এপ্রিল মাসে ২৯৬টি অপতথ্য শনাক্ত, ফেসবুকে ছড়িয়েছে সর্বাধিক
- নিশাত তাসনিম জেসিকা
- প্রকাশ: ০২ মে ২০২৫, ০৫:৩৬ PM , আপডেট: ২২ জুন ২০২৫, ০৩:৩২ PM
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া মোট ২৯৬টি অপতথ্য শনাক্ত করেছে ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা রিউমর স্ক্যানার। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, এসব ভুয়া বা বিভ্রান্তিকর তথ্য মূলত জাতীয়, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে ছড়িয়েছে। এপ্রিল মাসে সবচেয়ে বেশি ১০১টি অপতথ্য ছিল জাতীয় বিষয়ে, এরপর রাজনৈতিক বিষয়ে ৯৫টি, আন্তর্জাতিক ইস্যুতে ৩৮টি এবং ধর্মীয় বিষয়ে ২৭টি। এছাড়া প্রতারণা সম্পর্কিত ১০টি, খেলাধুলা ৯টি, শিক্ষা ৭টি এবং বিনোদন ও সাহিত্য নিয়ে ৮টি অপতথ্য ছড়ানো হয়। তথ্য উপস্থাপনের ধরন বিচারে ১৩৮টি ছিল শুধুমাত্র তথ্যভিত্তিক পোস্ট, ১০৫টি ভিডিও এবং ৫৩টি ছবিভিত্তিক। এসবের মধ্যে ১৮০টি ছিল পুরোপুরি মিথ্যা, ৬৬টি বিভ্রান্তিকর এবং ৪৮টি বিকৃতভাবে উপস্থাপিত।
রিউমর স্ক্যানার জানায়, অপতথ্যের প্রধান উৎস ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। ফেসবুকে ছড়ানো হয় সর্বোচ্চ ২৭৬টি, ইউটিউবে ৫৪টি, ইনস্টাগ্রামে ৪৮টি, এক্স-এ (সাবেক টুইটার) ৪৪টি, টিকটকে ২৪টি এবং থ্রেডসে ১৩টি। পাশাপাশি দেশের কিছু সংবাদমাধ্যমেও ১৪টি অপতথ্য প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এপ্রিল মাসে ভারতীয় উৎস থেকে বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার চালানো হয়। অন্তত চারটি ঘটনার সূত্র ছিল ভারত, যার মধ্যে ছয়টি ছিল সাম্প্রদায়িক অপতথ্য। এসব পোস্ট ছড়িয়েছে ভারতীয় পরিচয়ধারী একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, এপ্রিল মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ঘিরে সর্বাধিক ২৯টি অপতথ্য ছড়ানো হয়, যার ৮৩ শতাংশ ছিল নেতিবাচক। এছাড়া উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, আ ফ ম খালিদ হোসেন, শেখ বশিরউদ্দীন এবং প্রেস সচিব শফিকুল আলমকে নিয়েও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিএনপিকে ঘিরে ছড়ানো হয় ১৩টি অপতথ্য, যার মধ্যে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নাম উঠে আসে। জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে ছয়টি ও ছাত্রশিবির সম্পর্কেও ছয়টি অপতথ্য পাওয়া গেছে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগকে ঘিরে ছয়টি তথ্য ফ্যাক্টচেকের আওতায় এলেও এর ৭৫ শতাংশ ছিল ইতিবাচক।
এছাড়া, রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও ছাত্র আন্দোলন বিষয়ক বিভ্রান্তিকর তথ্যও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। সেনাবাহিনীকে ঘিরে ১৬টি এবং পুলিশকে নিয়ে ৯টি অপতথ্য ছড়ানো হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সম্পর্কেও বিভ্রান্তিকর পোস্ট ছড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক ইস্যু হিসেবে গাজায় ইসরায়েলি হামলা নিয়ে ৩৮টি, কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে ১১টি এবং ঢাকায় অনুষ্ঠিত সুন্নী মহাসমাবেশকে ঘিরে পাঁচটি অপতথ্য শনাক্ত হয়। প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করে ১৯টি ভুয়া কনটেন্ট এবং তিনটি ডিপফেক ভিডিও তৈরি হয়েছে। একইসঙ্গে দেশি-বিদেশি অন্তত ২৫টি গণমাধ্যমের লোগো, নাম ও ভিজ্যুয়াল ব্যবহার করে তৈরি হয়েছে ৬২টি ভুয়া মিডিয়া কার্ড, যার মধ্যে যমুনা টিভির নাম ব্যবহার করে সর্বাধিক ১২টি অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপতথ্যের এই উচ্চ প্রবণতা সমাজে বিভ্রান্তি তৈরি করছে এবং জাতীয় নিরাপত্তা, জনমত ও সামাজিক সম্প্রীতির জন্য তা উদ্বেগজনক হতে পারে।