কারিগরিতে শিক্ষার্থীদের কোয়ালিটি নিশ্চিত করতে চাই, সংখ্যা বাড়ানো উদ্দেশ্য নয়
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:৩৮ PM , আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:৪৮ PM

বলা হয়ে থাকে কোনো শিক্ষার্থী বা ব্যক্তি যদি কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করে থাকেন তাহলে তাকে পেশা নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। বরং সে নিজেই অর্জিত শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে স্বাধীনভাবে পেশা খুঁজে নিতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে মূল বিবেচ্য বিষয় হলো দক্ষতা। বাংলাদেশের মেতো স্বল্পোন্নত দেশে কারিগরি শিক্ষা মহাগুরুত্বপূর্ণ হলেও এতদিন এ সেক্টর যথাযথ মান নিশ্চিত কিংবা দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে বারবার প্রশ্নে মুখে পড়েছিল।
সর্বশেষ পতিত আওয়ামী সরকারের আমলে নকল সনদ তৈরি, অর্থের বিনিময়ে জাল সার্টিফিকেট প্রদানসহ অসংখ্য অনিয়মে মুখ থুবড়ে পড়ে কারিগরি শিক্ষার মান। প্রশ্নের মুখে পড়ে অসংখ্য ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী দক্ষতা নিয়ে। যেখানে বোর্ডের সিস্টেম এনালিস্ট একেএম শামসুজ্জামানসহ জড়িত থাকার প্রমাণ মেলে খোদ বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আলী আকবর খানের। এসব অপকর্ম ফাঁস হওয়ার পর প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কী এতদিন মানহীন জনশক্তি তৈরি হয়েছিল এই সেক্টরে। সেই প্রশ্নের সমাধান খুঁজতে এবার একগুচ্ছ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড।
প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রকিব উল্লাহ জানান, পুরোনো অনিয়মের দায় গুছিয়ে এবার মান রক্ষার পথে হাঁটতে চায় বোর্ড। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, আমরা একগুচ্ছ উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছি। আশা করছি এগুলো বাস্তবায়ন হলে কারিগরি শিক্ষার মান অনেক এগিয়ে যাবে। আমরা শিক্ষার্থীদের কোয়ালিটি নিশ্চিত করতে চাই, সংখ্যা বাড়ানো উদ্দেশ্য নয়।
কারিগরি বোর্ডের উল্লেখযোগ্য উদ্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে, ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি। বর্তমান নিয়মে প্রথম পর্বের ভর্তিতে শিক্ষার্থীরা জিপিএ অনুযায়ী ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন। তবে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হতে হবে বলে জানিয়েছেন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো: রকিব উল্লাহ।
বোর্ডের অন্য উদ্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীদের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিতে ডিজিটাল সেন্ট্রাল মনিটরিং সিস্টেম। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে সব শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুমে এসে শিক্ষকের সহায়তায় নির্দিষ্ট ডিভাইসে নিজেদের ফিঙ্গার দেবেন। এই তথ্য সরাসরি সার্ভারে চলে যাবে। শিক্ষার্থীদের এই উপস্থিতির হারের উপর ভিত্তি করে চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসার অনুমতি পাবেন। বোর্ড সংশ্লিষ্টরা জানান, শিক্ষার্থীদের মান নিশ্চিতে নতুন এ প্রযুক্তি সংযুক্তির কথা ভাবছে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। যদিও বিষয়টি এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের উদ্যোগ রয়েছে। আলোচনার ভিত্তিতে বিষয়টাকে বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা শিক্ষার্থীদের গুণগত দক্ষতা নিশ্চিত করতে চাই। বিষয়টি যেন এমন না হয়, যে কোনো শিক্ষার্থী ক্লাসে এসে বা না এসে থিওরেটিক্যাল জ্ঞান লাভ করে পার পেয়ে যাবে। বরং আমরা শিক্ষার্থীদের বাস্তবিক দক্ষতাকে বাড়াতে কাজ করছি।
এদিকে ঘুষ জালিয়াতি করে যারা জাল সনদ নিয়েছিলেন ‘ফরেনসিক অডিটের’ মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করার কাজও প্রায় শেষের দিকে বলে জানিয়েছেন বোর্ড চেয়ারম্যান। দ্রুত সময়ে জাল সনদগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো বাতিলের কাজ করছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। জানা গেছে এই কাজে সহযোগিতা করছে বুয়েটের একটি টিম।
চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের ফরেনসিক তদন্তের কাজ প্রায় শেষের পথে। আশা করছি এক মাসের মধ্যে বিষয়টি সুরাহা হয়ে যাবে। ফরেনসিক রিপোর্ট হাতে আসলে সে অনুযায়ী আমরা বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের তথ্য যাচাই বাছাইয়ের জন্য চিঠি পাঠাবো। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেও এ সংক্রান্ত চিঠি যাবে। যারা জাল সনদ নিয়ে কর্মরত আছেন, প্রক্রিয়ায় সেটা খুব সহজে চিহ্নিত হয়ে যাবে। ফলে যারা দুর্নীতির সাথে জড়িত ছিলেন তাদের সবাই আইনের মুখোমুখি হবেন।
প্রকৌশলী মো. রকিব উল্লাহ আরো বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের দক্ষতা নিয়ে কাজ করছি। খুব দ্রুত সার্বিক অগ্রগতি দেখা যাবে। আমাদের লক্ষ্য হলো একজন শিক্ষার্থী যতটুকু শিখবেন সেটার উপর ভিত্তি করে যেন তিনি নিজ উদ্যোগে কাজ করতে পারেন। এখনো আমাদের অবস্থা এমন যে, সেক্টরভিত্তিক শিক্ষার্থীরা উপযুক্ত দক্ষতা ছাড়াই জব মার্কেটে যাচ্ছে। ফলে তারা একদিকে যেমন দক্ষতা প্রমাণে ব্যর্থ হচ্ছেন, অপরদিকে ইন্ডাস্ট্রিগুলো ক্ষতির মুখে পড়ছে। কারিগরি শিক্ষায় সেক্টরভিত্তিক দক্ষতা নিশ্চিত করে আমূল পরিবর্তন আনাই বোর্ডের লক্ষ।