পোর্ট অ্যান্ড শিপিং ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কেন পড়বেন, কী পড়ানো হয়
যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বৈশ্বিক কর্মক্ষেত্র হয়ে উঠছে বৈচিত্র্যময়। নতুন দিনের বিশ্ব তাই ক্রমাগত ধাবিত হচ্ছে মাল্টিডিসিপ্লিনারি শিক্ষার দিকে। আর ভবিষ্যতের প্রয়োজন মেটাতে মাল্টিডিসিপ্লিনারি শিক্ষার এক অনন্য উদাহরণ পোর্ট অ্যান্ড শিপিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগ।ম্যানেজমেন্ট, মেরিটাইম অপারেশন ও লজিস্টিকস এর তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক বিষয়সমূহ নিয়ে গঠিত পোর্ট অ্যান্ড শিপিং ম্যানেজমেন্ট ডিসিপ্লিনটি। এখনও বাংলাদেশে তেমন পরিচিতি না পেলেও বহির্বিশ্বে রয়েছে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা।বিশেষত বৈশ্বিক বাণিজ্যের ৯০ ভাগই বস্তুত সমুদ্র বাণিজ্য হওয়ায় পোর্ট অ্যান্ড শিপিং ম্যানেজমেন্টের গুরুত্ব সামুদ্রিক বাণিজ্যের মতোই অপরিসীম। গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি তুলে ধরেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের পোর্ট এন্ড শিপিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ মুজাহেদ হোসেন চৌধুরি। তার কথা গুলো তুলে ধরেছেন শাহ বিলিয়া জুলফিকার-
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: পোর্ট অ্যান্ড শিপিং ম্যানেজমেন্ট বিষয়টির জয়যাত্রা কবে থেকে শুরু হয়?
মুজাহেদ হোসেন: বাংলাদেশ একটি মেরিটাইম ন্যাশন হওয়া সত্ত্বেও সুনীল অর্থনীতিতে পোর্ট অ্যান্ড শিপিং এর ভূমিকা নিয়ে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘকাল কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখেনি। তাই ২০১৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়ে মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু হয়। ইন্ডাস্ট্রি ও একাডেমিয়াতে জনপ্রিয়তা পাওয়ায় ২০১৮ সালে এ বিষয়ে ব্যাচেলর প্রোগ্রাম চালু হয়। বর্তমানে এর ৫ম ব্যাচ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করেছে। উল্লেখ্য যে, ২০২৩ সালের মার্চে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পোর্ট এন্ড শিপিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগ চালুর সিদ্বান্ত নেয়। এছাড়া কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ শিপিং এন্ড মেরিটাইম সায়েন্স বিভাগের অধীনে গত কয়েক বছর যাবত ব্যাচেলর ও মাস্টার্স প্রোগ্রাম পরিচালনা করে আসছে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কী কী বিষয়ে পাঠদান করানো হয়?
মুজাহেদ হোসেন: ইন্ডাস্ট্রির চাহিদা বিবেচনায় রেখে এ বিভাগের জন্য তৈরি করা হয়েছে সমসাময়িক ও আন্তর্জাতিক মানের সিলেবাস। সাধারণ বিবিএ ডিগ্রিতে পঠিত সকল বিষয়ের পাশাপাশি রয়েছে মেরিটাইম অপারেশন এবং লজিস্টিকস সংক্রান্ত নানাবিধ বিষয়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো লজিস্টিকস ম্যানেজমেন্ট, কার্গো অপারেশন অ্যান্ড ফ্লিট ম্যানেজমেন্ট, পোর্ট অ্যান্ড টার্মিনাল অপারেশন, মেরিটাইম ইকোনমিকস, ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যান্ড কমার্শিয়াল ল, মেরিটাইম ট্রান্সপোর্ট জিওগ্রাফি, অপারেশন ম্যানেজমেন্ট, মেরিন ইন্স্যুরেন্স, পোর্ট প্ল্যানিং অ্যান্ড ডিজাইন, শিপিং অ্যান্ড পোর্ট ফাইন্যান্স, এয়ার ফ্রেইট ম্যানেজমেন্ট, ট্রান্সপোর্ট সিকিউরিটি অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট এবং শিপ ব্রোকারিং অ্যান্ড চার্টারিং এর মতো ব্যবহারিক বিষয়াবলি। এর পাশাপাশি সকল শিক্ষার্থীকে তিনটি প্রফেশনাল শর্ট কোর্সের মাধ্যমে ইন্ডাস্ট্রির উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান আহরণেরও সুযোগ দেওয়া হয়।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এই বিষয়ে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ কেমন?
মুজাহেদ হোসেন: উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে সুবর্ণ সুযোগ। উচ্চশিক্ষা ও গবেষণাকে আরও এগিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য, চীন এবং ভারতের ১২টি মেরিটাইম সংক্রান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এছাড়াও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে শিক্ষাবৃত্তির ক্ষেত্রেও এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত সুযোগ।
বিভাগটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি হওয়ায় একই সাথে মেরিটাইম ম্যানেজমেন্ট, মেরিটাইম অ্যাফেয়ারস, মেরিটাইম অপারেশনস, মেরিটাইম লজিস্টিকস অ্যান্ড শিপিংসহ নানা বিষয়ে স্নাতোকোত্তর অথবা পিএইচডি করার সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন, ডেনমার্ক, নরওয়ে, জার্মানি, চীন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও তুরস্কে ভালো সুযোগ রয়েছে। তবে শুধু মেরিটাইম সেক্টরে সীমাবদ্ধ নয়, সুযোগ রয়েছে সাপ্লাই চেইন এবং লজিস্টিকস ফিল্ডে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, নরওয়ে, ডেনমার্ক ও জার্মানিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ রয়েছে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: চাকরির ক্ষেত্র ও সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে বলুন?
মুজাহেদ হোসেন: পোর্ট অ্যান্ড শিপিং ম্যানেজমেন্ট বিষয়টি নতুন হলেও চাকরির ক্ষেত্র রয়েছে বিশাল। যেখানে দক্ষ জনশক্তির চাহিদা সর্বদা বিরাজমান। দেশে মাল্টিন্যাশনাল ও ডমিস্টিক শিপিং কোম্পানি একাধিক জাহাজের সামগ্রিক রক্ষণাবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধায়নের দায়িত্বে নিয়োজিত। দেশে ৫০০এর বেশি মাল্টিন্যাশনাল ও ডমিস্টিক শিপিং কোম্পানি রয়েছে, যারা একাধিক জাহাজের সামগ্রিক রক্ষণাবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধায়নের দায়িত্বে নিয়োজিত। এক্ষেত্রে জাহাজের ক্রু নির্বাচন, বাংকারিং ব্যবস্থাপনা, ফরওয়ার্ডারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা, গতিপথ নির্ণয়সহ সার্বিক দায়িত্ব শিপিং কোম্পানি সমূহের উপর ন্যস্ত। এ দায়িত্ব পালনার্থে ভবিষ্যৎ দক্ষ জনবলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হতে যাচ্ছে পোর্ট অ্যান্ড শিপিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তাছাড়া রয়েছে ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং কোম্পানিতে কাজ করার সুবর্ণ সুযোগ। বাংলাদেশে মাল্টিন্যাশনাল ও ডমিস্টিক ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং কোম্পানির সংখ্যা ১১৩১টি যাদের মূল কাজ হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল কার্গো বা ফ্রেইট শিপমেন্ট।
এছাড়া আমাদের দেশে চট্টগ্রাম, মোংলা, পায়রা এবং মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দর রয়েছে। বন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল অপারেটিং এর দায়িত্বে থাকে দেশি-বিদেশি বেসরকারি টার্মিনাল অপারেটর। পোর্ট ম্যানেজমেন্ট শিক্ষায় একমাত্র বিভাগ হওয়ার কারণে এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা সরকারি সমুদ্র বন্দরের পাশাপাশি মাল্টিন্যাশনাল টার্মিনাল অপারেটিং কোম্পানিতে চাকরি করতে পারবে। তাছাড়া ইংল্যান্ড কনটেইনার ডিপো,শিপ ব্রোকিং ও চার্টারিং, ফার্মাসিউটিক্যাল, রেডি মেইড গার্মেন্টস, লেদার প্রভৃতি ইন্ডাস্ট্রিতে কমার্সিয়াল (এক্সপোর্ট/ইম্পোর্ট) ম্যানেজার, শিপিং এন্ড ট্রেড ফাইনেন্সিয়ার হিসেবে ব্যাংক ও ননব্যাংকীয় ফাইনেনশিয়াল ইন্সটিটিউশন, মেরিন ইন্স্যুরেন্স এন্ড রিস্ক ম্যানেজার, ওয়ারহাউজ এন্ড ইনভেন্টরি ম্যানেজার, সাপ্লাই চেইন এন্ড লজিস্টিকস এনালিস্ট সহ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বিভিন্ন সেক্টরে এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাজ করার পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনাকে ধন্যবাদ।
মুজাহেদ হোসেন: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকেও ধন্যবাদ।