‘এক সাবজেক্ট একটানা ৭-১০ দিন পড়তাম’—এই তত্ত্বে পুলিশ ক্যাডার নাজমুল

নাজমুল সাহাদাৎ
নাজমুল সাহাদাৎ  © টিডিসি ফটো

৪৩তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুল সাহাদাৎ। কুমিল্লায় তার বেড়ে উঠা। ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে শেষ করেছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা।

এরপর নোবিপ্রবি থেকে উচ্চশিক্ষা শেষ করেন তিনি। বর্তমানে কর্মরত আছেন ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডে (ডেসকো) কর্মরত আছেন। তিনি তার নিজের সাফল্যের গল্প নিয়ে মুখোমুখি হয়েছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের। তার কথাগুলো শুনেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মো. ইমাম হোসেন

শুরুতে আপনার নিজের সাফল্য নিয়ে বলুন।
নাজমুল সাহাদাৎ: আল্লাহ তাআলার ইচ্ছায় এবং মা-বাবা, সহধর্মিণী ও পরিবারের সকলের দোয়ার আমার ২য় বারের চেষ্টাতে পুলিশ ক্যাডার পেয়েছি। আমার অবস্থান ছিলো ৬৪তম। যা আমার ও আমার পরিবারের সকলের স্বপ্ন ছিলো। এই অনুভূতি এক কথায় অনন্য।

আপনার শৈশব ও কৈশোর সম্পর্কে জানতে চাই।
নাজমুল সাহাদাৎ: ছোটবেলা থেকেই কুমিল্লাতে বড় হয়েছি। শৈশব ও কৈশোরের দিনগুলোতে মিশ্র অনুভূতি রয়েছে। পড়াশোনা, খেলাধুলা, সারাদিন ফেসবুক চালানো—এমনকি সফল প্রেম করারও অনুভূতি রয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে উপভোগ্য একটা সময় পার করে এসেছি।

কখন থেকে বিসিএস প্রস্তুতি শুরু করেছেন, কার থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন?
নাজমুল সাহাদাৎ: বিসিএস প্রস্তুতি বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করার পর ২০২০ সালের আগস্ট মাস থেকে শুরু করি। প্রথম এবং সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা দিয়েছিলো আমার তখনকার প্রেমিকা ও বর্তমান সহধর্মিণী। পাশাপাশি আমার বাবা-মায়ের খুব ইচ্ছা ছিলো, তাদের ছেলে বিসিএস ক্যাডার হবে। এছাড়াও পরিবারের সবাই আমাকে খুব উৎসাহ দিয়েছে।

৪৩তম আপনার কততম বিসিএস ছিল?
নাজমুল সাহাদাৎ: ৪১তম বিসিএসে প্রথম বারের মতো অংশগ্রহণ করি। এরপর ৪৩তম ছিলো ২য় বিসিএস। এই বিসিএসেই সাফল্য পেয়েছি।

প্রস্তুতির সময়টা কেমন ছিল?
নাজমুল সাহাদাৎ: প্রস্তুতির জন্য ৬ মাস টার্গেট নিয়েছিলাম। ৬ মাসে প্রিলির জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। আমি মনে করি, প্রথম শুরুর প্রিপারেশনটা খুব ভালো করে নেওয়া উচিত। আপনার ভিত্তিটা ভালো হলে আপনি খুব তাড়াতাড়ি উপরে উঠতে পারবেন। তাই প্রথমে শর্টকাট খুঁজবেন না। প্রথমে প্রিলির প্রিপারেশনটা ভালো হলে আপনার রিটেনেও সেটা অনেক সহায়ক হবে।

প্রস্তুতির বিশেষ কোনো টেকনিক ছিল কিনা, কোন বিষয়টি আপনাকে প্রস্তুতিতে এগিয়ে রেখেছিল?
নাজমুল সাহাদাৎ: টেকনিক যার যার নিজস্ব ব্যাপার। আপনি প্রথমে শর্ট আউট করবেন, আপনি কোন বিষয়ে স্ট্রং ও কোন বিষয়ে দুর্বল। আমি বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম। এছাড়া ভার্সিটি ২য় বর্ষ থেকেই অনেক টিউশন করেছি। এসব বিষয়গুলো আমাকে এগিয়ে রেখেছিল। এসব কারণে মূলত আমার বেসিকটা স্ট্রং ছিল।

আর আমি বিজ্ঞান, গণিত, আইসিটি, ইংরেজি গ্রামার, বাংলা গ্রামার খুব ভালো পারতাম। তবে আমি দুর্বল ছিলাম সাধারণ জ্ঞানে। তাই প্রস্তুতি শুরু করি সাধারণ জ্ঞান দিয়ে। এক পর্যায়ে সাধারণ জ্ঞানে ভালো একটা দক্ষতা হয়ে যায়।

আর প্রস্তুতির শুরুতে আমি এক সাবজেক্ট একটানা রুটিন করে ৭-১০ দিন ধরে পড়তাম। একটানা একটা বিষয় পড়া একদিন একাধিক সাবজেক্ট পড়ার চেয়ে বেশি উপকারী। এই পড়াটা আপনার ব্রেইন দীর্ঘদিন ধারণ করে রাখবে। এক সাবজেক্ট একটানা রুটিন করে নির্দিষ্ট টার্গেট করে পড়াটাই আমার জন্য একটি কার্যকরী টেকনিক ছিলো।

পরিবার থেকে কেমন সাপোর্ট পেয়েছেন? সর্বোচ্চ সাপোর্ট কে দিয়েছেন?
নাজমুল সাহাদাৎ: পরিবার সবাই খুব সাপোর্ট দিয়েছে সবসময়, সবার আস্থা ছিলো আমার উপর যে আমি একদিন বিসিএস ক্যাডার হতে পারবো। সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট দিয়েছে আমার মা-বাবা ও সহধর্মিণী এবং ভাই-বোন। আমার মা-বাবা ছোট কাল থেকেই আমাদের কে কষ্ট করে লালন পালন করেছেন, বড় করেছেন, তাদের এক বিশাল স্বপ্ন আজ বাস্তবায়ন হয়েছে। তাদের এই খুশিটাই আমার জন্য এক বড় পাওয়া।

আমার সহধর্মিণী আমাকে সবসময় উৎসাহ দিয়েছে। পড়াশোনা করতে অনেক টাইম দিয়েছে। আমার সাথে রাত জেগে বসে থাকতো, যাতে আমি পড়াশোনা করতে গিয়ে একাকিত্ব ফিল না করি। মাঝেমধ্যে পড়াশোনার মাঝে মজাদার নাস্তা এবং চা কফি তৈরি করে নিয়ে আসতো। I think my parents & my prettiest lady deserve more appreciation on my success.

ক্যাডার চয়েজ কীভাবে দিয়েছিলেন?
নাজমুল সাহাদাৎ: এডমিন ও পুলিশকে প্রাধান্য দিয়েই ক্যাডার চয়েজ দিয়েছি। যেহেতু এই ২টিই আমার পছন্দের। 

যারা বিসিএস দিতে চান, তাদের প্রতি পরামর্শ কি থাকবে?
নাজমুল সাহাদাৎ: শুরুর প্রিপারেশনটা খুব ভালো করে নিতে হবে। শুরু ভালো হবে তো আপনি পরবর্তী সব ধাপে এগিয়ে থাকবেন। প্রিলি ভালো করে পড়লে অনেক কিছু রিটেনে কাভার হয়ে যায়। আর সব পড়তে যাবেন না। বাছাই করে পড়বেন। কঠিন জিনিস পরিহার করবেন। সহজ জিনিস বারবার পড়বেন, দেখবেন সফলতা আসবে। পরীক্ষায় কঠিন প্রশ্ন না পারলেও সেটা তেমন প্রব্লেম না। কিন্তু সহজ প্রশ্ন ভুল করলেই আপনার প্রিলির আশা শেষ হয়ে যাবে।

চাকরিপ্রার্থীদের বিসিএসকে একমাত্র লক্ষ্য বানানো কি ঠিক?
নাজমুল সাহাদাৎ: শুধু বিসিএসকে একমাত্র লক্ষ্য বানাবেন না। পরিশ্রম, ভাগ্য, রিজিক—সবকিছু এক সূত্রে আসলেই সফলতা আসবে। তাই বিসিএসের পাশাপাশি বিকল্প চাকরিরও চিন্তা রাখতে হবে।

আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাই।
নাজমুল সাহাদাৎ: ভবিষ্যতে একজন সৎ মানুষ হিসাবে দেশ ও দেশের জনগণের সেবা করতে চাই। পরিবার-পরিজনের সাথে সুন্দর সাবলীল জীবনযাপন করতে চাই।


সর্বশেষ সংবাদ