শিক্ষকদের অবসর ভাতার টাকা পেতে ভোগান্তির শেষ কোথায়?
৭৪ হাজার প্রার্থীর জন্য দরকার ৭৭০০ কোটি টাকা
- শিহাব উদ্দিন
- প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:৫১ PM , আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:১২ AM
নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলা থেকে ঢাকার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টে পেনশনের টাকা তুলতে এসেছেন ময়লাল সরকার। ২০২২ সাল থেকে নীলক্ষেতের ব্যানবেইস ভবনে যাতায়াত করছেন তিনি। অনলাইনে পেনশন পেতে আবেদন করেছেন তিন বছর আগে। তবে একটি টাকাও পাননি তিনি। দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে আসলেও টাকা কবে পাবেন, সেই উত্তর নেই কোনো কর্মকর্তার কাছে।
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জয়নুল আবদীন। ২০১৯ সালে ৩৫ বছরের শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে গেছেন। তবে এখনো পেনশনের একটি টাকাও ছুঁয়ে দেখতে পারেননি এ শিক্ষক। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া এ শিক্ষকের প্রশ্ন-পেনশনের অর্থ পেতে কেন এভাবে হয়রানির শিকার হতে হবে? চাকরিকালীন নিয়মিত পেনশন এবং কল্যাণ ট্রাস্টের অর্থ কেটে নেওয়া হয়েছে। এখন এমন গড়িমসি কেন?
২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৬ হাজার ৭০০টি আবেদন অনিষ্পন্ন রয়েছে। এসব আবেদন নিষ্পত্তি করতে ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। এছাড়া অবসর সুবিধা বোর্ডের ৩৭ হাজার আবেদন অনিষ্পন্ন রয়েছে। এসব আবেদন নিষ্পত্তি করতে প্রয়োজন প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। তবে এ পরিমাণ অর্থ সংস্থা দুটির কাছে নেই।
শুধু এ দুই শিক্ষকই নয়; আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৫ আগস্টের পর থেকেই বেসরকারি শিক্ষকদের কল্যাণ ট্রাস্ট এবং অবসর সুবিধা বোর্ডের অর্থ পাওয়ায় বিড়ম্বনা বেড়েছে। এর মূল কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে টাকা না দেওয়া, ৫ আগস্টের পর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অনিয়মিত হওয়া অন্যতম। যদিও ৫ আগসস্টের আগেও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অর্থ ছাড়েও বিলম্ব লক্ষ করা যেত।
জানা গেছে, এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের ১৯৯০ সাল থেকে কল্যাণ ট্রাস্টের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। ২০০৫ সাল থেকে শুরু হয়েছে অবসর সুবিধা দেওয়া। এই দুই সুবিধা বাবদ শিক্ষকেরা চাকরিকাল অনুযায়ী এককালীন অর্থ পান। এছাড়া প্রতিষ্ঠান দু’টি সরকারের বিভিন্ন অংশ থেকে অর্থ পেয়ে থাকে। তবে শিক্ষকদের চাকরিজীবন শেষে দুটি সংস্থাই অর্থ ছাড়ে টালবাহানা করে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এর ফলে শিক্ষকদের ভোগান্তি চরমে গিয়ে পৌঁছেছে।
যদিও শিক্ষকদের এসব অভিযোগ শুনতে নারাজ কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধা বোর্ড। তারা জানিয়েছে, ৭৪ হাজার শিক্ষকের অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের অর্থ পরিশোধ করতে ৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। এই মুহূর্তে এত অর্থ তাদের কাছে নেই। সরকারের দেওয়া অর্থের মুনাফা আর শিক্ষক-কর্মচারীদের দেওয়া চাঁদার অর্থ থেকে প্রতি মাসে যে পরিমাণ টাকা জমা হয়, তা দিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের পেনশন আবেদন নিষ্পত্তি করা যায় না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের সদস্য সচিব (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক মো. জাফর আহম্মদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘শিক্ষক-কর্মচারীরা যে অর্থ দেয়, সেটি প্রয়োজনের তুলনায় কম। আমরা সরকারের কাছে কিছু থোক বরাদ্দ চেয়েছি। এ বরাদ্দ পেলে সমস্যার সমাধান করা যাবে। আমরা থোক বরাদ্দ পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যানুযায়ী, দেশের ৩১ হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫ লাখের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী চাকরি করেন। এ শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকারের পক্ষ থেকে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অনুদান পান। এ অর্থ থেকে অবসর সুবিধা বোর্ড ৬ শতাংশ এবং কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিমাসে ৪ শতাংশ হারে অর্থ কেটে রাখে।
আরো পড়ুন: ছাত্রীদের আবাসনে ঢাবিতে নতুন তিনটি হল, ৩টি বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৬ হাজার ৭০০টি আবেদন অনিষ্পন্ন রয়েছে। এসব আবেদন নিষ্পত্তি করতে ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। এছাড়া অবসর সুবিধা বোর্ডের ৩৭ হাজার আবেদন অনিষ্পন্ন রয়েছে। এসব আবেদন নিষ্পত্তি করতে প্রয়োজন প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। তবে এ পরিমাণ অর্থ সংস্থা দুটির কাছে নেই। যার কারণে শিক্ষকদের অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের অর্থ নিয়মিত ছাড় করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সদ্য বিদায়ী মহাপরিচালক অধ্যাপক রেজাউল করীম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমি রুটিন দায়িত্বে ছিলাম। পিআরএল এ যাওয়ার পূর্বে আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পেয়েছিলাম। তবে সেটি খুব অল্প সময়ের জন্য। এছাড়া কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর বোর্ডে অর্থের ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে সব শিক্ষককে একসঙ্গে অর্থ দেওয়া সম্ভব হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সরকার ভালো বলতে পারবে।’