একাডেমিক ফলেও সেরা ছিলেন বিজেএসে দ্বিতীয় হওয়া শাওন

রুবাইয়াত হাসান শাওন
রুবাইয়াত হাসান শাওন  © টিডিসি ফটো

রুবাইয়াত হাসান শাওন। অদম্য মেধাবী শাওন নিজেকে প্রমাণ করেছেন প্রতিটি ধাপে ধাপে। সদ্য প্রকাশিত পঞ্চদশ বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষায় মেধাতালিকায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন। তার জন্ম যশোরের সদর উপজেলায়। বাবা অলিউল আলম এবং মা মর্জিনা আক্তার। ২০১৪ সালে যশোরের ঝিকরগাছা এম এল হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন তিনি এবং ২০১৬ সালে যশোরের সদর উপজেলার নতুনহাট পাবলিক কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। এইচএসসি পরীক্ষায় যশোর বোর্ড থেকে মানবিকে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছিলেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ঢাবির কলা অনুষদের ভর্তি পরীক্ষায় ‘খ’ ইউনিটে হয়েছিলেন ৭৪তম। তিনি আইন বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।

স্নাতক (অনার্স) পরীক্ষায় প্রথম বা সর্বোচ্চ সিজিপিএ অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ শাওন ঢাবির ৫৩তম সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতির হাত থেকে স্বর্ণপদক পান। এছাড়াও এই ভালো ফলাফলের জন্য বিজয় একাত্তর হল থেকে পান প্রভোস্ট অ্যাওয়ার্ড। সম্প্রতি বিজেএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন, পরামর্শ ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রিফাত হক—

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার শৈশবের গল্প দিয়ে শুরু করতে চাই।
রুবাইয়াত শাওন: আমার গ্রামেই বড় হয়ে ওঠা। শৈশবকালে পড়াশোনা শুরু হয়েছিল গ্রামের প্রাইমারি স্কুল থেকে। তবে হাইস্কুলটা ছিল অন্য উপজেলায়। সেখানে বাসে যাতায়াত করা লাগত। ২০১৪ সালে এসএসসি পাস করার পর কলেজে ভর্তি হই। সেটা আবার বাড়ির পাশে ছিল।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: স্কুল-কলেজে সফলতার হাতছানি কেমন ছিল?
রুবাইয়াত শাওন: স্কুল-কলেজে আলহামদুলিল্লাহ আমার রেজাল্ট ভালো ছিল। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় আমার সর্বোচ্চ রেজাল্ট বা জিপিএ-৫ ছিল। এইচএসসিতে মানবিক বিভাগে যশোর বোর্ডে থার্ড ছিলাম।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার কী ছোটবেলা থেকেই জজ হওয়ার স্বপ্ন ছিল?
রুবাইয়াত শাওন: ঠিক ছোটবেলা থেকে বললে একটু ভুল হবে। আমি মূলত হাইস্কুল লেভেলে কমার্সে পড়েছি। সেখান থেকে তো জজ হওয়ার সুযোগ ছিল না। এসএসসি পাস করার পর বুঝলাম ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করতে হবে। ইউনিভার্সিটির পড়াশোনা একটু ডিফারেন্ট। তখন ভাবলাম ল নিয়ে পড়া যায়। সেক্ষেত্রে আমার আব্বুর প্রভাব ছিল। তারপর এইচএসসিতে কমার্স থেকে মানবিকে শিফট করি। যাতে সহজেই ‘বি’ ইউনিটের মাধ্যমে ল পেতে পারি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় আমি ৭৪তম হই এবং আইন বিভাগ পেয়ে যাই। তখন হলে উঠার পর ১১তম বিজেএস চলছিল। ১১তম বিজেএসে আমার হল থেকে তিনজন ভাই জজ হয়। এই ব্যাপার আমাকে অন্যরকম অনুপ্রেরণা দেয়। তখন মনে হলো জজ হওয়া খুব ভালো একটা অপশন।

আরও পড়ুন: ‘পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান’ না থাকায় ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীরা বিসিএসে ঝুঁকছে

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: পড়াশোনার ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল কিনা?
রুবাইয়াত শাওন: আমার পরিবার নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার। বাবা কৃষক ছিল। সেক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিবন্ধকতা একটু ছিল। তবে আমি ডাচ-বাংলা ব্যাংকের একটা বৃত্তি পেয়েছিলাম। তাছাড়াও আরও ছোট ছোট কয়েকটা বৃত্তির জন্য এপ্লাই করে পেয়ে গেছিলাম। এখান থেকে বড় একটা আর্থিক সাপোর্ট পেয়েছি। আর হলে থাকার ফলে খরচ কমই ছিল এবং যতদূর সম্ভব কম খরচ করার চেষ্টা করতাম।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: নতুন যারা বিজেএস দিতে চান বা বিজেএস-এ ভালো কিছু করতে চান, তাদের জন্য পরামর্শ কী?
রুবাইয়াত শাওন: যারা নতুন বিজেএসের জন্য প্রস্তুতি নিবে তাদের জন্য পরামর্শ থাকবে- যখন যেই টপিকটা পড়তেছে সেটা নোট আকারে তুলে রাখা। কারণ, পরবর্তীতে আমরা এই টপিকটা এত গভীরে গিয়ে পড়ার সময় বা সুযোগ পাই না। নোট থাকার ফলে টপিকটা সহজেই রিভাইস করা যায়। এরকম এনরিচ একটা নোট নিজের যদি থাকে, সেটা পরীক্ষার আগ মুহূর্তে খুব হেল্প করে। আমার মতে, এক্সক্লুসিভলি বিজেএসের জন্য চতুর্থ বর্ষ থেকে পড়াশোনা করলে এনাফ। এছাড়া আইন কারিকুলামের ভিতরে বিজেএসের মেজরিটি পার্ট পেয়ে যাবেন। সেক্ষেত্রে একাডেমিক পড়া যদি মন দিয়ে তাহলে বিজেএসের পড়া অনেকটাই কাভার হয়ে যাচ্ছে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিজেএসে ১০০০ মার্কের রিটেন এক্সাম হয়। রিটেনের পরীক্ষা প্রস্তুতি কিভাবে নেয়া উচিত?
রুবাইয়াত শাওন: রিটেনে পরীক্ষা ছুটি ছাড়া টানা দশটা পরীক্ষা দিতে হয়। প্রতিদিন দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত একটা করে পরীক্ষা থাকে। এর মধ্যে সামঞ্জস্যতা মেইনটেইন করা অনেক বড় ব্যাপার। প্রথম কয়েকটা পরীক্ষা দেওয়া পর শরীরে একটা প্রেসার চলে আসবে। পরীক্ষার চাপে ঘুম ও খাওয়ার ফ্লো টা ঠিক থাকে না। এই সামঞ্জস্যতা মেইনটেইন করে পরীক্ষা দেওয়াটা খুব জরুরী। অনেকের ক্ষেত্রে ভালো প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও টানা পরীক্ষার চাপ শরীর নিতে পারে না। তাই রিটেনের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা খুবই দরকারি। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: দেশ ও জাতির জন্য আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি? 
রুবাইয়াত শাওন: যেহেতু এটা একটা সেবা। তাই এই সেবার সুবিধাভোগী যারা, তাদের জন্য কোনো কিছু করা। বিচার বিভাগের প্রধান সুবিধাভোগী জনগণ। বিচারকের দায়িত্বটা খুবই  মহৎ একটা দায়িত্ব।তাই আমার লক্ষ্য হবে সততা, ন্যায়-নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করা।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনাকে ধন্যবাদ। 
রুবাইয়াত শাওন: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকেও ধন্যবাদ।


সর্বশেষ সংবাদ