অনিশ্চিত ভবিষ্যত কেয়ার মেডিকেলের ১৪২ শিক্ষার্থীর

মাইগ্রেশন সুযোগের দাবিতে কেয়ার মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের অবস্থান
মাইগ্রেশন সুযোগের দাবিতে কেয়ার মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের অবস্থান  © টিডিসি ফটো

বিভিন্ন অনিয়মের কারণে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে কেয়ার মেডিকেলে ১৪২ শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন। মাইগ্রেশন সুযোগের দাবিতে অনুমোদন বাতিল হওয়া মেডিকেলটির এসব শিক্ষার্থীরা গত ৬ অগাস্ট থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে অনুমোদন বাতিল হলেও একাডেমিক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, ২০১৩ সালে কেয়ার মেডিকেল কলেজ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে চুড়ান্তভাবে অনুমোদন পায়। ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নবায়ন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও অনুমোদন দেয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করায় বেসরকারি মেডিকেল কলেজটি।

তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা-২০১১ এর বাস্তবায়নের শর্ত পূরণ না হওয়ায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কেয়ার মেডিকেল কলেজে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে কলেজ কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। এতে সাময়িক বন্ধের উপর স্থগিতাদেশ দেয়।

আরও পড়ুন: ৬ বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তিতে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মানা

এর ভিত্তিতে ২০১৭-১৮ থেকে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এইসব শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রেজিস্ট্রেশন পেয়ে এমবিবিএস কোর্সে পড়াশুনা করছেন। কিন্তু বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) কর্তৃক রেজিস্ট্রেশন না পাওয়া ও তালিকাভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ইন্টার্নশিপ করতে পারছেন না।

এ জটিলতার কারণেই মাইগ্রেশন বা অন্য মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর চেয়ে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, কেয়ার মেডিকেলে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) কোনো অনুমোদন নেই। নীতিমালা অনুসারে পর্যাপ্ত ফ্লোরপ্লেস ও অবকাঠামো না থাকার পরও এই মেডিকেলে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানো হয়েছে।

কেয়ার মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, বর্তমানে কলেজটিতে অধ্যয়নরত ব্যাচ মোট ৪টি। এই ব্যাচগুলোতে মোট ১৪২ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। এরমধ্যে ২০১৭-১৮ সেশন ৫০ জন, ২০১৮-১৯ সেশন ০৫ জন, ২০১৯-২০ সেশন ৪৯ জন, ২০২০-২১ সেশন ৩৮ জন শিক্ষার্থী। আমরা সবাই মাইগ্রেশনের দাবিতে আন্দোলন করছি।

কলেজটির তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অহিয়া ফারজিন বলেন, আমাদের মেডিকেলে পড়াশোনা করার কোনো পরিবেশ নাই। তাদের বিএসডিসির অনুমোদন নেই। ক্লাস নেওয়ার মতো কোনো শিক্ষক নাই। আমরা ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এখানে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু এখন পড়াশোনাই হচ্ছে না। আমরা চাই, দ্রুত আমাদের অন্য কলেজে মাইগ্রেশন করে দেওয়া হোক। সেই দাবিতেই আমরা এখানে এসেছি।

গত ৬ অগাস্ট থেকে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় মাইগ্রেশনের দাবিতে আজ রবিবারও (২১ আগস্ট) সকাল থেকে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন কেয়ার মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা। অবস্থান কর্মসূচি শেষে এদিন দুপুরে অধিদপ্তরে স্মারকলিপি দেন তারা।

চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আসিফ আনোয়ার বলেন, আমরা স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি। কেয়ার মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের প্রতারণার শিকার। আমাদের মিথ্যা কাগজপত্র দেখিয়ে ভর্তি করানো হয়। আমরা কর্তৃপক্ষের এই মিথ্যাচারের শাস্তি চাই। আমাদের ভবিষ্যৎকে বাঁচাতে আমাদের মাইগ্রেশনের জন্য আমরা এখানে এসেছি।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. এ কে এম আমিরুল মোরশেদ বলেন, কেয়ার মেডিকেল থেকে যদি কর্তৃপক্ষ আমাদের জানায় যে, তারা আর মেডিকেল চালাতে পারছে না, তারা মাইগ্রেশন করে দিতে চায় তাহলেই আমরা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারি। কেননা আমরা তো তাদের অনুমোদন বাতিল করে দিয়েছিলাম।

আরও পড়ুন: নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শিক্ষার্থী ভর্তি নিচ্ছে ২ মেডিকেল কলেজ

তিনি বলেন, কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। এতে হাইকোর্ট ভর্তি বন্ধের উপর স্থগিতাদেশ দেয়। এর মাধ্যমেই তারা ভর্তি করিয়েছে শিক্ষার্থীদের। এখন শিক্ষার্থীরা আমাদের কাছে দাবির কথা জানিয়েছে। তারা স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু সেখানে কর্তৃপক্ষ যে মেডিকেল কলেজটি চালাতে ব্যর্থ হয়েছে, সেই বিষয়টি থাকতে হবে।

কেয়ার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক গোলাম মুর্শেদ সুমন বলেন, শিক্ষার্থীরা ‘চাপ দিয়ে’ মাইগ্রেশনের আবেদনে কলেজ চেয়ারম্যান ও অধ্যক্ষের স্বাক্ষর নিয়েছে। বিএমডিসি থেকে ইন্টার্ন ব্যাচের অনুমোদন ‘খুব শিগগিরই’ কেয়ার মেডিকেল কলেজ পাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ