মাদ্রাসায় রবীন্দ্রনাথের লেখা জাতীয় সংগীত বন্ধের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২৪, ০৮:৫১ PM , আপডেট: ২৯ আগস্ট ২০২৪, ০৮:৫১ PM
আলিয়া মাদ্রাসাগুলোতে জাতীয় সংগীত গাওয়া বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। সংগীতটিতে শিরক হয় এমন শব্দ রয়েছে বলে জানায় শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) রাজধানীর বকশীবাজারে অবস্থিত ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে “আলিয়া মাদ্রাসা ছাত্র ঐক্য পরিষদ” নামে আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন এ মানববন্ধন করেন।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা জানায়, আলিয়া মাদ্রাসা একটি দ্বীনি প্রতিষ্ঠান। এখানে কুরআন-হাদীস পাঠ হয়। পবিত্র কুরআন হাদীস অনুসারে শিরক একটি অমার্জনীয় গুনাহ। অথচ অনেক আলিয়া মাদ্রাসা শুরু হয় এই শিরকী বাক্য সমৃদ্ধ জাতীয় সংগীত দিয়ে। তাই এ গান কিছু কিছুতেই মাদ্রাসায় পাঠ করা যেতে পারে না। অবিলম্বে সমস্ত মাদ্রাসায় এই শিরকযুক্ত গান বন্ধ করতে হবে।
সংগঠনটির আহ্ববায়ক মুহম্মদ জুনায়েদ বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার আলিয়া মাদ্রাসার মত একটি ইসলাম ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উপর জোর করে কথিত ‘জাতীয় সংগীত’ চাপিয়ে দেয়। অনেক মাদ্রাসায় প্রাত্যহিক সমাবেশকালে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের এই গান গাইতে বাধ্য করা হয়। অথচ মাদ্রাসা একটি দ্বীনি প্রতিষ্ঠান। পবিত্র কুরআন-হাদীস শেখানোর স্থান। পবিত্র কুরআন শরীফে সূরা আন নিসার ৪৮ নং আয়াত শরীফে আছে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক সমস্ত গুনাহ মাফ করেন, কিন্তু শিরকের গুনাহ মাফ করেন না।” রবীন্দ্রনাথের লেখা কথিত জাতীয় সংগীত বিভিন্ন শিরকী কথায় ভরপুর। সেই শিরকী কথা সমৃদ্ধ গান মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা পাঠ করতে পারে না।
মুহম্মদ জুনায়েদ আরো বলেন, কবি রবীন্দ্রনাথের লেখা আমার সোনার বাংলা গানের প্রথম ১০ লাইন জাতীয় সংগীত হিসেবে পাঠ হয়। কিন্তু মূল গানটি ২৫ লাইনের। পুরোটি গান অবলোকন করলে স্পষ্ট হয়, রবীন্দ্রনাথ তার ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে বাংলাকে দেবী হিসেবে কল্পনা করেছে। তাই জাতীয় সংগীতকে এক প্রকার দেবী বন্দনা বলা যায়। যা দ্বীন ইসলামের আকিদ্বা বা বিশ্বাসের সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। একজন মুসলমান, বিশেষ করে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা কিছুতেই তা পাঠ করতে পারি না।
সংগঠনটির যুগ্ম আহ্ববায়ক মুহম্মদ বরকতুল্লাহ বলেন, বর্তমানে রাষ্ট্রের সীমানা বিবেচনা করলে রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশের কবি নয়, সে ভারতীয় কবি। তার জন্ম ও মৃত্যু দুটোই ভারতের সীমানায়। সে ভারতের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা। বাংলাদেশের অনেক গুণী লেখক-কবি আছেন। তাদের লেখা রচনা বাদ দিয়ে ভারতীয় কবির কবিতাই কেন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হতে হবে?
মুহম্মদ বরকতুল্লাহ আরও বলেন, ‘আমার সোনার বাংলা’ গানে যে বাংলা’র কথা বলা হয়েছে, সেই বাংলা আর আমাদের বাংলাদেশ তো এক নয়। ইতিহাস স্বাক্ষী, ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গভঙ্গের প্রেক্ষিতে রবীন্দ্রনাথ গানটি রচনা করে। বঙ্গভঙ্গের কারণে কলকাতাকেন্দ্রীক জমিদারদের বর্তমান বাংলাদেশের উপর আধিপত্যবাদ খর্ব হয়। সেই কষ্টে এই গানটি রচনা করে কলকাতার জমিদার রবীন্দ্রনাথ। তাই এ গানের চেতনার সাথে বর্তমান বাংলাদেশ সৃষ্টির চেতনা সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। সুতরাং এ গানটি কখনই বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হওয়ার যোগ্যতা রাখে না।
বরকতুল্লাহ বলেন, আমরা দিল্লীর পিঞ্জরমুক্ত নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। এখন দিল্লীর কবির জাতীয় সংগীত থেকেও মুক্তি চাই। মুহম্মদ বরকতুল্লাহ বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশেই জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের নজির রয়েছে। যেমন- সুইজারল্যান্ড, রাশিয়া, কানাডা, মিয়ানমার, নেপাল, জার্মানিতে জাতীয় সংগীত পরিবর্তন হয়েছে। তাহলে বাংলাদেশে জাতীয় সংগীত পরিবর্তন হতে সমস্যা কোথায় ?
সংগঠনটির সদস্য, মুহম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানের ৪১ এর ২ অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাউকে ভিন্ন ধর্মের কার্য গ্রহণ করতে বাধ্য করা যাবে না। অথচ মুসলিম শিক্ষার্থীদের উপর জোর করে একটি ভিন্ন ধর্মের গান চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ সংবিধান বিরোধী। সুতরাং অবিলম্বে মাদ্রাসাগুলোতে রবীন্দ্রনাথের লেখা জাতীয় সংগীত জাতীয় সংগীত পাঠ বন্ধ করতে হবে।
মানববন্ধনে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন আলিয়া মাদ্রাসার শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।