পাটকাঠি থেকে ছাপার কালি উদ্ভাবনের দাবি ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থীর
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৩, ০৭:৪৫ PM , আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৩, ০৮:০৬ PM
পাটকাঠি থেকে প্রাপ্ত সাবমাইক্রন কার্বন কণা ব্যবহার করে ইঙ্কজেট বা ছাপার কালির একটি জল-ভিত্তিক ফর্মুলেশন উদ্ভাবন করেছেন বলে দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ড. মোঃ আব্দুল আজিজ নেতৃ্ত্বাধীন একটি গবেষণা দল।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) দুপুর তিনটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান।
সম্প্রতি কেমেস্ট্রি -এন এশিয়ান জার্নালে এ সম্পর্কিত একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। যাতে কালি ছাপার কার্বন কণার আরও টেকসই বিকল্প প্রস্তাব করা হয়।
এ গবেষণা দলের প্রধান আব্দুল আজিজ তাদের এই উদ্ভাবনকে সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, তাদের এই উদ্ভাবনটি উল্লেখযোগ্যভাবে মুদ্রণ শিল্প থেকে নির্গত পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর গ্যাস কমাতে পারবে এবং মুদ্রণের কালো কালির আমদানি কমিয়ে সর্বোচ্চ অর্থ সাশ্রয় করতে পারবে। উদ্ভাবিত এ কালি সস্তা এবং উন্নত মানের। যা বাজারে থাকা ঐতিহ্যগত কার্বন কালো ইঙ্কজেট কালির চেয়ে অনেকটা সাশ্রয়ী, পরিবেশ বান্ধব এবং বিকল্প হিসাবে ব্যবহারযোগ্য।
আরও পড়ুন: আন্দোলনের ডাক ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র শিক্ষক পেশাজীবী পরিষদের
তিনি আরও বলেন, তারা বায়োমাস, পাট কাঠিগুলিকে পাইরোলাইজ করার জন্য একটি কাস্টমাইজড পাইলট ফার্নেস ব্যবহার করেছেন, যা জ্বালানী হিসাবে উৎপন্ন গ্যাসগুলিকে পুনর্ব্যবহৃত করে। সাবমাইক্রন কার্বন কণা তৈরির জন্য প্রাপ্ত কার্বনকে আরও বল-মিল করা হয়েছে। এই কণাগুলি জল-ভিত্তিক ইঙ্কজেট কালি তৈরি করতে বায়োকম্প্যাটিবল ইথিলিন গ্লাইকোল এবং আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহলের জলীয় দ্রবণে দ্রবীভূত হয়।
আরও জানান, তারা ক্যানন প্রিন্টার ব্যবহার করে এ-ফোর আকারের কাগজের অনেক পৃষ্ঠা মুদ্রণ করে উন্নত কালি পরীক্ষা করেছেন এবং বাণিজ্যিক ইঙ্কজেট কালো কালির মত কার্যকারিতা খুঁজে পেয়েছেন।
এছাড়াও তার নেতৃত্বে পাটকাঠি থেকে অত্যন্ত স্থিতিশীল এবং ইলেক্ট্রোকেমিক্যালি সক্রিয় ত্রি-মাত্রিক আন্তঃসংযুক্ত গ্রাফিন ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করার জন্য একটি নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। যা কেমেস্ট্রি -এন এশিয়ান জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। যাতে সবুজ রসায়ন ব্যবহার করে গ্রাফিন সংশ্লেষণের জন্য একটি সহজ এবং ব্যয়-কার্যকর পদ্ধতি প্রদর্শন করে। এর বাইরে তিনি পাট কাঠি থেকে উচ্চ মানের অ্যান্টিকোরোসিভ আবরণেরও উদ্ভাবন করেন।
উল্লেখ্য, তরুণ রসায়ন বিজ্ঞানী ড. মোঃ আব্দুল আজিজের বাড়ি যশোরের কেশবপুর উপজেলার হাসানপুর ইউনিয়নের মোমিনপুর গ্রামে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতকোত্তর, দক্ষিণ কোরিয়ার পুশান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ন্যানো ম্যাটারিয়াল বেসড ইলেকট্রো অ্যানালাইটিক্যাল কেমিস্ট্রিতে পিএইচডি করেন।
এরপর, তিনি কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাপান সোসাইটি ফর দ্য প্রমোশন অফ সায়েন্স (জেএসপিএস) ফেলোশিপ লাভ করেন এবং ২০১১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সেখানে গবেষণা চালিয়ে যান। তারপর সৌদি সরকারের আহ্বানে কিং ফাহাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি কিং ফাহাদ ইউনিভার্সিটি অফ পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মিনারেলের, ইন্টারডিসিপ্লিনারি রিসার্চ সেন্টার-হাইড্রোজেন অ্যান্ড এনার্জি স্টোরেজ এর একজন গবেষণা বিজ্ঞানী (সহযোগী অধ্যাপক) হিসেবে কর্মরত আছেন।
উক্ত গবেষণা কেন্দ্রে তিনি বাংলাদেশের বর্জ্য পদার্থ, যেমন- কৃষি-বর্জ্য, বিল ডাকাতিয়ার কালো মাটি, কয়লা, বিভিন্ন ধরনের কৃষি-বর্জ্য থেকে ব্যয়বহুল উপকরণ প্রস্তুত করার জন্য বিভিন্ন গবেষণা কাজ করছেন। বিশেষ করে, পাটের কাঠি নিয়ে বিভিন্ন গবেষণামূলক কাজ তিনি করেছেন। তার নেতৃত্বে, বিভিন্ন ধরণের কার্বন, যেমন- গ্রাফিন ফ্রেম ওয়ার্ক, কার্বন ন্যানো পার্টিকেল, অ্যাক্টিভেটেড কার্বন ইত্যাদি পাটের কাঠি থেকে প্রস্তুত করা হয়েছে। যা সুপারক্যাপাসিটর ফ্যাব্রিকেশন, ইঙ্ক জেট প্রিন্টিং ইঙ্ক এবং পেইন্টিং কালি তৈরি, ক্ষয়রোধী উপাদান তৈরি, জল পরিশোধন, সেন্সর তৈরি ইত্যাদিতে প্রয়োগ করা যায়।
ইতোমধ্যে ড. আজিজের ১৯০টি গবেষণাকর্ম বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া , সৌদি আরব, বাংলাদেশ, জাপানের মতো বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও জাতীয় সম্মেলনে তার গবেষণা কাজ উপস্থাপন করেছেন বলে জানান। এছাড়াও, তিনি বহু বিখ্যাত আন্তর্জাতিক জার্নালের অতিথি সম্পাদক/সম্পাদকীয় বোর্ডের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।