ডাকসু নির্বাচনে কারো সঙ্গে জোট করার প্রশ্নই আসে না

আব্দুল কাদের
আব্দুল কাদের  © টিডিসি সম্পাদিত

কোটা আন্দোলন থেকে ঘটে যাওয়া জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম সমন্বয়ক এবং ৯ দফার মূল কারিগর আব্দুল কাদের। যিনি বর্তমানে নতুন ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অভ্যুত্থান পরবর্তী ছাত্ররাজনীতির পরিবর্তন, আসন্ন ডাকসু নির্বাচনসহ সমসাময়িক নানা ইস্যু নিয়ে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের সাথে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাবি প্রতিনিধি মোফাচ্ছেন এইচ ইমরান—

দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস: সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ছাত্রলীগ বিহীন ছাত্ররাজনীতি—সবমিলিয়েই বিষয়গুলো বর্তমান ছাত্র রাজনীতির উপর কী কী প্রভাব ফেলছে? 

আব্দুল কাদের: ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে দখলদারের রাজনীতি কায়েম করেছিল। তবে তা এখন পরিবর্তন হয়েছে। হলে শিক্ষার্থীরা উঠতে পারছে। আমার হলে এখনও ৬৭টি সিট এখনও খালি। এখন পরিবর্তনে কাউকে জিম্মি করে মিছিলে নেওয়া হয় না। এখন শিক্ষার্থীদের যে মুক্ত চর্চা, বাকস্বাধীনতার সব বিষয় মিলিয়ে একটা মুক্ত চিন্তার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ছাত্রলীগের সময়কালে ভিন্ন মতকে সহ্য করা হতো না। ট্যাগিং করে তাকের মেরে থানায় দিয়ে দেওয়া হতো। শুধু আমি নির্যাতিত আমার মানবাধিকার হরণ করা হচ্ছে এটা বলার সাহস ছিল না। কিন্তু এখন আর সেসব বিষয় নেই। এখন মুক্ত চর্চার পরিবেশ কায়েম হয়েছে। গণতান্ত্রিক পরিবেশ কায়েম হয়েছে। ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা বিদ্যমান রয়েছে।  

দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস: অনেক সময় ছাত্র রাজনীতি দলীয় রাজনীতির ‘এক্সটেনশন’ হয়ে যায়—আপনার সংগঠন কতটা স্বতন্ত্র সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম?

আব্দুল কাদের: ছাত্ররাজনীতি দলীর রাজনীতির এক্সটেনশন মোটাদাগে দু’তিন ভাগে হয়। প্রথমত নেতৃত্ব নির্বাচনের পদ্ধতিটা কেমন হয়। আমরা যদি ছাত্রদল, ছাত্রলীগ বা অন্যান্য ছাত্রসংগঠনগুলোর কথা বলি সেখানে নেতা নির্বাচন করে জাতীয় দলের যে মূল নেতা তিনি। ফলে শিক্ষার্থীদের প্রতি তার দায়বদ্ধতার জায়গাটা থাকে না। তার দায়বদ্ধতার জায়গাটা তার নেতার প্রতি। নেতা হয়ে যাওয়ার পরেও শিক্ষার্থীদের প্রতি তার দায়বদ্ধতা থাকে না। বেশিরভাগ অছাত্ররাই নেতা হয়। এর ফলে একটা লেজুড়ভিত্তিক শুরু হয়। আরেকটা হলো অর্থের যোগান কোথা থেকে আসে ? জাতীয় যে দল তারা ছাত্রসংগঠনগুলোর অর্থের যোগান দেয়। ফলে সকল সিদ্ধান্ত একক ব্যক্তির হাতে থাকে। তবে নতুন যে বন্দোবস্ত এখানে নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে আন্তঃগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। একইসাথে সবাই ছাত্র থাকবে। যারা অছাত্র থাকে তারা ছাত্রদের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকে না। তার উদ্দেশ্য থাকে ভিন্ন। আমরা এ বিষয়টা নিশ্চিত করেছি যে তাকে অবশ্যই বর্তমান ছাত্র হতে হবে, এবং ভোটাভুটির মাধ্যমে নির্বাচিত হতে হবে। 

দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস: আগে আপনাদের অনুষ্ঠানগুলোয় বড় জমায়েত দেখা যেত, এখনও কি সেই অবস্থা চলছে? আপনার মতে এর পেছনে সাংগঠনিক দুর্বলতা, শিক্ষার্থীদের আগ্রহের ঘাটতি নাকি অন্য কোনো কারণ কাজ করছে?

আব্দুল কাদের: জুলাই আন্দোলনের আগে বেশি মানুষ হতো না। কিন্তু জুলাইকে কেন্দ্র করে অনেক মানুষ মাঠে নেমে এসেছে। এখন মানুষজন ভাবছে আমার দায়িত্ব শেষ আমি পড়ার টেবিলে ফিরে যাই। আমাদের প্রত্যাশা ছিল যে  মানুষজন বিদ্যমান ফ্যাসিস্ট কালচার হটিয়ে দিয়ে তারা ক্ষান্ত হবে না তারা নতুন এক বন্দোবস্ত নিয়ে হাজির হবে। তার জন্য তারা  মাঠ ছেড়ে যাবে না। আমাদের প্রত্যাশা ছিল আরো মানুষ হবে। কিন্তু হচ্ছে না। নানাবিধ কারণ রয়েছে। তবে আমরা আশাবাদী। নতুন যে ইস্যুগুলো রয়েছে গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধের দাবিতে আবারও মানুষজন মাঠে নেমে আসবে। আবারও বড় বড় জমায়েত হবে। আমরা এটুকু আশা করি।   

দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস: দায়িত্ব গ্রহণের পর এখন পর্যন্ত বৃহত্তর আকারে কী কী অনুষ্ঠান করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাবি শাখা? ছাত্রদের উপকারে এসেছে- এমন কর্মসূচি সম্পর্কেও জানতে চাই।

আব্দুল কাদের: দায়িত্ব গ্রহণের আগে আমার বিভিন্ন ছাত্রবান্ধব কাজ করার চেষ্টা করেছি। এছাড়া নতুন ছাত্রসংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর বিভিন্ন রাস্তা নিয়ে কাজ করেছি। মধুর ক্যান্টিনের সামনের রাস্তা সংস্কার, শিক্ষাকেন্দ্রিক বিভিন্ন প্রস্তাবনা, শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে ফার্মেসি দেওয়া, পরিবহন সেক্টরে কাজ করার চেষ্টা করেছি। আমাদের ক্যাম্পাসের ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে যে বুঝাপড়ার বিষয় রয়েছে তা নেই। শিবির ছাত্রদল একসাথে বসে না। সে জায়গাটায় ছাত্রসংসদ বিষয়টা (পারস্পরিক বুঝাপড়া) নিশ্চিত করেছে। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক হওয়ার পর থেকে দুবার ডান-বাম সকল ছাত্রসংগঠনের সাথে একসাথে বসেছি। একটা হলো মধুর ক্যান্টিনের সামনে আরেকটা হলো আমরা একটা ইফতারের আয়োজন করেছি। আমি আমার ক্যাম্পাস জীবনে দেখি নাই ছাত্রদল, শিবির, ছাত্রফ্রন্ট, মৈত্রীসহ সব ছাত্রসংগঠন একসাথে এক টেবিলে বসে ইফতার করেছে। তবে আমরা বিষয়টা নিশ্চিত করেছি।

চব্বিশের আগে ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে কোনো বুঝাপড়া ছিল না। ফ্যাসিবাদ বিরোধী যে জোটটা ছিল তাদের মধ্যেও বুঝাপড়া ভালো পর্যায়ে ছিল না। যদি থাকতো তাহলে ক্যাম্পাসে আরো ভালো কাজ করা যেত। আমরা শুরু থেকে চেষ্টা করেছি ছাত্রসংগঠনগুলোর মাঝে যদি ভালো একটা বুঝাপড়া থাকে তারা যদি নিজেরা বসে ঠিক করে যে আমর যদি চাই তাহলে শিক্ষার্থীদের যে প্রত্যাশা নিয়ে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করছে এ বিষয়ে যদি আমরা সবাই ঐক্যমত হই তাহলে এ কাজটা হবে। আমার   মনে  হয়েছে এ কাজটা আগে করা উচিত। আমরা আস্তে আস্তে করার চেষ্টা করতেছি। এছাড়া বৃষ্টি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নারীদের হলে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। এ নিয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সিটি করপোরেশনের সাথে কথা বলেছি। আমরা চেষ্টা করছি  শিক্ষার্থীকেন্দ্রীক আদতে কি কি কাজ করা যায়। তবে বড় যে প্রশ্নটা থেকে যায় যে রাজনৈতিক সেটেলমেন্টটা কি হবে? শিক্ষার্থীরা চেয়েছে এখানে একটা রাজনৈতিক সেটেলমেন্ট হবে। এখানে কোন মব তৈরি হবে না। কেউ অন্য ছাত্রসংগঠনের পেছনে লাগবে না। নানা ধরনের বিভাজন তৈরি হবে না। আমার  মনে হয় সেটা তখনি সম্ভব হবে যখন শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি নির্বাচন হবে। তাহলে শিক্ষার্থীকেন্দ্রীক কাজগুলো আরো দ্রুত ত্বরান্বিত করা যাবে। 

দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস: বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও ডাকসু নির্বাচনে দীর্ঘসূত্রিতার যে চিত্র দেখা যাচ্ছে, এর জন্য মূলত কাদের দায়ী বলে আপনি মনে করেন? সরকারের, প্রশাসনের, নাকি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের?

আব্দুল কাদের: সরকারে ছাত্র উপদেষ্টারা আছেন, সর্বজনবিদিত গুণিজন ব্যক্তিরা আছেন এবং রাজনৈতিক দলের স্টেকহোল্ডাররা এখানে আছেন। আমার মনে হয় না প্রশাসন রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে আগের মতো ‘আপা’ কালচারটা এখনও আছে। আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে বসেছি। ভিসি স্যারের সাথে বসেছি। আমি তার মুখ থেকে শুলনাম ড. ইউনূস স্যারও নাকি বলেছেন যে ‘আপনি দ্রুত এটা কার্যকর করেন’।

আমি এখানে একটা কথা অন ক্যামেরায় বলি, ভিসি স্যার আমাকে একটা কথা বারবার বলেছেন যে, ‘কাদের, এখানে একটা ষড়যন্ত্র হচ্ছে’। তখন আমি বললাম ষড়যন্ত্র কি আপনি স্যার আমাকে একটু বুঝান। তখন তিনি উত্তর দিলেন, বলবো বাবা বলবো। আমি বললাম রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে কি কোনো চাপ আছে? তিনি কিছু বলেননি। উনি বললেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের মধ্যে কোন একটা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সে জায়গাটায় একটা গুঞ্জন চাউর আছে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের মধ্যে কোন রাজনৈতিক দল এমন করার চেষ্টা করছে কি না? তবে আমরা একটা কথা বলি শিক্ষার্থীরা যে প্রশাসনকে বসিয়েছে কিংবা যে রাজনৈতিক দলকে কথা বলার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে কিংবা যারা বিভিন্ন সময় নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়েছে এখন তারা মেইনস্ট্রিম হয়েছে, তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে পারছে তার যদি শিক্ষার্থীদের চাওয়া-পাওয়ার বাহিরে গিয়ে নিজের রাজনৈতিক দলীয় অবস্থান নেয়, ডাকসুকে অকার্যকর করে রাখে সেখানে শিক্ষার্থীরা তা বরদাস্ত করবে না। কিন্তু রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে কোনো বাঁধা নেই।

এখানে পাঁচ আগস্ট পরবর্তী সময়ে প্রশাসনে যে প্রো-এক্টিভ লোকজন দরকার ছিল তা পাওয়া যায়নি। আমার এটা মনে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন খুবই আন্তরিক। কাজ হচ্ছে। কিন্তু গোছানো কাজ, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে যে কাজ তা হচ্ছে না। পাঁচ আগস্ট পরবর্তী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অগ্রাধিকারের ভিত্তিত কোনো কাজ করেনি।

আমি ভিসি স্যারের সাথে একদিন কথা বলার সময় উনি আমাকে বলেছেন, দেখো বাবা, ভিসি হিসেবে ৩৪৯টি রুটিং ওয়ার্ক রয়েছে। তারা এগুলোকে গুরুত্বের সাথে দেখে। তারা প্রত্যেকদিন কাজ করে। কিন্তু অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ করার যে সক্ষমতা বা মনোভাব আছে কি না আমার তা মনে হয় না। তবে তারা আন্তরিক। তারা বলছেন তাদের নিজেদের মধ্যে বুঝাপড়ার মিলছে না। কিংবা কোন ব্যক্তিকে দিয়ে কোন রাজনৈতিক দল প্রভাব খাটানো চেষ্টা করছে। সেটাও হতে পারে। গুঞ্জন আছে। তবে যদি এমনটা হয় তা হিতে বিপরীত হবে। শিক্ষার্থীরা অনেক সময় দিয়েছে আর সময় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনাদের সংগঠনের মূল ভোটার ভিত্তি কারা? ৫ আগস্ট পরবর্তী রাজনীতিতেও কিছু পরিবর্তন এসেছে। এই মুহূর্তে কোন স্তরের শিক্ষার্থীরা আপনাদের সমর্থন করেন বলে মনে করেন?

আব্দুল কাদের: প্রথমত শিক্ষার্থীরা তাদেরকেই তাদের প্রতিনিধি হিসেবে চাইবে যারা তাদের বিপদ-আপদে কাছে ছিল। আমরা যখন পরিষদ (ছাত্র অধিকার পরিষদ) করতাম তখন হাতেগোনা সাত থেকে আটজন লোক ছিলাম। এই ক্যাম্পাসে যদি কেউ নিপীড়নের শিকার হতো, কেউ নির্যাতনের শিকার হতো, কাউকে হল থেকে বের করে দেওয়া হতো, কাউকে শাহবাগ থানায় দিয়ে দেওয়া হতো তখন এই আট থেকে দশজন মানুষকে তারা পাশে পেতো। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন আসতে পারতো না। আমি জেলে গিয়েছি। আবরার ফাহাদের দ্বিতীয় শাহাদাত বার্ষিকীতে একটা অনুষ্ঠান করছিলাম। প্রোগ্রামের আগেই আমাদের মেরে হাসপাতালে  পাঠিয়ে দেয়। ওখানে আরেক দফা মেরে শাহবাগ থানায় দিয়ে এসে দুটা করে মামলা দেয়। আমি প্রায় বত্রিশ দিন জেল খেটে ওখান থেকে এসে রাজুতে দাঁড়িয়েছি। আমরা যত হামলা-মামলা কিংবা নির্যাতনের শিকার হই না কেন আমরা শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছি। ত্রাসের সংস্কৃতিতেও আমাদের মানুষজন দেখেছে। আমাদের নতুন ছাত্রসংগঠনের যারা এসেছে তারা হলো বিভিন্ন হল পর্যায়ে প্রতিনিধি ছিল। ছাত্রলীগকে বিতাড়িত করা থেকে শুরু করে গণঅভ্যুত্থানে ভালো ভূমিকা রাখা লোকজনই আমাদের ছাত্র সংগঠনে এসেছে।

আমি বলবো শিক্ষার্থীরা তাদেরকে নেতা হিসেবে চাইবে যাদেরকে তারা দুর্দিনে নেতা হিসেবে পাশে পেয়েছে। বিগত পাঁচ থেকে সাত বছরে যে নিপীড়ন নির্যাতনে বিরুদ্ধে আমার দাঁড়িয়েছিলাম; কোন ভয়ভীতির তোয়াক্কা করি নাই। এরকম যারাই ছিল শিক্ষার্থীরা অবশ্যই তাদেরকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দেখবে। তারা অবশ্যই দেখবে তাদের গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু। গণঅভ্যুত্থান কারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা নেতৃত্ব পর্যায়ে রয়েছে তারা যথেষ্ট আন্তরিক এবং শিক্ষার্থীবান্ধব। বিগত দিনেও তারা তা প্রমাণ করে এসেছে। বর্তমানে বিপ্লব পরবর্তী আট মাস আমরা চেষ্টা করছি যেন  শিক্ষার্থীবান্ধব যে ইমেজ তা ধরে রাখতে পারি। আমাদের অবস্থান তুলে ধরতে পারি।  আমরা পরিবহন সেক্টর, ঢাকা মেডিকেলসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছি। আমরা আশা করছি আস্থার জায়গাটা তৈরি করতে সক্ষম হব। 

দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস: ডাকসু নির্বাচনে শিবিরের সাথে জোট বা সমঝোতার গুঞ্জন রয়েছে। এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কী?

আব্দুল কাদের: শিবিরতো প্রকাশ্য হলে আপনি বলতে পারতেন যে এ শিবির ও  শিবির। শিবিরতো প্রকাশ্য না। শিবিরতো প্রকাশ্যে না আসলে আমি বুঝতে পারবো না আমি কার সাথে জোট করবো। শিবিরের সাথে জোট করার কোনো প্রশ্নই আসে না। আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের মধ্যে প্রায় ২৯১ জন সদস্য রয়েছে।

আমি মনে করি, সবাই এখানে যোগ্য মানুষ এসেছে। এই কমিটির সবাই বর্তমান ছাত্র। বিগতদিনে তারা আন্দোলন করে আসছে এবং চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানেও। আমরা মোটামুটি স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমরা কখন যাব? কারা জোট করতে যায়? কারা লিয়াজোঁ করতে যায়? যাদের কি না নিজেদের একটা দুর্বলতা আছে। আমার মনে হয়েছে যে, আমি সক্ষম না। আরেকটার সাথে মিশে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমর সক্ষম হব। সেই জায়গা থেকে আমরা মনে করছি যে, আমরা যথেষ্ট স্বয়ংসম্পূর্ণ। কারো সাথে জোট করার কোনো প্রশ্নই আসে না।   

দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস: ডাকসু নির্বাচনে আপনারা যে প্যানেল গঠন করবেন, তাতে কীভাবে নেতা নির্বাচন করবেন? প্রাধান্য পাবে কী আদর্শ, অভিজ্ঞতা, নাকি জনপ্রিয়তা?

আব্দুল কাদের: আমরা একটা ইনক্লুসিভ প্যানেল দেওয়ার চেষ্টা করবো। এটা কেমন হবে আমি যদি বলি, আমর দল থেকেই যে সবাইকে দিতে হবে। আমাদের উদ্দেশ্য হলে কাদেরকে নিয়ে আসলে শিক্ষার্থীবান্ধব কাজ করা যাবে। তার সেই সক্ষমতাটা আছে কি না? সে যদি আমার সংগঠনের হোক বা সংগঠনের বাহিরের হোক তাকে আমরা তুলে আনার চেষ্টা করব। যেমন পরিবহর সেক্টরে আমি আমর সংগঠনের কাউকে এখনও পাইনি। আমি যদি এখন পরিবহন সম্পাদক হিসেবে আমার এখান থেকে একজনকে দিয়ে দেই সে তো এই সেক্টরে অনভিজ্ঞ। পরিবহন সেক্টরে যে বাসে যাতায়াত করে তার বাস সম্পর্কে একটা অভিজ্ঞতা আছে। সে জানবে বাসের কোন কোন জায়গায় সমস্যা। সে বিষয়টার মধ্যে নিজেকে সংযুক্ত মনে করবে। কিন্তু আমি যদি একটা হলের সম্পাদককে হলে দাঁড় করিয়ে দেই পরিবহনের সাথে যার কোন সম্পর্ক নেই। একইভাবে যদি ক্রীড়াঙ্গনে এমন কাউকে দিয়ে দেয় যার কিনা ক্রীড়ার সাথে কোন সম্পর্ক নেই কিন্তু তারা জনপ্রিয়তা ভালো।

আমি চাচ্ছি যে যার যে অঙ্গনে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, বুঝাপড়া রয়েছে, সম্পৃক্ততা রয়েছে সে জায়গাটা আমরা অবশ্যই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দেখব। এখানে একি সাথে ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতা, চারিত্রিক, আদর্শিক বিষয়গুলো অবশ্যই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তবে একটা ইনক্লুসিভ প্যানেল হবে। আমি যদি পরিবহণ সম্পাদক দেই এখানে কার একটু সক্ষমতা রয়েছে আমি ওই ব্যক্তিকে আনার চেষ্টা করব। এখানে প্রায় ৩০ শতাংশ নারী থাকবে। এখানে উপজাতি থাকবে, এখানে হিন্দু থাকবে, এখানে প্রতিবন্ধী থাকবে। সকল কিছু মিলিয়ে একটা ইনক্লুসিভ প্যানেল দেওয়া। যেন প্রত্যেকটা জনগোষ্ঠীর প্রত্যেকটা সেক্টরের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারি। এমন একটা ইনক্লুসিভ প্যানেল করার চেষ্টা করছি। 

দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস: সমচিন্তার বা ভিন্নচিন্তার ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের যোগাযোগ ও সম্পর্ক কেমন? কখনও অন্যদলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে হলে তা কি হবেন?

আব্দুল কাদের: কয়েকদিন আগে বামপন্থী একটি সংগঠনের নতুন কমিটি হয়। তাদের যে নতুন কমিটির সাথে পরিচিতি সভায় বামপন্থী যারা ছিল তারাই তাদেরকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিল। তবে ডানপন্থী কোনো দল যায়নি। ইসলামিস্ট কোনো দলও যায়নি। কিন্তু গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কমিটি হওয়ার পর পরিচিত পর্বে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, বামপন্থীসহ সব দল এসেছে। আমাদের শুভেচ্ছা জানাতে এককাতারে সবাই এসেছে। মোটামুটি ভালো বুঝাপড়া রয়েছে।

আমাদের ইফতার অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের সেন্ট্রাল প্রেসিডেন্ট যেমন এসেছে তেমনি শিবির থেকে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি এসেছে। শিক্ষার্থীদের কল্যাণে যদি জোট তৈরি করতে হয় তা অবশ্যই হবে। কিন্তু নির্বাচন কেন্দ্রিক কোনো জোট মনে হয় না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের কল্যাণে আমরা সব সময় ঐক্যবদ্ধ। যে কোন ইস্যু যেমন নিপীড়ক বিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ বা ছাত্রসংগঠন সে সকল ক্ষেত্রে আমরা সব সময় ঐক্যবদ্ধ।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence