করোনা-কালে প্রশাসনকে পাশে চায় বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা

  © ফাইল ফটো

দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত এবং নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে বেড়ে উঠা। চলমান করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে এসব শিক্ষার্থীদের অনেকেই ইতোমধ্যে তাদের টিউশন এবং খন্ডকালীন চাকরি হারিয়েছেন। অনেক শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যদেরও আয় বন্ধ।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপকূলীয় এলাকার অনেক শিক্ষার্থী আম্পানের আঘাতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ফলে বর্তমানে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় নূন্যতম চাহিদাসমূহ পূরণেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। এমন দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী কামরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, পরিবারের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনই শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, তাই যেসকল শিক্ষার্থী বর্তমানে দুরবস্থায় রয়েছে সাধ্যমতো তাদের পাশে দাড়ানো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তব্য।

তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষার্থী কল্যান তহবিল রয়েছে। বর্তমানে তহবিলটি কাজে লাগানো উচিত। এছাড়া প্রতিবছর শিক্ষার্থী প্রতি তিন হাজার টাকা করে নেয়া হয় বিভাগ উন্নয়ন ফি হিসেবে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসকল অর্থের কোনো সঠিক ব্যবহার করা হয়না। আমি মনে করি এই অর্থগুলোও বর্তমানে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ব্যবহার করা উচিত।

লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী প্রিয়তি দে বলেন, অদৃশ্য প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের কারণে শিক্ষাজীবন থেকে শুরু করে সব কিছুই অনিশ্চিত হতে চলেছে। আর বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু আমাদের কাছে আরেকটি পরিবারের মতো তাই এই করোনাকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে আমাদের পাশে পাওয়ার প্রত্যাশা রাখছি।

তিনি বলেন, মহামারী শেষে অনেক শিক্ষার্থীকেই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়তে হবে। আমরা প্রত্যাশা করি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। দুর্যোগ পরবর্তীকালীন সময়ে টাকার অভাবে কোন শিক্ষার্থীর পড়ালেখা যেন বন্ধ হয়ে না যায় এটা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদেরও নিয়মিত খোঁজ খবর রাখতে হবে যাতে তারা অবসাদগ্রস্ত হয়ে না পড়ে।

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী এস কে ইজাজুর রহমান বলেন, আমরা প্রতিবছর উন্নয়ন তহবিলে বড় অংকের একটি টাকা দেই। এছাড়া ছাত্র সংসদ ফি, কমন রুম ফিসহ বেশ কয়েকটি খাত রয়েছে। যেগুলোর অর্থের ব্যয় পারতপক্ষে দৃশ্যমান নয়। টাকাটা যেহেতু আমাদের তাই একজন শিক্ষার্থী হিসেবে চাই এসব খাতের টাকা এই দুর্যোগকালে শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যয় করা হোক।

তিনি বলেন, অসুস্থতা কিংবা যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগেই শিক্ষার্থীদের পাশে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তব্য। বিশ্ববিদ্যালয় এই কর্তব্য সঠিকভাবে পালন না করলে শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যকার পারষ্পরিক সম্পর্কের অবনতি ঘটবে।

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এস এম আসিফ সিদ্দিক বলেন, করোনা এবং আম্পানের মতো দুর্যোগের কারণে অনেক শিক্ষার্থী দুঃসময় পার করছে। এমতবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব ক্ষতিগ্রস্ত সকল শিক্ষার্থীদের পাশে থাকা। তাদের সঠিক তথ্য সংগ্রহ করে তাদের জীবন যাপনের জন্য নূন্যতম আর্থিক সহযোগিতার ব্যবস্থা করা।

বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থী জাকির হোসেইন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় বলতে এমন এক পরিমন্ডলকে বুঝায় যেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেকে সমৃদ্ধ করার গুনাবলিরও শিক্ষা পাওয়া যায়। কিন্তু বর্তমানে এই সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে করোনা পরিস্থিতি প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরূপ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে প্রত্যাশা করি বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের জন্য এমন এক ভরসার জায়গা হবে যাতে মহামারী আমাদের কাছে হতাশায় রুপ না নেয়৷

লাইভস্টক সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরেনারি মেডিসিন বিভাগের শিক্ষার্থী তোফায়েল আহমেদ বলেন, দুর্যোগের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের অবশ্যই শিক্ষার্থীদের পাশে থাকা উচিত। আর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে বসবাস করে। কিন্তু করোনা এবং আম্পানের কারণে তাদের অনেকরই এখন বাড়িভাড়া প্রদানের সামার্থ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত এরূপ পরিস্থিতিতে ছাত্র কল্যাণ তহবিল থেকে শিক্ষার্থীদের সহায়তা প্রদান করা।


সর্বশেষ সংবাদ