টয়লেট না থাকায় স্কুলে অনুপস্থিত ছাত্রীরা, ঝরে পড়ছে অনেকে

ছাত্র-ছাত্রীদের পৃথক টয়লেট
ছাত্র-ছাত্রীদের পৃথক টয়লেট  © সংগৃহীত

দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে কমেছে ছাত্রীদের পৃথক ও ব্যবহার উপযোগী টয়লেটের সংখ্যা। এতে বিশেষ সময়ে স্কুলে অনুপস্থিত থাকছে উল্লেযোগ্যসংখ্যক ছাত্রী। ফলে একদিকে তারা একাডেমিক কার্যক্রমে পিছিয়ে পড়ছে, অন্যদিকে আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন জটিল রোগে। বিদ্যালয়ে থাকলেও অপরিচ্ছন্নতার কারণে টয়লেট ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে না অনেকে।

বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ২০২১ সালে দেশের ২০ হাজার ২৯৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৯ হাজার ৫৫৩ টি বিদ্যালয়ে ছাত্রীদের জন্য পৃথক টয়লেট রয়েছে। অর্থ্যাৎ ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ বিদ্যালয়ে পৃথক টয়লেট নেই ছাত্রীদের।

অন্যদিকে, ২০২০ সালে ২০ হাজার ১৭৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে পৃথক টয়লেট ছিল ১৯ হাজার ৪৬৮টিতে। ওই বছর ছাত্রীদের পৃথক টয়লেট ছিল ৯৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ বিদ্যালয়ে। ২০২১ সালে তা ৯৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ  হয়েছে।  অর্থ্যাৎ, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে ছাত্রীদের পৃথক টয়লেট কমেছে দশমিক ১৩ শতাংশ।

আরও পড়ুন : সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালা প্রকাশ

তবে বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) এই তথ্যের সঙ্গে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার তথ্যে বড় ধরনের ফারাক লক্ষ্য করা গেছে। ২০২১ সালে প্রকাশিত ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ৪২ শতাংশ বিদ্যালয়ে মেয়েদের পৃথক ও ব্যবহার উপযোগি টয়লেট নেই।

বাংলাদেশ ন্যাশনাল হাইজেন সার্ভের তথ্যমতে, দেশের বেশির ভাগ স্কুলে মেয়েদের জন্য পৃথক এবং ব্যবহার উপযোগী টয়লেট না থাকায় ঋতুকালীন সময়ে প্রতি ৩০ শতাংশ ছাত্রীকে প্রতি মাসে স্কুলে অনুপস্থিত থাকতে হয়।

অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্কুলগুলোতে ব্যবহার উপযোগী পৃথক টয়লেট না থাকায় প্রতি মাসে ঋতু চলাকালে তাদের মেয়েরা সাত-আট দিন স্কুলে যেতে পারে না। এতে পড়ালেখা নিয়ে অভিভাবক ও ছাত্রী উভয়েই দুশ্চিন্তায় থাকেন।

ঢাকার সাভারের একটি বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির এক ছাত্রী বলেন, বিদ্যালয়ে পৃথক টয়লেট আছে। কিন্তু টয়লেটের ছিটকিনি নেই। ময়লা ও দুর্গন্ধের কারণে আমরা টয়লেট ব্যবহার করতে পারি না। সেখানে প্যাড বদলানো আরো কঠিন। যে কারণে ঋতু চলাকালে স্কুলে যাওয়া হয় না।

সংখ্যার তারতম্য থাকলেও সরকারি ও বেসরকারি উভয় সংস্থার প্রতিবেদনেই কিছু বিদ্যালয়ে পৃথক টয়লেট না থাকার তথ্য উঠে এসেছে। তবে যেসব স্কুলে ছাত্রীদের পৃথক টয়লেট আছে নানা কারণে সেগুলো ব্যবহারের উপযোগী নয়। সেগুলোর কোনোটির ছিটকিনি নেই, কোনোটিতে পানি থাকে না। এছাড়া নিয়মিত পরিস্কার না করায় দুর্গন্ধের কারণে ব্যবহারের অনুপযোগি থাকে টয়লেটগুলো। কভিডের কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এই সংকট তীব্র হয়েছে বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুন : ১৭৭ শিক্ষার্থীকে বাংলা-ইংরেজিতে কম নম্বর দেওয়ার অভিযোগ

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্কুলে ছাত্রীদের পৃথক টয়লেট থাকা খুবই জরুরি। অধিকাংশ স্কুলে পৃথক টয়লেট রয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো সেগুলো বিভিন্ন কারণে ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, পৃথক টয়লেট নির্মাণ ও সেগুলো ব্যবহার উপযোগী রাখা কিছুটা ব্যয়বহুল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, স্কুলগুলোতে বিভিন্ন কাজের জন্যে বাজেট বরাদ্দ থাকলেও, এ ক্ষেত্রে কোনো কোনো বরাদ্দ রাখা হয় না। এছাড়া, কভিডের সময় স্কুলগুলো বন্ধ থাকায় এ ধরনের পরিষেবাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্কুল চালু হওয়ার পর সেগুলো সংস্কারের জন্য বরাদ্দ প্রদানের প্রতিশ্রুতি থাকলেও অনেক প্রতিষ্ঠান কোনো বরাদ্দ পায়নি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক টয়লেট থাকতে হবে। স্যানিটেশনে সংকট থাকলে সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়বে স্কুলগামী শিশুদের। আর তাতে বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ার হারও বাড়তে থাকে।

এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ, উন্নয়ন চিন্তাবিদ ও জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির কো-চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বাংলাদেশ ছাত্র-ছাত্রী সবাইকে সমান গুরুত্ব দেয়। ছাত্রীদের স্যানিটেশনের সুবিধা পর্যাপ্ত না থাকার বিষয়টি দুঃখজনক। এতে তো সমান সুযোগ নিশ্চিত হলো না। আমাদের যত সংকটই থাক না কেন অতি দ্রুত ছাত্র-ছাত্রী সবার জন্যই শতভাগ স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence