আইন পড়ার স্বপ্ন থেকেই ঢাবির ‘বি’ ইউনিটে ১০ম আরাফাতুজ্জামান

রংপুর সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন মো. আরাফাতুজ্জামান অর্থ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষায় কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ১০ম (বিজ্ঞান বিভাগ) হন। পরীক্ষায় নিজের সাফল্যের গল্প নিয়ে মুখোমুখি হয়েছেন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের। তার কথাগুলো শুনেছেন—আমান উল্যাহ আলভী।
ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে আপনার অনুপ্রেরণা কী ছিল?
ভর্তি প্রস্তুতি কি হবে তাই নিয়ে একটা টানাপড়েন ছিল নিজের মধ্যে এইচএসসি প্রথম বর্ষে। তখন ভাবছিলাম আমার জন্য কোন ক্যারিয়ারটা পারফেক্ট হবে, সব ক্ষেত্র নিয়ে যখন চিন্তা-ভাবনা করছি। তখন আমার সামনে আসে আইন নিয়ে পড়াশুনা করার ক্ষেত্রটি। আইন নিয়ে পড়তে চাওয়ার ইচ্ছাটুকুকে তখন থেকেই লালন করেছি, তখন থেকেই টুকটাক মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছি। আইনে পড়ার ইচ্ছাটুকুই আমাকে পুরো প্রস্তুতি পর্বে আমাকে প্রেরণা দিয়েছে।
প্রস্তুতিকালীন কীভাবে পড়ালেখা করতেন?
আমি অনেক দীর্ঘসময় এক নাগাড়ে পড়াশুনা করতে সক্ষম নই, আগে থেকেই। আমি দেখে শুনে যা পড়ি তা মন দিয়ে পড়ি। প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন করে রাখতাম। প্রশ্ন এনালাইসিসের ওপর জোর দিয়েছিলাম শুরু থেকেই। কোনো টপিক পড়ার আগে ভাবতাম ঢাবিতে এইটা আসার সম্ভাবনা কত, যেটার সম্ভাবনা যেমন তার পিছনে ততটাই সময় দিতাম। অগুরুত্বপূর্ণ কোনো টপিকে সময় নষ্ট করতাম না একদমই। এ প্রক্রিয়াতেই বিইউপির এফএসএসএসের ভর্তি পরীক্ষায় ৬৮তম হয়ে সেখানকার আইন বিভাগে ভর্তিও হয়ে যাই। এই কারণে এই প্রক্রিয়াটা আমি ঢাবি ভর্তি পরীক্ষার শেষ পর্যন্ত চালিয়ে গিয়েছি।
আরো পড়ুন: বাবার পথ ধরেই ঢাবিতে প্রকৃতি, ভর্তি পরীক্ষায় অবস্থান সেরাদের কাতারে
প্রস্তুতিতে অনেক সময় হতাশা কাজ করে পড়া নিয়ে। এ সময়গুলোয় কীভাবে সামলে উঠতেন...
আমার পড়াশুনা নিয়ে খুব একটা হতাশা ছিল না, পরিবেশ নিয়ে ছিল। এ বিভাগ পরিবর্তন করার কারণে এক প্রকার একা হয়ে গিয়েছিলাম। আমার অন্য সকল বন্ধু-বান্ধব আলাদা প্রিপারেশন নিচ্ছিল। এর পাশাপাশি আমার বাবা-মা এই বিভাগ পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে আগে থেকে খুব চিন্তিত সঙ্কিত ছিলেন। পড়ার পাশাপাশি নিজের মনকে শান্ত রাখার কাজও করতাম, একনাগাড়ে পড়াশুনায় মুখ গুঁজে থাকতাম না। পড়াগুলোও আনন্দের সাথে নিজের মত করে পড়তাম। তবে বিইউপিতে নির্বাচিত হওয়ার পরে চাপ একেবারে শূন্যে নেমে যায়। এ চাপ কম থাকাটা আমাকে ঢাবির পরীক্ষায় অনেক সাহায্য করেছে।
পরীক্ষার হলে কী কৌশল অবলম্বন করে পরীক্ষা দিয়েছেন?
পরীক্ষার হলে আমার কৌশল ছিল, আমি খুব দ্রুত প্রায় এক ঘণ্টা আগেই উপস্থিত হতাম হয়ে, নিজেকে পরিচিত করিয়ে নিতাম পরিবেশটার সাথে। কারোও সাথে তেমন কথা না বললেও সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে মনকে শান্ত রাখতাম। শিক্ষকরা আসার পর যে নির্দেশনা দিতেন, তা মেনে তারপর ভালোভাবে পরীক্ষা দেয়া শুরু করতাম। শুরুতে যা একবার দেখেই পাচ্ছি তা দাগিয়ে তারপর ধীরে ধীরে সব দাগানোর চেষ্টা করতাম। যা একেবারে আন্দাজ করতে পারছি না, তা বাদ দিতাম।
কোন বিষয়ে পড়ার ইচ্ছা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
ইতোমধ্যেই উল্লেখ করেছি, আমার শুরু থেকেই আইনে পড়ার ইচ্ছা। আল্লাহর রহমতে সে ইচ্ছা পূরণ হওয়ার পথে। এলএলবি কমপ্লিট করার পরে কোন পেশায় যাব তা পুরোপুরি সিদ্ধান্ত নেই নি। এখন, নিজের মত আইন সমন্বিত সব পেশাকে কাছে থেকে অ্যানালাইসিস করতে চাই। তারপর সিদ্ধান্ত নেব।
ঢাবিতে সুযোগ না হলে পরিকল্পনা কী ছিল?
আমার ঢাবিতে আইন পড়া সর্বোচ্চ লক্ষ্য ছিল। এর বাইরে ব্যাক আপ ছিল, অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়া। যেহেতু শুরুতে বিইউপিতে হয়েছিল আইন বিভাগে। তাই ঢাবি ছাড়া অন্য কোথাও পরীক্ষা দেই নি। ঢাবিতে আইন না পেয়ে অন্য কোনো সাবজেক্ট পেলে বিইউপিতে আইন নিয়ে পড়তাম।
পরবর্তী সময়ে যারা পরীক্ষা দেবেন, তাদের জন্য যদি কিছু বলতেন...
যারা আমার পরবর্তী ব্যাচ তাদের প্রতি পরামর্শ থাকবে, এখন পুরোদস্তুর এএইচএসসি এর প্রস্তুতি নেও। এডমিশন টাইমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোথায় থেকে কিভাবে প্রশ্ন আসে তা সুন্দর করে অ্যানালাইসিস করে, সে অনুযায়ী পড়বে। কোনো আজে-বাজে পড়ায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় দেবে না। যাতে তুমি দুর্বলতা খুঁজে বের করবে এডমিশন টাইমের শুরুতেই, সেটায় বেশি বেশি গুরুত্ব দেবে।
আরো পড়ুন: ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হলেও সেনাবাহিনীতে যেতে চান তাহমিদ
ঢাবি ছাড়াও কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
আমি কেবল বিইউপি (এফএসএসএস) এবং ঢাবি (বি ইউনিট) এ এক্সাম দিয়েছি। বিইউপিতে ৬৮ তম ও ঢাবিতে ১০ম। এগুলোর বাইরে কেবল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফর্ম ফিল আপ করেছিলাম। সেখানে পরীক্ষা দিইনি। আর কোথাও রেজিস্ট্রেশন করিনি।