বিজেএসে সুপারিশপ্রাপ্ত জবির শান্ত
হতাশ হলেও হাল ছাড়িনি—মাঝেমধ্যে পড়ার টেবিলেও ঘুমিয়ে পড়তাম
- জুনায়েদ মাসুদ
- প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৫, ০৯:৫৪ PM , আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২৫, ১২:২২ AM

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের ১৭তম (বিজেএস) নিয়োগ পরীক্ষায় সহকারী জজ পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন শান্ত দেব রায় অর্ন। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। সম্প্রতি তার সাফল্য ও শিক্ষা জীবন নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। তার কথাগুলো শুনেছেন—জুনায়েদ মাসুদ
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ১৭তম বিজেএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। আপনাকে অভিনন্দন। আপনার সম্পর্কে জানতে চাই।
শান্ত দেব রায়: স্কুলকলেজ জীবনে আমার ক্যাডেট কলেজ থাকায়, তখন থেকে ইচ্ছা ছিলো আর্মি বা নেভি অফিসার হবো। কিন্তু ভাগ্য সহায়নি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিশ্ববিদ্যালয় ও বিজেএস সম্পর্কে জানতে চাই।
শান্ত দেব রায়: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেলাম। তবে ভর্তি হওয়ার আগে আইন সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই ছিল না। বলতে পারেন বড় ভাইদের পরামর্শে আইন বিভাগে ভর্তি হই। এরপর আইনের এক্সট্রা-কারিকুলারটা বেশি করা হতো, রিসার্চ করতে অনেক ভালো লাগতো। এজন্যই ভেবেছিলাম পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষক হবো। মাস্টার্স শেষ করে, রেজাল্ট পেতে দেরি হবে দেখে, জুডিশিয়ারি প্রস্তুতি শুরু করি। ভাগ্য সহায় ছিলো প্রথমবারে হতে পেরেছি। জুডিশিয়ারি রেজাল্ট দেওয়ার এক সপ্তাহ আগে একটা ইউনিভার্সিটিতে জয়েন করেছি, এখন শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছাটাও আমার পূর্ণ হলো।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: জুডিশিয়ারির প্রস্তুতি নিয়ে যদি কিছু বলেন?
শান্ত দেব রায়: মনোযোগের সাথে প্রস্তুতি শুরু করি। সকল ক্লাস আমি গুরুত্ব সহকারে নোটস করেছিলাম। ক্লাস রেকর্ড শুনতাম বেশি করে। এরপর যে টপিকগুলো পড়াতো, ওইগুলো ডিটেইলস বই থেকে পড়ে নোট করে নিতাম খাতায়। সেগুলো প্রচুর দাগিয়ে দাগিয়ে পড়তাম। এটা করার কারণে মনোযোগ ধরে রাখতে সহজ হতো।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রতিদিন গড়ে কত ঘণ্টা পড়াশোনা করতেন এবং কোন পদ্ধতিতে প্রস্তুতি নিতেন?
শান্ত দেব রায়: প্রতিদিন কত ঘণ্টা পড়েছি এটা ঠিক বলা কঠিন। কিন্তু প্রতিদিন পড়তাম, আমি এক ঘণ্টা বা এর বেশি পড়তাম। তারপর পাশে বেড ছিলো, শুয়ে থাকতাম আর পড়াগুলো রিকল করতাম। ২০/৩০ মিনিট পর আবার টেবিলে বসতাম। খাবারের সময় নিউজ দেখতাম। আর প্রতিদিন রুটিন মেইনটেইন করতাম। প্রথম প্রথম শেষ করতে পারতাম না, পরে নিজের কাছে পরাজিত মনে হতো। এরপর পড়া না শেষ করে ঘুমাইতাম না সেটা যত রাতেই হোক। আমার মনে হয় সবার একটা গাইডলাইন আর রুটিন ফলো করা খুবই প্রয়োজন কিছু পাওয়ার জন্য।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কোন বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিতে হয়?
শান্ত দেব রায়: সংবিধানকে যেকোনো আইনের ছাত্রকে গুরুত্ব বেশি দিতে হয়। কারণ এখানে অনেক মার্কস থাকে প্রিলি এবং রিটেন। এ ছাড়া পারিবারিক আইন এবং অপশনাল আইন আছে। এগুলোতে অনেক মার্কস তুলা যায়। আর প্রতিনিয়ত কিছু সময় রাখতাম সিপিসি, সিআরপিসি, এভিডেন্স, পেনাল আইন গুলো পড়ার জন্য। যেহেতু আইনগুলো বড়, এজন্য প্রতিদিন নিয়ম মাফিক সময় নিয়ে পড়তাম।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রিলি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার বিষয়ে জানতে চাই?
শান্ত দেব রায়: দেখুন লিখিত পরীক্ষা একরকম আর মৌখিক পরীক্ষা একরকম। আমার কাছে মনে হয়, প্রিলি প্রস্তুতির সময়েই রিটেনের কিছুটা এগিয়ে রেখেছিলাম। নোটস করে করে সব পড়তাম কারণ রিটেনের সময় খুবই কম পাওয়া যায়। আর মৌখিক পরীক্ষার জন্য অনেক বেশি ভাইভা এক্সাম দিতাম, রুমমেট, ক্লাসমেটদের কোশ্চেন ধরতে দিতাম। কয়েকটা মক ভাইবাও দিয়েছিলাম। এই জন্য আমার সাহসটা ভালো ছিলো মৌখিক পরীক্ষা দেওয়ার আগে। আসলে চর্চা থাকা উচিত এগুলোর জন্য।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এ পর্যন্ত আসতে জার্নিটা কেমন ছিল?
শান্ত দেব রায়: প্রথম দিকে খুবই ভয়ে ছিলাম পারব কিনা, অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। যখন শুরু করলাম একটা সময় আস্তে আস্তে মোটিভেটেড হতে থাকলাম। মাঝে মাঝে মনে হতো বাদ দিয়ে দিবো। তখন আবার ভাবতাম এতদূর আসলাম এখন বাদ দিয়ে দিবো! আবার পড়তে বসতাম, মাঝে মাঝে টেবিলেই ঘুমিয়ে পড়তাম।
রিটেন এক্সাম দেবার সময় লাস্ট এক্সামের দিন, রাস্তায় অনেক বেশি জ্যাম ছিলো। পরীক্ষার ২০ মিনিট বাকি তখনও আমি পুরান ঢাকার এদিকে, বাইক নিয়ে কোনো রকমে জাস্ট পৌঁছাতে পেরেছিলাম, যদিও ওই এক্সামটাই ৮ মার্কস সময়ের অভাবে ছেড়ে আসছিলাম। আর একটা ২০২৪ সালে ঈদ কিংবা পূজা কোনোটাতেই বাড়িতে যেতে পারিনি, হয়ত আমার প্রিপারেশন খারাপ হয়ে যেতো।
মানসিকভাবে শক্তিশালী হতে হবে, যে আপনি যে ইউনিভার্সিটির হন না কেনো। সময় যেহেতু হাতে কম, একটা দিনও নষ্ট করা যাবে না। আপনি যদি একদিন না পড়েন, আরেকজন ঠিকই পড়ছে এবং এগিয়ে যাবে। সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এখন। আর একটা রুটিন ফলো করবেন, তাহলে পড়াগুলো গুছানো থাকবে আপনাদের। প্রয়োজনে সিনিয়র করো কাছে পরামর্শ নিতে পারেন এখন। একটা সঠিক গাইডলাইন ভবিষ্যতের পথটা মসৃণ করে তুলে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
শান্ত দেব রায়: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের জন্য শুভকামনা রইলো।