রমজানে অমুসলিম শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা: সহমর্মিতা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়

  © টিডিসি সম্পাদিত

পবিত্র মাহে রমজান মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে সিয়াম সাধনা ও আত্মশুদ্ধির মাস। পাশাপাশি এই মাসে অমুসলিম শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রাও নানা বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতায় ভরপুর হয়ে ওঠে। বিশেষত মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোতে রমজানের বিশেষ আবহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র ও সামাজিক পরিবেশকে প্রভাবিত করে। তাই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অমুসলিম শিক্ষার্থীরা কীভাবে এই মাসটি কাটিয়েছেন, কী চ্যালেঞ্জ বা অসুবিধার মুখোমুখি হয়েছিলেন তারা।

ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী পঙ্কজ রায় বলেন, এবার রমজান মাস একেবারে ভিন্ন নিয়মে চালিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। রমজান মাসে বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা ও ক্লাস থাকায় অমুসলিম শিক্ষার্থীদের একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়েছিল দুপুরের খাওয়ার ব্যবস্থা। মুসলিম শিক্ষার্থীরা সবাই রোজা থাকার কারণে দিনের বেলা হলের ডাইনিং, ক্যান্টিন ও খাবারের বেশিরভাগ দোকানগুলো বন্ধ ছিল। তবে সেশনজট থেকে রক্ষা পেতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের এমন সুন্দর উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদের স্বস্তির অনেকটা কারণ হয়েছিল। বর্তমান প্রশাসনের কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি কারণ তারা অমুসলিম শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে অনেক সচেতন।

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সৌরভ দত্ত বলেন, রমজানে খারাপ কাটিয়েছি এটা বলা ঠিক হবে না। তবে খাওয়ার সমস্যা হয়েছে, এটা অন্য সময়েও হয় এখন একটু বেশি হয়েছে। রমজানে কিছুটা খাওয়ার সমস্যা হলেও পরীক্ষা নিচ্ছে বিভাগ এটা আমাদের জন্য ভালো, বাংলাদেশে কোন বিশ্ববিদ্যালয় এত দ্রুত বন্ধ হয় না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি অন্তত পনেরো রোজা পর্যন্ত ক্লাস নেয় এতে বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাবে। যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব খোলা থাকতো তবে এত সমস্যা হতো না, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে দাবি থাকবে সামনের বছর থেকে যেন সব বিভাগ অন্তত ১৫ রোজা পর্যন্ত খোলা থাকে এবং একসাথে বন্ধ হয়ে যায়।

হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী তুষার মালাকার বলেন, রমজানে ক্যাম্পাস শান্ত ও পড়াশোনার অনুকূল থাকলেও অমুসলিমদের জন্য খাবার সমস্যা বাড়ে। খাবার পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। হল ক্যান্টিন ও ক্যাম্পাসের দোকানগুলো বন্ধ থাকায় কখনো বাসি খাবার খেতে হয়, কখনো বেশি খরচ করে বাইরে থেকে আনতে হয়। রান্না করাও সময়সাপেক্ষ, এতে পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়া কঠিন হয়ে যায়। 

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মহিতোষ দাস বলেন, রমজান মাসে আমরা অমুসলিম শিক্ষার্থীরা অনেক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়ে থাকি। এসময় ক্লাস ও পরীক্ষার সময়সূচি শিথিল হওয়ায় এবং শান্ত পরিবেশ পড়াশোনায় সহায়ক। ডিপার্টমেন্ট ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ইফতার আয়োজন করেন পারস্পরিক সম্প্রীতির বন্ধন আরো দৃঢ় করে। তবে রমজান মাসে দিনের বেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হল ডাইনিং ও ক্যান্টিন বন্ধ থাকায় খাবারের ব্যবস্থা করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। অনেক সময় দুপুরবেলা খাবারের ব্যবস্থা না থাকায় না খেয়ে দিন পার করতে হয়। তাছাড়াও কর্মঘণ্টা হ্রাস পাওয়ায় প্রশাসনিক কাজে বিলম্ব হয়ে থাকে।

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী প্রবাসী চাকমা বলেন, রমজান ইসলামিক ক্যালেন্ডারের নবম মাস, যা মুসলমানদের জন্য একটি পবিত্র মাস। এটি সাওম পালন করার মাস, যেখানে ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাবার পানীয় এবং অন্য কিছু থেকে বিরত থাকা হয়। রমজান মাসে অমুসলিম শিক্ষার্থীদের কিছু সুবিধা ও অসুবিধা দেখা যেতে পারে। দিনের বেলায় অনেক রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকে। ফলে খাবারের ব্যবস্থা করা কঠিন হতে পারে। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী মুসলিম হওয়ায় প্রকাশ্যে খাওয়া-দাওয়া ভালোভাবে গ্রহণ করা হয় না, যা কিছু অমুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য অসুবিধাজনক।

তিনি আরো বলেন, তারপরেও রমজান মাসে অনেক জায়গায় বেশি সংযম ও শৃঙ্খলার পরিবেশ থাকে, যা সবাই উপভোগ করতে পারে। এছাড়াও রমজান মাসের দীর্ঘদিনের ছুটিতে সবাই বাড়ি যেতে পারে। ইফতার ও সেহরির আয়োজন ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং সামজিক সংযোজনের সুযোগ থাকে। পরিস্থিতি সামলানোর জন্য আগেভাগে খাবারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। মুসলিম শিক্ষার্থীদের প্রতি অমুসলিম শিক্ষার্থীদের সংবেদনশীল ও ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। ইফতার ও সেহরির আমন্ত্রণ গ্রহণ করে অমুসলিম শিক্ষার্থীদের নতুন সংস্কৃতি বোঝার সুযোগ গ্রহণ করা উচিত। এতে সব ধর্মীয় জাতি গোষ্ঠীর মধ্যে সম্প্রীতি গড়ে উঠবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence