শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক হবে ফ্রেন্ডলি, ফ্রেন্ড নয়

অধ্যাপক ড. আবুল মনসুর আহমেদ
অধ্যাপক ড. আবুল মনসুর আহমেদ  © টিডিসি ফটো

১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ অক্টোবর পালিত হয়ে থাকে বিশ্ব শিক্ষক দিবস। এদিন বিশ্বব্যাপী শিক্ষকদের অবদানকে স্মরণ করা হয়। বাংলাদেশে এবারেই প্রথম রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘শিক্ষক দিবস’ পালিত হচ্ছে। শিক্ষক দিবসে শিক্ষকবৃন্দের চাওয়া-পাওয়া, নানা অর্জন ও চিন্তা ভাবনার বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. আবুল মনসুর আহমেদ। তার কথাগুলো শুনেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের জান্নাতুল ফেরদৌস

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আন্তর্জাতিক শিক্ষক দিবস নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
ড. আবুল মনসুর আহমেদ: শিক্ষকদের বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। কুমার যেভাবে মাটিকে বিভিন্ন আকার দিয়ে তৈজসপত্র তৈরি করে শিক্ষক ঠিক সেভাবে জাতি গঠনে ভূমিকা পালন করেন। সামাজিক বিভিন্ন সমস্যা থেকে উত্তরণে শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধ বাড়ানোর ক্ষেত্রে সবাই কাজ করবে; সেটি আমি আজকের দিনে বলতে চাই।

আমরা হয়তো একটি কঠিন সময় অতিক্রম করছি, যেখানে অনেক ক্ষেত্রে মূল্যবোধের অবক্ষয় হচ্ছে। এ অবক্ষয় রোধ করতে হবে। জাতি হিসেবে আমরা যদি নিজেকে সমৃদ্ধ করতে চাই, তাহলে মূল্যবোধের সমন্বয় রেখে এগিয়ে যেতে হবে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শিক্ষকদের মানুষ গড়ার কারিগর বলা হয়—আমাদের শিক্ষকরা সেই বহুল কাঙ্ক্ষিত আলোকিত মানুষ তৈরি করতে পারছেন?
ড. আবুল মনসুর আহমেদ:
হ্যাঁ, আমি আশাবাদী মানুষ। শিক্ষকরা সে কারিগরি কাজ করে যাচ্ছেন। সে আলোকিত মানুষ সৃষ্টিতে কাজ করছেন। যার ফলে আজ আমরা সমাজে অনেক পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। সেখানে শিক্ষকরা আলোকিত মানুষ সৃষ্টি করছেন বলেই সমাজ এগিয়ে যাচ্ছে।

আমি মনে করি, আজকের এ শিক্ষক দিবসে যে শিক্ষক যে দায়িত্ব পালন করছেন—এই দায়িত্ব পালনে সহায়তা করার জন্য শিক্ষার্থীদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। আলোকিত মানুষ গড়ার ক্ষেত্রে শিক্ষক এককভাবে সে দায়িত্ব পালন করাটা কঠিন। শিক্ষার্থীদেরও কিছু নৈতিক দায়িত্ব আছে, সেগুলো মেনে চলা উচিত।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিৎ?
ড. আবুল মনসুর আহমেদ:
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্পর্কটি খুবই আন্তরিক হওয়া উচিত। এ সম্পর্কটা ফ্রেন্ডলি হতে হবে। তবে, ফ্রেন্ড নয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক একটি বন্ধুসুলভ জায়গায় থাকবে। যেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিথষ্ক্রিয়ায় যাবে। সবাই সবার অবস্থানে থেকে এ জায়গাটিকে সমৃদ্ধ করবে। এটিকে যদি অর্থবহ করা যায়, প্রোডাক্টিভ করা যায়, তাহলে আমরা আলোকিত মানুষ সৃষ্টির জায়গাটি আরও সমৃদ্ধ করতে পারবো।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শিক্ষক হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে আপনার স্বপ্ন কী, প্রাপ্তি কতখানি?
ড. আবুল মনসুর আহমেদ:
শিক্ষকতা জীবনে আমি সবসময় যে বিষয়টি খেয়াল রাখি তা হলো- শিক্ষার্থীদের পাঠদান, জ্ঞান বিতরণ এবং তাদের নৈতিক যে দিকগুলো সেগুলো। আমার মনে হয়, আমি একজন সফল শিক্ষক। এ বিষয়টি আমি অর্জন করতে পেরেছি। আমার ২৭-২৮ বছরের শিক্ষকতা জীবনে আমি এখনো অনেক শিক্ষার্থীর মেইল পাই।

আমার শিক্ষার্থীরা পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন। সে শিক্ষার্থীরাই স্মরণ করে। আমার ক্লাস তারা মিস করে। এটিই আসলে একজন শিক্ষকের প্রাপ্তি। শিক্ষক হিসেবে আমি সবসময় এ কাজটিই করে যেতে চাই। শিক্ষক হিসেবে আমার যে দায়িত্ব সেটা আমি সবসময়ই যথাযথভাবে পালন করার চেষ্টা করে আসছি। সামনের দিনগুলোতেও করে যাবো। 

শিক্ষকরা সামাজিকভাবে অবহেলিত। অনেক ক্ষেত্রে বঞ্চিতও। শিক্ষকরা যে মর্যাদা পাওয়ার কথা, আমার কাছে মনে হয় সে জায়গাটি কোনো না কোনোভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এবারের বিশ্ব শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘The teachers we need for the education we want : The global imperative to reverse the teacher shortage’ অর্থাৎ, ‘কাঙ্ক্ষিত শিক্ষা পেতে যেমন শিক্ষক চাই: শিক্ষক সংকট ঠেকাতে বৈশ্বিক উদ্যোগ।’ প্রতিপাদ্যটি কি সময়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক? আপনার মন্তব্য কি?
ড. আবুল মনসুর আহমেদ:
এটি অবশ্যই প্রাসঙ্গিক। পর্যাপ্ত কুমার না থাকলে যেমন পাত্র তৈরি করা যায় না, তখন পাত্র সংকট সৃষ্টি হয়। তাই বলবো, আমাদের দক্ষ কারিগর দরকার। আমরা কি প্রাইমারি, হাইস্কুল—এ জায়গাগুলোতে দক্ষ কারিগর তৈরি করতে পারছি? শিক্ষক হিসেবে যে দক্ষ মানুষ প্রয়োজন, আমরা কি ওই জায়গায় তা দিতে পারছি?

আমরা বিভিন্ন সময় বলে আসছি, প্রাইমারি, হাইস্কুলে বিশেষ শিক্ষা ক্যাডার থাকা দরকার। যেখানে মেধাবী মানুষ শিক্ষক হবেন এবং আমরা একটি নতুন জেনারেশন পাবো। আমাদের যে সংকট, আমরা দেখি যে অনেক শিক্ষক যারা প্রাইমারি বা হাইস্কুল লেভেলে শিক্ষকতা করছেন তাদের কারো কারো সৃজনশীলতা সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই।

এ মানুষটি তাহলে কীভাবে নতুন জেনারেশন গড়ে তুলবে? আমরা কাউকে খাটো করে দেখতে চাই না। আমরা দেখতে চাই, নতুন জেনারেশন যদি করতে হয় তাহলে দক্ষ কারিগর সৃষ্টি করতে হবে। এই যে দক্ষ কারিগর যাদের আমরা শিক্ষক বলছি তাদের জায়গাগুলোতে সরকারের শিক্ষা প্রশাসনের দায়িত্বে যারা আছেন তাদেরকে মনোযোগ দিতে হবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: দেশের শিক্ষকরা বেতন-মর্যাদায় পিছিয়ে আছেন বলে শোনা যায়। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?
ড. আবুল মনসুর আহমেদ:
বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, শিক্ষকরা সামাজিকভাবে অবহেলিত। অনেক ক্ষেত্রে বঞ্চিতও। শিক্ষকরা যে মর্যাদা পাওয়ার কথা, আমার কাছে মনে হয় সে জায়গাটি কোনো না কোনোভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

আমাদের সমাজব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয়ব্যবস্থায় শিক্ষকের অবস্থানটি যদি দেখি, তা খুব একটা উপরের দিকে নয়। এই বৈষম্য দূর করা দরকার। যদি আমরা সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই এবং শিক্ষকদের যদি মর্যাদা দিতে চাই; তাহলে এ বৈষম্যটি দূর করতে হবে। বৈষম্যটি দূর করার মাধ্যমেই আমরা আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগরদের সঠিক সম্মান দিতে পারবো।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
ড. আবুল মনসুর আহমেদ: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের জন্যেও শুভ কামনা রইলো। 


সর্বশেষ সংবাদ