নোট-গাইড বন্ধে বড় পরিকল্পনা এনসিটিবির

পাঠ্যবই ও এনসিটিবির লোগো
পাঠ্যবই ও এনসিটিবির লোগো  © সংগৃহীত

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে গাইড-নোট কিংবা সহায়ক বই বন্ধের আলাপ পুরোনো হলেও এ পর্যন্ত কার্যকরী সমাধান আসেনি। গাইড-নোট বন্ধে ২০১০ সালে সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতি চালু হয়। যার উদ্দেশ্যই ছিল মুখস্থ-বিদ্যা ও গাইডবই নির্ভরতার বদলে চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটানো। কিন্তু সেই উদ্দেশ্যও বিফলে যায়।

এর আগে ২০০৮ সাল থেকে নোট বই ও গাইড প্রকাশ বিতরণ ও বিক্রির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয় সরকার। এ বিষয়ে হাইকোর্ট থেকে দেশের জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। তবে ২০২১ সালে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে সহায়ক বই প্রকাশ করার অনুমতি দেয় সরকার।

‘পাণ্ডুলিপি কীভাবে ফাঁস হয়েছে সেটা ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটির সহায়তায় আমরা জানতে পেরেছি। সবাইকেই আইনের আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে বিষয়টি আমরা সরকারকে অবগত করেছি— অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান, চেয়ারম্যান, এনসিটিবি

তবে এখনো বাজারে গাইড-নোট কিংবা সহায়ক বইয়ের আধিপত্য রয়েছে। এমনকি শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করে বিক্রি বাড়াতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশাসন সর্বত্র প্রকাশক ও বিক্রেতাদের দৌরাত্ম্য চোখে পড়ার মতো। সম্প্রতি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃক বিনামূল্যের পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানোর আগেই পাঠ্যবইয়ের পাণ্ডুলিপি ‘ফাঁস’ করে আগাম গাইড-নোট কিংবা সহায়ক বই ছাপানোর কাজ করার অভিযোগ উঠে।

আরও পড়ুন: নতুন বইয়ের কাজ শেষে কারিকুলাম পরিমার্জন শুরু হবে: এনসিটিবি চেয়ারম্যান

বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন পাঠ্যবই তুলে দিতে অন্তর্বর্তী সরকার যখন প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখনই নতুন পাঠ্যবইয়ের পাণ্ডুলিপি ‘ফাঁস’ হওয়ার অভিযোগ ওঠায় পাঠ্যবই ছাপা শেষ হওয়ার আগে নোট ও গাইড বই ছাপাতে মুদ্রণ নিষেধাজ্ঞা জারি এনসিটিবি। পাঠ্যবই ছাপার আগে এর পাণ্ডুলিপি কীভাবে নোট-গাইড বইয়ের ব্যবসায়ীদের হাতে পৌঁছালো, তা খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করে প্রতিষ্ঠানটি। বছরের পর বছর বিভিন্ন পরিকল্পনার পরেও গাইড-নোট কিংবা সহায়ক বইয়ের আধিপত্য না কমায় এবার বড় পরিকল্পনার কথা ভাবছে এনসিটিবি।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান

আজ মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে এমন তথ্য জানিয়েছেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান। সহায়ক পুস্তিকার আধিপত্য কমাকে না পারার পেছনে কারিকুলামের দুর্বলতাকে দায়ী করছেন অধ্যাপক রিয়াজুল হাসান। তিনি মনে করেন, পাঠ্যক্রম প্রণয়নে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা না থাকায় সুযোগ নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। 

অধ্যাপক এম রিয়াজুল হাসান বলেন, পরীক্ষার প্রশ্ন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আমাদের সচেতনতা থাকলে গাইড-নোটের দৌরাত্ম্য অনেকটা কমে আসত। এক বছরের প্রশ্ন পরের বার কিংবা পরের যেকোনো সময়ে হুবহু রিপিট করার ফলে ব্যবসায়ীরা বেশি সুযোগ পেয়ে যায়। ফলে বছরের পর বছর চেষ্টা করেও তাদের আধিপত্য কমানো যায়নি।

অধ্যাপক রিয়াজুল আরো বলেন, আমাদের কারিকুলামেও ঘাটতি রয়েছে। বিজ্ঞান নির্ভর পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করা গেলে কিছুটা সমস্যার সমাধান হতো। আমাদের দেশের সংস্কৃতি এবং বৈশ্বিক চাহিদার আলোকে জাতি গঠন করতে হলে কী ধরনের পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন দরকার সেটা নিয়ে বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের গাইড-বই থেকে পাঠ্যবইয়ে ফিরিয়ে আনতে হলে এ বিষয়েও কাজ করতে হবে।

আরও পড়ুন: ভারতীয় প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে বই ছাপানো প্রসঙ্গে যা বললেন এনসিটিবি চেয়ারম্যান

এনসিটিবির পরিকল্পনার কথা জানিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ের আলাপ হয়েছে। এবারের পাণ্ডুলিপি ফাঁসের ঘটনাটিও অনাকাঙ্ক্ষিত। অসৎ ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য কমাতে হলে সামগ্রিক পরিকল্পনার প্রয়োজন রয়েছে। এই কাজ শুধু এনসিটিবির পক্ষে সামাল দেয়া সম্ভব না। সরকার এবং সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে সমস্যার সমাধান করতে হবে। যারা অনিয়মের সাথে জড়িত আছেন তাদেরকে আমরা ইতোমধ্যে চিহ্নিত করতে পেরেছি। কয়েকটি লেয়ার থেকে পাণ্ডুলিপি প্রকাশ হয়েছে হতে পারে। কাজেই শুধু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করলেই হবে না। কারিকুলাম, প্রশ্নপত্র এবং সংশ্লিষ্টদের কঠোর নীতিমালার আওতায় আনতে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে হবে।

জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিতের বিষয়েও জোর দেন চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, পাণ্ডুলিপি কীভাবে ফাঁস হয়েছে সেটা ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটির সহায়তায় আমরা জানতে পেরেছি। সবাইকেই আইনের আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে বিষয়টি আমরা সরকারকে অবগত করেছি। 

সম্প্রতি কয়েকটি প্রেসকে বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপার কাজ থেকে বাদ দিয়েছে এনসিটিবি। তাদের বিষয়েও শক্ত অবস্থানের কথা জানিয়েছেন চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, আগে কী ঘটেছে সেটা আমরা বিবেচনায় নিচ্ছি না। নিম্নমানের সরঞ্জাম ও আরো কিছু কারণে আমরা কয়েকটি প্রেসকে সতর্ক করেছি। পরেরবার এমন হলে তাদের ব্ল্যাকলিস্টে ফেলে দেয়া হবে। যেকোনো অপরাধের বিষয়ে আমরা কঠোর থাকবো। আমরা উদাহরণ স্থাপন করতে চাই।


সর্বশেষ সংবাদ