভালোবাসা দান করা হয়েছে। (তার প্রতি আমার ভালোবাসাটা আল্লাহর হাদিয়া)। (মুসলিম )

আল্লাহর রাসূল (সা.) প্রায় সময় উম্মুল মু’মিনীন খাদিজা (রা.) এর কোলে মাথা রাখতেন, এবং তাঁর মৃত্যুর পর আয়েশা (রা.) এর উরুর উপর মাথা রেখে শুতেন। যখন আয়েশা (রা.) ঋতুবর্তী (মাসিক) অবস্থায় উপনীত হতেন, তখন তিনি (সা.) তাঁর উরুর উপর শুয়ে কুর’আন তিলাওয়াত করতেন।

স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কতটা গভীর হতে পারে তার প্রমাণ কুরআনে কারিমে আল্লাহ তাআলা তা ঘোষণা করেন- “তারা তোমাদের পোশাকস্বরূপ এবং তোমরাও তাদের পোশাকস্বরূপ।” (সুরা বাকারা -১৮৭)

স্বামী-স্ত্রীর রিলেশন হোক মধুর ও ভালোবাসার। দূরীভূত হোক ভালোবাসার নামে যুবক যুবতীর অবৈধ প্রণয়লীলা, ফোনালাপ ও পরকীয়া। ফেসবুকে সুন্দর নাম দিয়ে নয়। তাকওয়া ভান ধরে নয়, সত্যিকারে চরিত্রবান হবার চেষ্টা করি। বেগানা নারী পুরুষের অশুভ দৃষ্টি থেকে নিজেদের হেফাজত রাখি।

লেখক: শিক্ষক ও গবেষক


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence