কুয়েটের দুই কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ

আতাউর রহমান মোড়ল ও এমদাদ মোড়ল
আতাউর রহমান মোড়ল ও এমদাদ মোড়ল  © সম্পাদিত

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) আইন ২০০৩-এর ৪৪(৫) ধারা অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কোনো ধরনের রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার সুযোগ নেই। তবে এই আইন লঙ্ঘন করে কুয়েটের দুই কর্মচারী সরাসরি রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৮তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভায় গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আবারও সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে আইন অমান্যকারীর বিরুদ্ধে চাকরিচ্যুতিসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

গত বুধবার শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এর প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একটি অংশ পাল্টা মানববন্ধন করে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মানববন্ধনে অংশ নেওয়া আতাউর রহমান মোড়ল ও তার ভাই এমদাদ মোড়ল বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। 

শিক্ষার্থীদের দাবি, আতাউর রহমান মোড়ল খুলনা মহানগরের যোগীপোল ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এবং ২০২৪ সালে ফুলবাড়িগেট বিএনপি কার্যালয়ে আয়োজিত দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের আপ্যায়ন কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। তার ভাই এমদাদ মোড়লও একই ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য এবং বর্তমানে উপাচার্যের দপ্তরে কর্মরত রয়েছেন। শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, মানববন্ধনে অংশ নেওয়া অনেকেই একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত। এছাড়া মানববন্ধনে অংশ নেওয়া আরেক কর্মচারী হালিম বক্তব্যের শেষে বিএনপির প্রচলিত স্লোগান ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ উচ্চারণ করেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

কুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০ ব্যাচের এক শিক্ষার্থী জানান, ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ একটা রাজনৈতিক সংগঠনের স্লোগান। আমরা দেখতে পাচ্ছি ভিসি এবং তার অনুসারীরা সকলেই নির্দিষ্ট একটা রাজনৈতিক সংগঠনের লোক এবং তারাই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা শিক্ষার্থীরাও জানিয়ে দিচ্ছি, শিক্ষার্থীদের উপর বর্বর হামলার বিচারের জন্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজনীতিমুক্ত রাখতে আমরা আমাদের এক দফা দাবি আদায়ের আন্দোলনে অনড় থাকবো।

এ বিষয়ে এমদাদ মোড়ল বলেন, আমি আগে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, তবে গত বছরের ২২ জুলাই আমি পদত্যাগ করেছি। তবে তার ভাই আতাউর রহমান মোড়লের বর্তমান রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং জানান, আতাউর রহমান বর্তমানে মাস্টাররোলে কর্মরত আছেন এবং মানববন্ধনে অংশ নিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. ফারুক হোসেন বলেন, আমি মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলাম না। কেউ 'বাংলাদেশ জিন্দাবাদ' স্লোগান দিয়েছে কি না, তা আমার জানা নেই। যাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কথা বলা হচ্ছে, তারা হয়তো একসময় যুক্ত ছিলেন, এখনো যুক্ত আছেন কি না তা নিশ্চিত নই। এসব বিষয়ে প্রশাসন কী ভাবছে, সেটাও জানা নেই। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।

রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমি এখনও বলছি— যদি আমার কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী রাজনীতির সাথে জড়িত এমন প্রমাণ কেউ দিতে পারে, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তবে ব্যবস্থা নেওয়ার আগে বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে দেখতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ