জনবলের অভাবে চালু হয়নি ধানসিঁড়ি তীরের ‘জীবনানন্দ দাশ সংগ্রহশালা’

কবি জীবনানন্দ দাশ সংগ্রহশালা ও পাঠাগার
কবি জীবনানন্দ দাশ সংগ্রহশালা ও পাঠাগার  © টিডিসি ফটো

ঝালকাঠির ধানসিঁড়ি নদীর তীরে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে নির্মিত হয়েছে কবি জীবনানন্দ দাশ স্মৃতিবিজড়িত একটি মনোরম পর্যটন কেন্দ্র— ‘কবি জীবনানন্দ দাশ সংগ্রহশালা ও পাঠাগার’। তবে দীর্ঘদিন পার হলেও জনবল সংকটের কারণে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। ফলে দর্শনার্থীরা তালাবদ্ধ ভবন দেখে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

ঝালকাঠি-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে, ধানসিঁড়ি নদীর তীরে গড়ে ওঠা এই স্থাপনাটি ইতোমধ্যে পর্যটকদের নজর কেড়েছে। প্রতিদিন অনেকেই এখানে ঘুরতে আসেন, প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করেন, কিন্তু সংগ্রহশালায় প্রবেশের সুযোগ না থাকায় হতাশ হন। কারণ, জনবল সংকটের কারণে এটি এখনো চালু হয়নি। 

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিন কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ০.৪৫ একর জমিতে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। কাজ শেষ করে গত বছরের জুন মাসে এটি হস্তান্তর করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও জনবল সংকটের কারণে কবি জীবনানন্দ দাশ সংগ্রহশালা ও পাঠাগারটি এখনও তালাবদ্ধ। অথচ এটি চালু হলে সাহিত্যপ্রেমী ও পর্যটকদের জন্য একটি বিশেষ আকর্ষণের স্থান হয়ে উঠতে পারে। দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হলে ধানসিঁড়ি নদীর তীরে গড়ে ওঠা এই নয়নাভিরাম পর্যটনকেন্দ্র সত্যিকারের প্রাণ ফিরে পাবে।

সংগ্রহশালা ও পাঠাগার চালুর পাশাপাশি স্থানীয়রা ধানসিঁড়ি নদীর পুনঃখনন ও সংরক্ষণের দাবিও জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, কিছুদিন আগেই নদী খনন করা হলেও কিছু কিছু জায়গায় এটি আবার সরু হয়ে গেছে। এছাড়া সংগ্রহশালায় যাওয়ার সড়কের বেহাল দশাও পর্যটকদের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্থানীয় প্রতীক নাট্যগোষ্ঠীর নাট্যশিল্পী শফিউল ইসলাম সৈকত বলেন, ‘স্থাপনাটি কবির স্মৃতিরক্ষায় এটি খুব ভালো একটি উদ্যোগ। তবে দুঃখজনকভাবে এখনো এটি চালু করা সম্ভব হয়নি। দ্রুত যদি এটি খোলা না হয়, তাহলে এটির গুরুত্ব অনেকটাই কমে যাবে।’

জীবনানন্দ দাশ গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম বলেন, ‘নদী বারবার খনন করা হয়, আবার এটি ভরাট হয়ে সরু খালে পরিণত হয়। এটি পুনঃখনন করে সংগ্রহশালাটি অবিলম্বে চালু করতে হবে।’

এ বিষয়ে ঝালকাঠি কবিতা চক্রের ড. কামরুন্নেছা আজাদ বলেন, ‘জীবনানন্দ দাশ শুধু ঝালকাঠির নয়, সমগ্র বাংলার সাহিত্য ভুবনের এক অবিস্মরণীয় নাম। তার স্মৃতিবিজড়িত এই সংগ্রহশালাটি যথাযথভাবে পরিচালিত হলে এটি সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠবে। তাই প্রশাসনের উচিত দ্রুত এটির কার্যক্রম চালু করা।’ 

ঝালকাঠির স্থানীয় সংগঠনগুলোর দাবি, এই সংগ্রহশালার কার্যক্রম দ্রুত শুরু করা হোক। এটি চালু হলে শুধু স্থানীয় পর্যটকরাই নয়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেও সাহিত্যপ্রেমীদের এখানে আগমন ঘটবে।

ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম নিলয় পাশ জানান, ‘আমাদের প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় প্রকল্পটি জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তরের প্রস্তাব দিয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেলেই এটি জেলা প্রশাসনের হাতে হস্তান্তর করা হবে।’

এদিকে রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাহুল চন্দ বলেন, ‘সংগ্রহশালাটি শুধু একটি ভবন নয়, এটি কবি জীবনানন্দ দাশের স্মৃতিবিজড়িত গুরুত্বপূর্ণ স্থান। আমরা এটিকে আরও আকর্ষণীয় করতে চাই। পূবালী ব্যাংকের অর্থায়নে ধানসিঁড়ি নদীর দুই পাশে গাছ লাগানো হয়েছে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ডাস্টবিন বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই মহাসড়ক থেকে পাঠাগারে যাওয়ার রাস্তার সংস্কারকাজ শুরু হবে।’

তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, অযত্ন-অবহেলার কারণে সংগ্রহশালা চত্বর গভীর রাতে মাদকাসক্তদের আড্ডাস্থলে পরিণত হয়েছে। এছাড়া এখানে কিছু অনৈতিক কাজেরও অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রশাসন এসব সমস্যা সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে।

স্থানীয়দের মতে, কবি জীবনানন্দ দাশের স্মৃতিবিজড়িত এই সংগ্রহশালা শুধু একটি পর্যটন কেন্দ্র নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতি ও সাহিত্যচর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হতে পারে। তাই দ্রুত জনবল নিয়োগ ও আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে এটি চালু করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence