আলিম ভর্তিতে ভুতুড়ে আবেদন, পরে যা জানা গেল

মাওলানা মো. ইয়াকুব আলী
মাওলানা মো. ইয়াকুব আলী  © টিডিসি রিপোর্ট

দাখিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এবার আলিমে ভর্তির পালা। কিন্তু ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভর্তির আবেদন করতে গিয়ে দেখে শিক্ষার্থীদের আবেদন অন্য কেউ করে ফেলেছে। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক মাদ্রাসা অধ্যক্ষ তাদের ভর্তি আবেদন আগেই পরে ফেলেছেন। এমন ঘটনা ঘটেছে ভোলার চরফ্যাসন উপজেলায়। এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসন বরাবর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অধ্যক্ষের এমন অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার (৩০ মে) দুপুরে চরফ্যাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ওই শিক্ষক ভোলা জেলার চরফ্যাসন উপজেলার করিমজান মহিলা কামিল (এমএ) মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে কর্মরত রয়েছেন। যার ইআইআইএন ১০১৪১২, মাদ্রাসা কোড ১৬৮৯৭, কেন্দ্র কোড ৫৫৬। ভুক্তভোগী ওই পাঁচ শিক্ষার্থী চরফ্যাসন উপজেলার স্থানীয় একটি মাদ্রাসা থেকে সদ্য দাখিল পাস করেছেন।

ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী বলেন, মাওলানা মো. ইয়াকুব আলী আমাদের বাড়িতে এসে আমার কাছে আমার দাখিল পরীক্ষার রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও নিবন্ধিত মোবাইল নম্বর চেয়েছেন। কিন্তু আমি কোনো তথ্য দিইনি। আমি ২৮ মে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি আবেদন করতে গেলে জানতে পারি যে, আমার ভর্তি আবেদন সম্পন্ন করা। পরে জানতে পেরেছি আমার আবেদন তার মাদ্রাসা থেকে সম্পন্ন করেছে।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার থেকে কিংবা অভিভাবকের কোনো ধরনের অনুমতি নেওয়া হয়নি। আমার এসব গোপনীয় কাগজপত্রতো আমার মাদ্রাসায় সংরক্ষিত থাকার কথা। তাহলে তার হাতে আমার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কীভাবে গেল? তার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

ঘটনা সূত্রে জানা গেছে, একাদশ শ্রেণির ভর্তি আবেদন শুরুর দিন থেকে শিক্ষার্থী ও অবিভাবকদের না জানিয়ে গোপনীয়তার সাথে নিজস্ব মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে ওই মাদ্রাসা প্রথম পছন্দ তালিকায় নির্ধারণ করে ভর্তি আবেদন করেছেন মাওলানা মো. ইয়াকুব আলী। এই শিক্ষার্থীর মতো শতাধিক শিক্ষার্থীর ভর্তি আবেদন একইভাবে সম্পন্ন করেছেন তিনি।

ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থীর বাবা মো. জাহের দালাল বলেন, সদ্য দাখিল পাস করা শিক্ষার্থীদের রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও নিবন্ধিত মোবাইল নম্বর  বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে সংগ্রহ করেছেন ওই অধ্যক্ষ। ভর্তি আবেদন শুরুর আগেই বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক গুরুত্বপূর্ণ নথিও চলে গেছে তার হাতে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়েও কাগজপত্র সংগ্রহ করেছেন তিনি।

জাহের দালাল বলেন, তার (অধ্যক্ষ) প্রাধান উদ্দেশ্য শিক্ষার্থী ও অবিভাবককে না জানিয়ে গোপনীয়তার সাথে তার মাদ্রাসায় ভর্তি করানো। যার ফলে কোনো শিক্ষার্থী তাদের পছন্দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারে না। এতে শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন নষ্ট হয়ে যায় নিমিষে। তিনি এভাবেই বছরের পর বছর অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছেন।

ভুক্তভোগী আরেক শিক্ষার্থীর বাবা মো. সিরাজ বলেন, আমার মেয়ে ২০২৩ সালে দাখিল পাস করে। ওই সালেই মেয়ের ভর্তি আবেদন করতে গিয়ে দেখি তার আবেদন সম্পন্ন করা। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি মাওলানা মো. ইয়াকুব আলী তার মাদ্রাসার নাম প্রথম চয়েসে দিয়ে আমার মেয়ের ভর্তি আবেদন সম্পন্ন করেছেন। এমনকি আমাদের কারো মোবাইল নম্বর ওই আবেদনে ব্যবহার করেনি। ভর্তি আবেদন বাতিলের জন্য তার কাছে ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড চাইলে তিনি দেননি। 

মো. সিরাজ বলেন, নিরুপায় হয়ে অন্য প্রক্রিয়ায় আমার মেয়ের ওই আবেদন বাতিল করে পছন্দের কলেজে ভর্তি করাই। এতে আমি অর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমার মতে অভিভাবকদের পাশাপাশি একজন শিক্ষার্থীর পড়াশোনার ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পছন্দ-অপছন্দের থাকতেই পারে। আমার সন্তানের কাঙ্ক্ষিত ভবিষ্যৎ গড়ার পরিকল্পনা গ্রহণের অধিকার আমাদের আছে। এ সিদ্ধান্ত আমার নেব।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগের সত্যতা জানতে বুধবার (২৯ মে) সকালে ওই মাদ্রাসা গিয়ে দেখা যায় যে, এক শিক্ষার্থীর তথ্য জানাতে মাওলানা মো. ইয়াকুব আলী কয়েকটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের দাখিল পরীক্ষার প্রবেশপত্র ও রেজিস্ট্রেশন কার্ডের ফটোকপির ভিন্ন ভিন্ন বান্ডিল তার নিজস্ব টেবিলের ড্রয়ার থেকে বের করছেন। এসময় শতাধিক শিক্ষার্থীর দাখিল পরীক্ষার প্রবেশপত্র ও রেজিস্ট্রেশন কার্ডের কপিও সংরক্ষণ করতে দেখা গেছে। 

এসব অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মাওলানা মো. ইয়াকুব আলী কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। জানতে চাইলে চরফ্যাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নওরীন হক মুঠোফোনে জানান, তারা লিখিত অভিযোগ পেলে ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence