বই পড়ার মাধ্যমে দশ কোটি মানুষের জীবনে ১% পরিবর্তন আনতে চাই

আসাদুজ্জামান জয়
আসাদুজ্জামান জয়  © টিডিসি ফটো

বর্তমান সময়ে বই পড়তে ভালোবাসেন—এমন মানুষদের কাছে আসাদুজ্জামান জয় একজন জনপ্রিয় কন্টেন্ট ক্রিয়েটর। কনটেন্ট ক্রিয়েশনের পাশাপাশি তিনি বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগে পড়ালেখা করছেন। সম্প্রতি তিনি তার জীবনের নানা দিক নিয়ে গল্প করেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সাথে। তার কথাগুলো শুনেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের—তাওফিকুল ইসলাম হিমেল।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার শৈশব নিয়ে জানতে চাই। 
আসাদুজ্জামান জয়: আমার জন্ম গোপালগঞ্জে। তবে আমার স্কুল-কলেজ ও বেড়ে ওঠা সবকিছুই চট্টগ্রামে। আমি পরিবারের বড় ছেলে। আমার ছোট ভাই-বোন আছে।

আসলে ক্লাস টু-থ্রি থেকে আমার বইয়ের প্রতি বিশেষ এক ধরনের আকর্ষণ ছিল। তবে সে সময় তো বড়দের বইগুলো পড়তে পারতাম না। বাণিজ্য মেলায় যখন যেতাম তখন এক কোনায় বইয়ের দোকান থাকতো। সেখানে গিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতাম। তবে বাবা ওইভাবে ওই সময় কিনে দিত না।

আমার একজন ছোট মামা আছেন। তিনিও বই পড়তে পছন্দ করেন। বই পড়ার পাশাপাশি তিনি কবিতাও লিখতেন। ওই সময় আমি তার বইগুলোই পড়তাম। বিশেষ করে তার ক্লাসের বাংলা ও ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের বিভিন্ন ধরনের গল্প পড়তাম। ওইগুলোই অনেকবার করে পড়তাম। কারণ আমার কাছে বেশি বই ছিলো না।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার শিক্ষাজীবনের গল্প শুনতে চাই। 
আসাদুজ্জামান জয়: আমার স্কুল-কলেজ চট্টগ্রামে এবং স্কুল-কলেজে শেষ করে আমি ভর্তি হই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আমরা দেখেছি আপনি বিভিন্ন বইয়ের রিভিউ করে থাকেন। বই নিয়ে এ কাজের শুরুটা কীভাবে?
আসাদুজ্জামান জয়: আসলে আমি শৈশব থেকেই অনেক বই পড়তাম। বই পড়া আমার পছন্দ। যখন বড় বড় লোকদের দেখতাম, তখন আমার মনে হতো তারা নিশ্চয়ই অনেক বেশি পড়াশোনা করে অনেক বেশি বই পড়ে এ অবস্থানে এসেছেন। তাদের সম্পর্কে জানতে হলে অনেক বেশি বই পড়তে হবে। সেখান থেকেই আমার বইয়ের প্রতি এক ধরনের আকর্ষণ চলে আসে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কন্টেন্ট তৈরির মাধ্যমে আপনি এখন অনেকের কাছে পরিচিত মুখ। এ যশ-খ্যাতি কীভাবে বজায় রাখেন?
আসাদুজ্জামান জয়: আমি নিজেকে খুব বেশি জনপ্রিয় এখনো মনে করি না। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় কিছু মানুষ চিনতে পারেন, বেশিরভাগ মানুষই চেনেন না। তবে এটা সত্য, যখন অপরিচিত কেউ এসে পরিচয় দিয়ে কথা বলে এই বিষয়টা আমার খুব বেশি ভালো লাগে। আমার ভিডিওগুলো দেখে যদি কারো জীবনে একটু হলেও পরিবর্তন আসে, কেউ যদি একটিও বই কেনে বা পড়ে সেটাই আমার সার্থকতা।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বর্তমান সময়ে শুধুমাত্র কনটেন্ট তৈরি করে একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটর স্বচ্ছলভাবে চলতে পারেন কিনা?
আসাদুজ্জামান জয়: এটা আসলে বৈচিত্র্যময়। যদি কেউ খুব বড় লেভেলের কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হন, তাহলে তো তার জন্য এটা স্বাভাবিক। শুধু তিনি না আরও একাধিক লোককে তিনি আর্থিকভাবে সাপোর্ট করতে পারবেন। এজন্য দেখবেন অনেক কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের কিন্তু তাদের এ কাজের বাইরে কোনো কাজ করেন না। আবার অনেককে দেখবেন কনটেন্ট ক্রিয়েশনের পাশাপাশি ব্যবসাও করছেন।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বর্তমান প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের বইয়ের প্রতি ভালোবাসা তুলনামূলকভাবে একটু কম। তাদের উদ্দেশ্যে কি বলতে চান?
আসাদুজ্জামান জয়: আসলে বইয়ের প্রতি ভালোবাসা কম নয়। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে বই তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকা থেকে। তবে পৃথিবীতে যদি দুই ধরনের মানুষ আছে। একদল যারা বই পড়া পছন্দ করেন আরেকদল যারা বইপড়া পছন্দ করেন না। আসলে এ দুই ধরনের মানুষ কখনো এক হতে পারে না। 

আসলে পৃথিবীতে জন্ম নিলেই তো সবাই মানুষ হতে পারে না। একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য বিভিন্ন ধরনের শিক্ষামূলক ভিডিও দেখা, পডকাস্ট শোনা, বই পড়া এই বাহ্যিক বিষয়গুলো খুব বেশি জরুরি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার জীবনের এমন কিছু বলুন, যেটা আগে কখনো বলা হয়নি।
আসাদুজ্জামান জয়: আমি উচ্চমাধ্যমিকে খুবই বাজে  ফলাফল করেছিলাম। যার কারণে আমি অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় দিতে পারিনি। পরবর্তীতে আমাকে বিভাগ পরিবর্তন করতে হয়েছে। আমি ভর্তি পরীক্ষার সেই চার মাস অনেক বেশি পড়াশোনা করেছিলাম।

আসলে আমি সেরকম কোনো সিনিয়রদের মেন্টরশিপ পাইনি। যেহেতু আমি পরিবারের বড় ছেলে তাই তাই আমাকে দিকনির্দেশনা দেওয়ার মত তেমন কেউ ছিলেন না। তবে আমি বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় বা ইন্টারনেটের বিভিন্ন জায়গায় অনেক বড় বড় মেন্টর খুঁজে পেয়েছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এখন পর্যন্ত আপনি আপনার জীবনে কী কী প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন?
আসাদুজ্জামান জয়: প্রথমে যেটি মনে করতাম আমি তো আসলে দেখতে কোন সেলিব্রেটির মত না। মানুষ আমার ভিডিও দেখবে কিনা। তারপরে আস্তে আস্তে বই নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও বানানো শুরু করি।

কিছু প্রতিবন্ধকতা তো এসেছে। কিছু মানুষ কটু কথা বলেছে। তবে অধিকাংশ মানুষের অনুপ্রেরণা পেয়েছি। অনেক বড় বড় লেখক থেকে শুরু করে অনেক পাঠক আমাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। তবে আমার কনটেন্ট ক্রিয়েশন জার্নিতে আমাকে সব থেকে বেশি সাপোর্ট করেছে আমার বাবা-মা।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: পরবর্তী জীবনের লক্ষ্য কি, আপনার আইডল কে?
আসাদুজ্জামান জয়: দেশের অন্তত ১০ কোটি মানুষের জীবনে এক পার্সেন্ট হলেও ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসা। একটা অনেক বড় ধরনের ডিজিটাল লাইব্রেরি করা, যেটা উন্নত বিশ্বে দেখা যায়। বিভিন্ন ধরনের বুক স্টোর করা, যেটার মাধ্যমে নিজে ভালো থাকা এবং চারপাশের মানুষদেরকেও ভালো রাখা। একজন মুসলিম হিসেবে আমার আইডল সবসময় হজরত মুহাম্মদ (সা.)। আমি তার মতাদর্শ ধারণ করছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য ধন্যবাদ।
আসাদুজ্জামান জয়: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।


সর্বশেষ সংবাদ