নতুন শিক্ষাক্রম: শিক্ষার্থীদের ১০টি যোগ্যতা অর্জনে পাঠ্যবই প্রণয়ন
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:৪৬ PM , আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:৪৬ PM
নতুন শিক্ষাক্রমে (কারিকুলামে) শিক্ষার্থীদের অর্জনের জন্য ১০টি মূল যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব যোগ্যতা অর্জনে সহায়ক পাঠ্য বই প্রণয়ন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) নতুন শিক্ষাক্রমে যোগ্যতা অর্জনের সূচক নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উত্থাপন করার পর মন্ত্রণালয় ১০টি যোগ্যতা অর্জনের কথা জানায়।
শিক্ষার্থীদের অর্জনযোগ্য এ ১০ টি যোগ্যতার মধ্যে অন্যের মতামত ও অবস্থানকে সম্মান ও অনুধাবন করে, প্রেক্ষাপট অনুযায়ী নিজের ভাব, মতামত যথাযথ মাধ্যমে সৃজনশীলভাবে প্রকাশ করতে পারা; যেকোনও ইস্যুতে সূক্ষ্ম চিন্তার মাধ্যমে সামগ্রিক বিষয় বিবেচনা করে সকলের জন্য যৌক্তিক ও সর্বোচ্চ কল্যাণকর সিদ্ধান্ত নিতে পারা এবং ভিন্নতা ও বৈচিত্র্যকে সম্মান করে নিজস্ব কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক হয়ে নিজ দেশের প্রতি ভালোবাসা ও বিশ্বস্ততা প্রদর্শনপূর্বক বিশ্ব নাগরিকের যোগ্যতা অর্জন করতে পারার মতো বিষয়গুলোকে যুক্ত করা হয়েছে।
এছাড়াও সমস্যা প্রক্ষেপণ, দ্রুত অনুধাবন, বিশ্লেষণ, সংশ্লেষণ এবং ভবিষ্যৎ তাৎপর্য বিবেচনা করে সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে যৌক্তিক ও সর্বোচ্চ কল্যাণকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সমস্যা সমাধান করতে পারা; পারস্পরিক সহযোগিতা, সম্মান ও সম্প্রীতি বজায় রেখে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মাধ্যমে পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারা এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য নিরাপদ বাসযোগ্য পৃথিবী তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারা এবং নতুন দৃষ্টিকোণ, ধারণা, দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োগের মাধ্যমে নতুন পথ, কৌশল ও সম্ভাবনা সৃষ্টি করে শৈল্পিকভাবে তা উপস্থাপন এবং জাতীয় ও বিশ্বকল্যাণে ভূমিকা রাখতে পারাও যুক্ত করা হয়েছে এ শিখন কাঠামোয়।
আরও পড়ুন: একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখে নতুন শিক্ষাক্রমের বৈশ্বিক গুণ-মান অর্জন
শিক্ষার্থীদের শিখন তালিকায় রাখা হয়েছে নিজের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিয়ে নিজ অবস্থান ও ভূমিকা জেনে ঝুঁকিহীন নিরাপদ ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় এবং বৈশ্বিক সম্পর্ক ও যোগাযোগ তৈরি করতে ও বজায় রাখতে পারা; প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে ঝুঁকি ও সম্ভাবনা বিবেচনায় নিয়ে মানবিক মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখে দুর্যোগ মোকাবিলা করতে পারা এবং নিরাপদ, সুরক্ষিত জীবন ও জীবিকার জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখতে পারা; পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে দৈনন্দিন উদ্ভূত সমস্যা গাণিতিক, বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা ব্যবহার করে সমাধান করতে পারা এবং ধর্মীয় অনুশাসন, সততা ও নৈতিক গুণাবলি অর্জন এবং শুদ্ধাচার অনুশীলনের মাধ্যমে প্রকৃতি ও মানব কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারার মতো অতি আবশ্যকীয় বিষয়াবলিও।
এর আগে চলতি বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন শিক্ষাক্রম চালু করে সরকার। প্রচলিত শিক্ষা কাঠামোয় আমূল পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়ে চলতি বছর সারাদেশে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু করে সরকার। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে শুরুতে নানা আলোচনা-সমালোচনার পর প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের কথাও জানানো হয়েছে দেশীয় শিক্ষার তদারক প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে। নতুন শিক্ষাক্রমে প্রচলিত পরীক্ষা ধারা, মূল্যায়ন, পাঠ্যসূচি ও বিভাগ বিভাজনের বাইরে গিয়ে উচ্চশিক্ষার আগ পর্যন্ত সুযোগ রাখা হয়েছে একই পাঠ্যসূচিতে পাঠদান করার।
বদলে যাওয়া শিক্ষা কাঠামোয় শুরুতে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম এবং বাকি শ্রেণিগুলোতে ২০২৪ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে এই শিক্ষাক্রম চালুর লক্ষ্যে কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের প্রচলিত শিক্ষায় আমূল পরিবর্তনের মূল কারিগর শিক্ষকরা যাতে শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে পঠন-পাঠন সম্পন্ন করতে পারেন সেজন্য শুরুতেই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনারও উদ্যোগ নেয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। আর এতে শিক্ষাক্রম ও অন্যান্য কার্যক্রমের তদারকি করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
আরও পড়ুন: ৪০৬ কোটি ব্যয়ে সোয়া ৪ লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেবে মাউশি
বাংলাদেশের নতুন শিক্ষাক্রমে জোর দেয়া হচ্ছে অভিজ্ঞতাভিত্তিক পাঠদানকে। এতে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিদ্যমান পরীক্ষার চেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক মূল্যায়ন (শিখনকালীন) বেশি হওয়ার কথা রয়েছে। এতে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত প্রথাগত কোনো পরীক্ষা রাখা হয়নি। আর দুটিই থাকছে পরবর্তী শ্রেণিগুলোর মূল্যায়নের পদ্ধতি হিসেবে পরীক্ষা ও ধারাবাহিক শিখন কার্যক্রমে। পাশাপাশি বাদ দেয়া হয়েছে এখনকার মতো এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাও। যা শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে হবে এসএসসি পরীক্ষার মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দুটি পাবলিক পরীক্ষা হবে নতুন শিক্ষাক্রমে।
এর আগে গত ২০২১ সালের মে মাসে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন এনে প্রণয়ন করা শিক্ষাক্রমের রূপরেখাটি অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিদ্যমান পরীক্ষার চেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক মূল্যায়ন (শিখনকালীন) বেশি হবে। এর মধ্যে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা হবে না, পুরোটাই মূল্যায়ন হবে সারা বছর ধারাবাহিকভাবে চলা বিভিন্ন রকমের শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে। পরবর্তী শ্রেণিগুলোর মূল্যায়নের পদ্ধতি হিসেবে পরীক্ষা ও ধারাবাহিক শিখন কার্যক্রম—দুটোই থাকছে।
নতুন নিয়মে এখনকার মতো এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা হবে না। শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে হবে এসএসসি পরীক্ষা। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দুটি পাবলিক পরীক্ষা হবে। প্রতি বর্ষ শেষে বোর্ডের অধীনে এই পরীক্ষা হবে। এরপর এই দুই পরীক্ষার ফলের সমন্বয়ে এইচএসসির চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে।
আরও পড়ুন: নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পরিবর্তন হবে চাকরির প্রশ্ন, পরীক্ষাও: শিক্ষামন্ত্রী
এ ছাড়া নতুন শিক্ষাক্রমে দশম শ্রেণির আগে কোনো পাবলিক পরীক্ষা রাখা হয়নি। একজন শিক্ষার্থী বিজ্ঞান, মানবিক নাকি ব্যবসায় শিক্ষায় পড়বে, সেটি ঠিক হবে উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে ১০টি অভিন্ন বিষয়ে পড়ানো হবে। এখন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সবাইকে অভিন্ন বিষয় পড়তে হয়। আর একজন শিক্ষার্থী বিজ্ঞান, মানবিক নাকি ব্যবসায় শিক্ষায় পড়বে, সেটি বর্তমানে ঠিক হয় নবম শ্রেণিতে গিয়ে।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণি ও ষষ্ঠ শ্রেণির জন্য নির্ধারিত কিছুসংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষাক্রম পরীক্ষামূলকভাবে (পাইলটিং) চালু করা হবে। বিভিন্ন শ্রেণিতে তা পর্যায়ক্রমে চালু হবে পরের বছর থেকে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণি; ২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণি; ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে চালু হবে নতুন শিক্ষাক্রম। এরপর উচ্চমাধ্যমিকের একাদশ শ্রেণিতে ২০২৬ সালে এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে।