বুয়েট ছাত্রী সনির ১৯তম মৃত্যুদিবস আজ

  © সংগৃহীত

আজ ৮ জুন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী ছাত্রী সাবেকুন নাহার সনির ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০২ সালের এই দিনে টেন্ডারবাজিকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বুয়েটের কেমিকৌশল বিভাগের ছাত্রী সনি।

এই ঘটনার পর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলেন বুয়েটসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। সারাদেশের মানুষ এই আন্দোলনে সমর্থন জানায়। আন্দোলনের মুখে শেষ পর্যন্ত সনি হত্যা মামলার দ্রুত বিচার শেষে সন্ত্রাসী মুকি ও টগরসহ তিনজনের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। এই মামলার রায় ছিল দেশের যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংগঠিত হত্যাকাণ্ডের প্রথম বিচার।

সনি হত্যার দিনটিকে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ‘সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে পালন করে। এ উপলক্ষে আজ সকালে বুয়েটের আহসান উল্লাহ হলের সামনে সনির স্মৃতি বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।

পুষ্পস্তবক অর্পণ করে সন্ত্রাসবিরোধী বুয়েট ছাত্র ঐক্যের নের্তৃবৃন্দ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ও বুয়েট শাখার নেতাকর্মীবৃন্দ।

সনির ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকীতে এই হত্যাকাণ্ডের সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা পলাতক থাকায় বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি বুয়েটের ছাত্রী হলের নাম ‘সাবেকুন নাহার সনি হল’ রাখারও দাবি জানায় তারা।

বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগ, ৯৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাবেক সভাপতি ইমরান হাবিব রুমন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সনির ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আমরা তার স্মৃতি বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছি। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি এখনও পলাতক। আজকের এই দিনে তার যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি।

“পাশাপাশি বুয়েটে ‘সাবেকুন নাহার সনি হল’ করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে দাবি জানানো হয়েছে। অথচ বিষয়টি নিয়ে বুয়েট প্রশাসন এখন পর্যন্ত কোন দৃশ্যমান উদ্যোগ নেয়নি। আজকে তার  ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকীতে  বুয়েটে সনির নামে হল করার জোর দাবিও থাকবে।”

২০০২ সালের ৮ জুন টেন্ডারবাজি নিয়ে বিরোধের জেরে বেলা পৌনে একটা থেকে দেড়টা পর্যন্ত অস্ত্র হাতে লড়াইয়ে নেমেছিল তৎকালীন বুয়েট ছাত্রদলের মুকি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের টগর গ্রুপ। সেসময় পলাশী ও আশেপাশের এলাকার চাঁদাবাজি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল ক্যাডাররাই দেখভাল করতো। তৎকালীন ছাত্রদল ক্যাডার এস এম হলের টগর ছিল এই টেন্ডার ও চাঁদাবাজির সর্বেসর্বা।

অন্যদিকে চট্টগ্রামের সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুগত ও তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি পিন্টূর অতি আদরের ছোট ভাই মোকাম্মেল হায়াৎ খান মুকী ছিল ছাত্রদল বুয়েট শাখার সভাপতি। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদটিও ছিল তার দখলে। ২০০২ সালের জুন মাসের শুরুর দিকে বেশ বড় অংকের টেন্ডার কেন্দ্র করে, টগর-মুকীর শক্তিমত্তার চূড়ান্ত পরীক্ষা অনিবার্য হয়ে উঠে।

প্রথম দফা গোলাগুলি থেমে গেলে আহসানউল্লাহ হলের ভেতর আশ্রয় নেয়া সাবেকুন নাহার সনি বের হয়ে আসেন। কয়েক পা ফেলে সামনে এগুতেই অস্ত্রের গুলিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। আনুমানিক আধঘণ্টা পর তাঁকে সেখান থেকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে হয়, সেখানে তার মৃত্যু হয়।

হত্যাকাণ্ডের রাতেও খুনিরা অবস্থান করছিল বুয়েটের ড. এম এ রশীদ হলে। বিক্ষুব্ধ সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে রশীদ হল ঘেরাও করে ফেলে। প্রশাসনকে খুনিদের গ্রেপ্তারের জন্য জানানো হলে তারা কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এবং আন্দোলন দমনের কৌশল হিসেবে পরদিন ৯ জুন বুয়েট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এই বন্ধের মধ্যেও সারা দেশে আন্দোলন অব্যাহত থাকে।

২ মাস পর পুনর্বার খোলার সাথে সাথে আন্দোলন নব উদ্যমে শুরু হয়। ক্রমাগত আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সনি হত্যাকাণ্ড মামলার দ্রুত বিচার নিষ্পত্তি করা হয় এবং মামলার রায়ে সন্ত্রাসী মুকী, টগরসহ তিনজনের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। এই মামলার রায় ছিল বাংলাদেশের যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংগঠিত হত্যাকাণ্ডের প্রথম বিচার।

মূল আসামীদের একজন মোকাম্মেল হায়াৎ খান মুকীর অনুপস্থিতিতেই ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতের বিচারপতি শাহেদ নুরুদ্দিন ২০০৩ সালের ২৯ জুন টগর, মুকীর ফাঁসির আদেশ দেন। পরবর্তীতে আসামী পক্ষের আপীলের প্রেক্ষীতে ২০০৬ সালের ১০ মার্চ হাইকোর্ট মুকিত, টগর ও সাগরের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বাতিল করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

এছাড়া যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এসএম মাসুম বিল্লাহ ও মাসুমকে খালাস দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টে দণ্ডিত দুই আসামি এখনো রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্ত আসামি মোকাম্মেল হায়াত খান মুকি তৎকালীন সরকারী দলের প্রত্যক্ষ মদদে দেশ ছেড়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন। পলাতক রয়েছে নুরুল ইসলাম সাগর ওরফে শুটার নুরু; জেলে রয়েছে টগর।

দেড় যুগেরও আগে সনির স্মৃতিফলক গড়েছিল বুয়েট প্রশাসন। যাতে লেখা-
“এই আমি খুব আবেগপ্রবণ
এই আমি খুব জেদী
এই আমি খুব ছেলেমানুষ
এই আমি কিছুটা বাস্তব
এই আমি খুব একা।”


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence