প্রথমবার সহকারী জজ পরীক্ষা দিয়েই দেশসেরা দ্বিতীয় তানিয়া সুলতানা

তানিয়া সুলতানা
তানিয়া সুলতানা  © টিডিসি

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের ১৭তম (বিজেএসসি) নিয়োগ পরীক্ষায় সহকারী জজ পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তানিয়া সুলতানা।  প্রথমবার পরীক্ষা দিয়েই বিজেএস পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন তিনি।  সম্প্রতি তিনি তার সাফল্য ও শিক্ষা জীবন নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের মুখোমুখি হয়েছেন। তার কথাগুলো শুনেছেন—সুমন বাইজিদ। সাক্ষাৎকারটির চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো:

১৭তম বিজেএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। আপনাকে অভিনন্দন। আপনার জীবন-গল্প শুনতে চাই।

তানিয়া সুলতানা: চট্টগ্রামের রাউজানে আমার বাড়ি। স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অথবা জজ হব। উচ্চ মাধ্যমিকের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তির সুযোগ পাই। আমি চেয়েছিলাম প্রথমবার পরীক্ষা দিয়েই স্বপ্নের চাকরি পেতে। তাই স্বপ্ন পূরণে অনার্সের প্রথম থেকেই পড়ালেখায় মনোযোগী হই।

 আপনার প্রস্তুতির শুরুটা কেমন ছিল? কবে থেকে নিয়মিত পড়াশোনা শুরু করেছিলেন?

তানিয়া সুলতানা: আমি পুরোপুরি প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ করার পর। কারণ আমি চেয়েছি আমার একটা গোছানো প্রস্তুতি হোক। তবে অনার্স-মাস্টার্সে যেসকল বিষয় বিজেএস এর সাথে সম্পর্কিত ছিল, সেগুলো সবসময় মনোযোগ সহকারে পড়তাম। প্রথমদিকে সবকিছু এলোমেলো লাগত। কোন জায়গা থেকে শুরু করব বুঝতে পারতাম না। 

আইন দিয়েই পড়া শুরু করেছি। আইনে যেহেতু আমার পড়াশোনা,তাই এই বিষয়ে খুব একটা গাইডলাইন দরকার হয়নি। কিন্তু সাধারণ বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়ার সময় আমি প্রথমেই বিজেএস এর সিলেবাসটা ডাউনলোড করে মন দিয়ে সেটা পড়েছি। বিগত বছরের প্রশ্নগুলা বিশ্লেষণ করে দেখেছি। কোন কোন  টপিক থেকে প্রশ্ন আসে। প্রতি বিষয়ের বই সিলেকশন করেছি। এরপর এক বছর বা এর বেশি কিছু সময় সব অনুষ্ঠান, ঈদ বাদ দিয়ে শুধু পড়ালেখা করেছি।

প্রতিদিন গড়ে কত ঘণ্টা পড়াশোনা করতেন এবং কোন পদ্ধতিতে প্রস্তুতি নিতেন?

তানিয়া সুলতানা: আসলে সত্যি বলতে আমি কখনো ঘণ্টা হিসেব করে পড়াশোনা করিনি।  আমি চেষ্টা করেছি একেকদিন একেক টপিক শেষ করতে। আর এ জন্য সেগুলো মাথায় গেঁথে নিতাম। ওই টপিক যতক্ষণ শেষ না হতো ততক্ষণ পর্যন্তই পড়তাম।

লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতিতে কী পার্থক্য ছিল?

তানিয়া সুলতানা: বিজেএস পরীক্ষায় টিকতে হলে ১০০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষাটাই আসল। লিখিত প্রস্তুতিতে সব বিষয়ের খুঁটিনাটি জানতে হয়। মৌখিক পরীক্ষার পড়াশুনা কিছুটা প্রিলির মত। লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি ভালোভাবে নিলে মৌখিক পরীক্ষার সময় রিভিশন দিলেই প্রস্তুতি সহজ হয়ে যায়। আমি এভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছি

প্রস্তুতির সময় কীভাবে মানসিক চাপ সামলেছেন এবং মোটিভেশন ধরে রেখেছেন? কখনও পিছু হটতে ইচ্ছে করেনি?

তানিয়া সুলতানা: মানসিক চাপতো সবসময় ছিল। তবে আত্মবিশ্বাসও ছিল। সবসময় পড়াশুনার মধ্যে থেকেই মানসিক চাপ সামলে নিয়েছি। কখনো পিছু হটার চিন্তা করিনি। কারণ বাবা-মা সহ সবার স্বপ্ন ছিল আমি জজ হব। এটাই আমাকে শক্তি দিয়েছে।

সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষার পুরো যাত্রায় তিক্ত/মধুর কোন স্মৃতি এই মুহূর্তে মনে পড়ছে? 

তানিয়া সুলতানা: নিয়োগ পরীক্ষার পুরো সময়ের মধ্যে আমার লিখিত পরীক্ষার জন্য ১০ দিনের যাত্রাটা সবচেয়ে তিক্ত ছিল। মাঝে মধ্যে মনে হত আর পারছি না। তবুও পড়তাম কারণ প্রথমবারেই জজ হওয়ার একটা স্বপ্ন আমার ইচ্ছা ছিল। 

ভবিষ্যতে যারা সহকারী জজ হতে চান, তাদের জন্য আপনার কী পরামর্শ থাকবে?

তানিয়া সুলতানা: ভবিষ্যতে যারা জজ হতে চান তাদের জন্য আমার একটাই পরামর্শ থাকবে সেটা হলো অনার্স জীবন থেকেই অ্যাকাডেমিক পড়াশুনায় মনোযোগী হওয়া। নিজের উপর আত্মবিশ্বাস রেখে হাল না ছাড়া।

দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের পক্ষ থেকে আপনাকে অভিনন্দন। 

তানিয়া সুলতানা: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে ধন্যবাদ।


সর্বশেষ সংবাদ