মায়ের স্বপ্নপূরণে ভর্তি প্রস্তুতি, একই সাথে ঢাবির ৩ ইউনিটে সুযোগ পেলেন মিম

হাবিবা নুসরাত মিম
হাবিবা নুসরাত মিম  © টিডিসি ফটো

খুলনার সরকারি মুজিব মেমোরিয়াল সিটি কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী হাবিবা নুসরাত মিম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে ১ম বর্ষ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষায় কলা ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় ১৩ তম স্থান, বিজ্ঞান ইউনিটে ১৪ তম স্থান এবং ব্যবসা ইউনিটে ৫ম স্থান অধিকার করেন। ভর্তি পরীক্ষায় নিজের সাফল্যের গল্প নিয়ে মুখোমুখি হয়েছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের। তার কথাগুলো শুনেছেন— জান্নাতুল ফেরদৌস

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে আপনার অনুপ্রেরণা কি ছিল?
হাবিবা নুসরাত মিম: আমার অনেক সিনিয়রদের দেখতাম তারা ভালো ভালো ফলাফল করে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন। তাদের দেখে আমারও ইচ্ছে হতো আমিও একদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বো বা কোন ভালো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বো। অনুপ্রেরণা বলতে এখানে এছাড়াও আমি আমার আম্মাকে বলব কারন আমার আম্মু ৮০ কিলোমিটার রাস্তা যাতায়াত করে শিক্ষকতা করতেন এবং বাসায় এসে আমার খেয়াল রাখতেন, আমার পড়াশোনা দেখতেন এছাড়াও সংসারের যত কাজ ছিল সব করতেন। তার এই কষ্টটা আমার সব সময় অনুপ্রেরণা যোগাত আমি চিন্তা করতাম এই মানুষটার স্বপ্ন পূরণ করতেই হবে। তাই তার স্বপ্নপূরণ এবং আমার নিজের স্বপ্ন পূরণই ছিল এডমিশন জার্নিটা আমার অনুপ্রেরণা। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রস্তুতিকালীন সময়ে কিভাবে পড়ালেখা করতেন?
হাবিবা নুসরাত মিম: আমার এডমিশনের সময় আমি কখনো ঘড়ি ধরে পড়িনি। সব সময় টপিক ধরে ধরে পড়ার চেষ্টা করতাম। আমি এভাবে ঠিক করতাম যে আজকে আমি এই টপিক গুলো পড়বো এবং এই টপিকগুলো শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি পড়া থেকে উঠতাম না। এছাড়াও আমি একদিনের পড়া পরের দিনের জন্য ফেলে রাখতাম না এই নিয়মটা আমাকে খুব সাহায্য করেছে এডমিশনের সময়। ফলে যখন রিভাইস দিতে গিয়েছি তখন দেখেছি যে আমার অনেক পড়া আগে থেকেই পড়া থাকতে এবং সবকিছু মনে থাকছে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রস্তুতি সময়ে অনেক সময় হতাশায় কাজ করে পড়া নিয়ে, এই সময়গুলোতে কিভাবে নিজেকে সামলে উঠতেন? 
হাবিবা নুসরাত মিম: আমার মনে হয় এই পরিস্থিতির শিকার প্রত্যেকটা এডমিশন ক্যান্ডিডেটই হয়ে থাকে। পরীক্ষার আগে পর্যন্ত আমার মনে হতো যে আমি গত চার মাস কি পড়েছি? কিছুই তো আমি পারিনা। কোচিং এ যখন পরীক্ষা দিতাম তখন দেখতাম আমার অনেক বন্ধুবান্ধব আমার থেকেও ভালো ফলাফল করত। তখন নিজেকে এটাই বোঝাতাম যে এখানে ভালো ফলাফল না করলেও ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় আমি ভালো ফলাফল করবোই। কোচিং এর রেজাল্ট টার্গেট করে কখনো করতাম না। আমার দুর্বল জায়গা গুলো খুঁজে বের করে করে আমি সেগুলো পূরণ করার চেষ্টা করেছি। এসব অনেক হতাশা কাজ করলেও আমার পরিবার আমাকে অনেক সাপোর্ট দেয় সেসময়, বিশেষত আমার মা। তিনি আমাকে বলতেন তুমি যে ফলাফলই করো না কেন চান্স পাও বা না পাও তাতে কিছু যায় আসে না। তুমি যেখানেই যাও ভালো কিছু করবে। নিজেকে বিকশিত করবে। এই অনুপ্রেরণা এবং স্বস্তিটা ছিল বলেই হয়তো আমি ভর্তি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পেরেছি। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: পরীক্ষার হলে কিভাবে কৌশল অবলম্বন করে পরীক্ষা দিয়েছেন?
হাবিবা নুসরাত মিম: প্রস্তুতিকালীন আমি যে মডেল টেস্টগুলো দিতাম সেগুলোর প্রত্যেকটা কেই আমি ঢাবির পরীক্ষা হিসেবে মনে করে দিতাম। তাই পরীক্ষাকালীন সময় আমার খুব একটা প্রেশার মনে হয়নি। তবে একেবারেই যে প্রেশার মনে হয়নি তা নয় আমি সেখানে সময় ব্যবস্থাপনায় কিছুটা উল্টাপাল্টা করে ফেলেছিলাম। তবে আমি বলব প্রস্তুতিকালীন সময়ে প্রত্যেকটা পরীক্ষা কেই যদি ঢাবির ভর্তি পরীক্ষা হিসেবে ধরে নেওয়া হয় তাহলে সে সময় গিয়ে মানসিক চাপটা একটু কম মনে হয় এবং মাথা ঠান্ডা রাখা যায়। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কোন বিষয়ে পড়ার ইচ্ছা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি? 
হাবিবা নুসরাত মিম: আমার এটা আইন বিষয় নিয়ে পড়ার কারণ ছোট থেকেই আমার আলাদা ইউনিফর্মের প্রতি একটা আকর্ষণ  ছিল। এছাড়াও আমি একটা স্বাধীন পেশায় যুক্ত হতে চেয়েছিলাম। ছোটবেলায় আমার ডাক্তার হওইয়ার স্বপ্ন ছিল কিন্তু কাটাকুটি ভয় পেতাম বলে সেই স্বপ্নটা বাদ দিয়ে দেই। ডিবেট করতাম বলে সবাই বলতো যে আইন নিয়ে পড়তে পারি, সাদা ইউনিফর্ম না হোক কালো ইউনিফর্ম পরতে পারি। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ঢাবিতে সুযোগ না হলে পরিকল্পনা কি ছিল?
হাবিবা নুসরাত মিম: ঢাবি বাদেও আমার জাহাঙ্গীরনগর এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভালো পজিশন এসেছিল। তো ইচ্ছে ছিল এই দুইটার কোথাও একটা ভর্তি হবো এছাড়াও আমি গুচ্ছের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: পরবর্তীতে যারা পরীক্ষা দিয়ে তাদের জন্য যদি কিছু বলতেন। 
হাবিবা নুসরাত মিম: অনেকে মনে করে চার মাস পড়ে ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করা সম্ভব, কিন্তু এটা কখনোই সম্ভব নয়। কারণ ভর্তি পরীক্ষার মূল বিষয়টি হচ্ছে পড়ালেখার মৌলিক বিষয়গুলো আর এগুলো কখনো চার মাস পরে ভিত্তি গড়ে তোলা সম্ভব নয়। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলবো যে ইন্টার থেকেই একটু একটু করে পড়াশোনা শুরু করতে। দিনে আধা ঘন্টা হোক, ২০ মিনিট হোক তখন থেকে যদি একটু একটু করে রাখা যায় তাহলে এই চার মাসে এসে এটা খুব সাহায্য করে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence