শিক্ষার্থীদের যুগোপযোগী জ্ঞান সরবরাহ করছে UIU এর তড়িৎপ্রকৌশল বিভাগ
- আহমেদ ইউসুফ
- প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:০২ PM , আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:৫৫ PM

ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংকে বলা হয় ‘প্রকৌশলবিদ্যার আত্মা’। সংক্ষেপে যাকে বলা হয় ইইই। প্রযুক্তির বিস্তারের সাথে সাথে এই সাবজেক্টটিরও প্রাধান্য বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রযুক্তির এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তড়িৎপ্রকৌশল অস্তিত্বহীন। এক কথায় আধুনিকতার যতকিছু রয়েছে, তার সবটা জুড়ে রয়েছে তড়িৎপ্রকৌশল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষে থাকছে বিষয়টি। পেশা হিসেবেও এই পেশার মূল্যায়ন অনেকটাই দৃশ্যমান। দেশে এই সেক্টরের ইঞ্জিনিয়ারদের বাড়তি চাহিদার পাশাপাশি বিদেশেও রয়েছে আকর্ষণীয় সুযোগ।
বাংলাদেশে যে-সব সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবজেক্ট হিসেবে তড়িৎপ্রকৌশল পড়ানো হয়, এরমধ্যে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ) অন্যতম। শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতেও বেশ সচেতন তড়িৎপ্রকৌশল বিভাগ। অ্যাকাডেমিক শিক্ষার বাইরে বিভিন্ন সেমিনার, ট্রেনিং, ইন্ডাস্ট্রি ভিজিট এবং শিক্ষকদের সাথে গবেষণা কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরিতে বিভাগটির রয়েছে সুসজ্জিত ল্যাব, মানসম্মত ক্লাসরুম। এছাড়া ১৪ জন পূর্ণকালীন সিনিয়র ফ্যাকাল্টিসহ দেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপকদের থেকে শিক্ষা ও গবেষণার অভিজ্ঞতা গ্রহণের সুযোগ পান শিক্ষার্থীরা।
‘UIU এর তড়িৎপ্রকৌশ বিভাগে রিনিউয়েবল এনার্জি এবং VLSI সহ বেশকিছু উন্নত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। যেটা শিক্ষার্থীদের বাড়তি কিছু শিখতে এবং জানতে সহায়তা করে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশেষ প্রকল্পের আওতায় এখানে অর্থায়ন করা হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা স্নাতক পর্যায় থেকেই গবেষণায় মনোযোগী হন। গবেষণার এই অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের প্রফেশনাল পর্যায়ে এগিয়ে যেতে অনেক বেশি সহায়তা করে— প্রফেসর খালেদ মাসুকুর রহমান, বিভাগীয় প্রধান, তড়িৎপ্রকৌশল, ইউআইইউ
দেশের এনার্জি সংকটের বর্তমান প্রেক্ষাপটকে মাথায় রেখে বিভাগটি ইতোমধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে গবেষণার জন্য সার্বক্ষণিক একজন পরিচালকসহ ‘সেন্টার ফর এনার্জি রিসার্চ (সিইআর)’ নামে একটি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে। এছাড়াও নবায়নযোগ্য জ্বালানির সংকট নিরসনে বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করছে তড়িৎপ্রকৌশল বিভাগ।
শিক্ষা গবেষণায় আরো এগিয়ে যেতে উচ্চশিক্ষালয়টি ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে। এরমধ্যে রয়েছে, যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ আলস্টার, কানাডার নিউ ব্রান্সউইক ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস সাউথমোস্ট কলেজ, ব্রাউনসভিল এবং টেক্সাস ইউনিভার্সিটি, ক্লার্কসন ইউনিভার্সিটি-নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাজ্যের ব্র্যাডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ফ্রান্সের লুমিয়ের লিয়ন ২ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ওয়াক্কানাই হোকুসেই গাকুয়েন ইউনিভার্সিটি (জাপান)।
তড়িৎপ্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সিলিকন ইন্ডাস্ট্রি বিষয়ে সেমিনার। ছবি: ইউআইইউ
২০০৪ সালের জানুয়ারিতে প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত দুই দশকে UIU এর তড়িৎপ্রকৌশল বিভাগ দেশসেরা ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগগুলির মধ্যে একটিতে রূপ নিয়েছে। এ পর্যন্ত বিভাগ থেকে প্রায় ২ হাজার গ্র্যাজুয়েট বের হয়েছে। শিক্ষার্থীদের হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার ভিত্তিক ব্যবহারিক প্রকল্প নিতে উৎসাহিত করার জন্য এখানে রয়েছে সর্বাধুনিক সরঞ্জাম এবং যন্ত্র দ্বারা সজ্জিত ১৩টি ল্যাব। এছাড়া শিক্ষার্থীরা পাচ্ছেন ক্যাডেন্স সফ্টওয়্যারসহ VLSI ল্যাবে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ফ্যাকাল্টিদের থেকে শেখার বিশ্বমানের সুবিধা।
তড়িৎপ্রকৌশল বিভাগের একজন শিক্ষার্থী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমি ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়তে আগ্রহী ছিলাম। তাই ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির তড়িৎপ্রকৌশল বিভাগে ভর্তি হই। ইউআইইউ'র সব থেকে ইতিবাচক দিক হলো, এখানকার সিনিয়র ফ্যাকাল্টিরা অনেক বেশি হেল্পফুল। বিভিন্ন ল্যাবের মাধ্যমে অ্যাকাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি প্রাকটিকালি বিস্তারিত জানার সুযোগ পাই।
আরেক শিক্ষার্থী বলেন, UIU এর তড়িৎপ্রকৌশলের ল্যাবগুলো অনেক বেশি সমৃদ্ধ। একইসাথে প্রজেক্ট ল্যাব, সার্কিট ল্যাব এবং VLSI ল্যাবসহ এখানে উল্লেখযোগ্য কিছু বাড়তি সুযোগ পাওয়া যায়। যেটা অন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পায় না। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও গ্র্যাজুয়েশন শেষে আমাদের এই ল্যাবরেটরিগুলোতে এসে প্রশিক্ষণ নেয়। এখানে VLSI ল্যাবে VTA এর ন্যাশনাল লেভেলের ট্রেইনিংসমূহ উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে সেমকিন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রিতে যোগ্য লোকের অনেক সংকট, যা পূরণে আমাদের VTA ট্রেইনিং সেন্টার কাজ করে যাচ্ছে। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি বলব, আমাদের জন্য এটা বিশেষ পাওয়া।
এই শিক্ষার্থী আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব গবেষণা কেন্দ্র আছে, যেখানে ফ্যাকাল্টিরা সরাসরি শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করেন। উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন এসব ফ্যাকাল্টিদের সহচার্য আমাদের শেখার ক্ষেত্রে বাড়তি অনুপ্রেরণা যোগায়। আরেকটি দিক হলো, তড়িৎপ্রকৌশল বিভাগের সাবেক ও বর্তমানদের মধ্যে একটা আন্তরিক সম্পর্ক আছে। যাঁরা গ্রাজুয়েশন শেষ করে বিভিন্ন টপ লেভেলের প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভালো পজিশনে আছেন, তারাও আমাদের প্রফেশনালি ভালো করতে হেল্প করেন। এসব সুবিধা পেতে চাইলে আমি নতুনদের বলব তোমরা ক্যাম্পাসে আস। UIU তোমাদের বাড়তি কিছু দেবে।
তড়িৎপ্রকৌশল বিভাগের প্রধান প্রফেসর খালেদ মাসুকুর রহমান বলেন, আমরা যদি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও দেখি, সরকারি বেসরকারি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে তড়িৎপ্রকৌশল বিভাগ রয়েছে। প্রতি বছর এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রচুর গ্রাজুয়েটও বের হচ্ছে। কিন্তু চাকরির বাজারে ইন্ডাস্ট্রিগুলো গ্র্যাজুয়েটদের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা পাচ্ছে না। ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে অ্যাকাডেমিয়ার কাছে সবচেয়ে বড় অভিযোগ এটাই।
এই অধ্যাপক আরো বলেন,
পুথিগত বিদ্যা দিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টর চলে না। এই শূন্যতা কাটাতে UIU এর তড়িৎপ্রকৌশল বিভাগ ১২টি আউটকাম ইন্ডিকেটর নির্ধারণ করে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যেখানে প্রজেক্ট ডিজাইন থেকে শুরু করে মডার্ন টুল ব্যবহার, বিশ্লেষণ দক্ষতা, সোসাইটি নিয়ে চিন্তা করা, নৈতিকতা, যোগাযোগ দক্ষতা, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, টিম ওয়ার্ক এবং উদ্ভাবনের মতো দক্ষতাকে গুরুত্ব দেয়া হয়।
তিনি আরো বলেন, আমরা এসব উদ্যোগের ফলাফলও পাচ্ছি। ইন্ডাস্ট্রিতে UIU থেকে বের হওয়া গ্র্যাজুয়েটদের ফিডব্যাক ইতিবাচক আসছে। কারণ আমরা ইন্ডাস্ট্রির চাহিদা অনুযায়ী সবগুলো ইন্ডিকেটরকে সামনে রেখে জ্ঞানভিত্তিক কারিকুলামের সাথে ইন্ডাস্ট্রি ভিজিট, ইন্টার্নশিপ এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় গ্র্যাজুয়েটদের অংশ নেয়াকে গুরুত্ব দিচ্ছি। প্রতিনিয়ত এই ধারা আরো গভীর হচ্ছে। ফলে মার্কেটের চাহিদা অনুযায়ী বেটার গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছে। আবার দেশের নামকরা ফ্যাকাল্টিদের সমন্বয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় অন্য যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে আমি মনে করি UIU তে পিএইচডি ডিগ্রিধারী ফ্যাকাল্টির হারও বেশি, যার সরাসরি সুফল পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
এই অধ্যাপকের ভাষ্য, UIU এর তড়িৎপ্রকৌশল বিভাগ থেকে বাইরে উচ্চশিক্ষার জন্যও শিক্ষার্থীরা যাচ্ছেন। তারা ফিরে এসে আবার দেশের বড় প্রতিষ্ঠানগুলোতে লিডিং পজিশনে আছেন। এটা UIU এর জন্য গর্বের। কারণ দেশের অগ্রগতিতে গ্র্যাজুয়েটরা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন।
তড়িৎপ্রকৌশল বিভাগের পরিধি নিয়ে প্রফেসর মাসুকুর রহমান বলেন, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এমন একটা সেক্টর তড়িৎপ্রকৌশল, যার পরিধি সমাজ এবং রাষ্ট্রের সব সেক্টরে রয়েছে। আগামীতে তথ্যপ্রযুক্তির প্রভাব যত বাড়বে এই বিভাগের গ্রহণযোগ্যতা এবং ক্ষেত্র ততই বৃদ্ধি পাবে। ফলে যারা তড়িৎপ্রকৌশল পড়ছে, ক্যারিয়ার হিসেবে এই সাবজেক্টের গুরুত্ব অনেক বেশি। নতুন শিক্ষার্থীদের জন্য বলব, UIU একটা গ্রিন ক্যাম্পাস। যেটা শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ আকর্ষণীয়। পাশাপাশি দেশের স্বনামধন্য ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের সহচার্যে থেকে শিক্ষার্থীরা সরাসরি শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে।
অধ্যাপক মাসুকুর রহমান আরো উল্লেখ করেন, UIU এর তড়িৎপ্রকৌশল রিনিউয়েবল এনার্জি এবং VLSI সহ বেশকিছু উন্নত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে, যেটা শিক্ষার্থীদের বাড়তি কিছু শিখতে এবং জানতে সহায়তা করে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশেষ প্রকল্পের আওতায় এখানে বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্পে অর্থায়ন করা হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা স্নাতক পর্যায় থেকেই গবেষণার ধারণা পায়। গবেষণার এই অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের প্রফেশনাল পর্যায়ে এগিয়ে যেতে অনেক বেশি সহায়তা করে।