এক দশকে শাবিপ্রবির গবেষণায় বাজেট সর্বোচ্চ হলেও ফলাফল শূন্য

  © টিডিসি ফটো

এক দশকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) গবেষণা ও উদ্ভাবনে বাজেট সর্বোচ্চ হলেও বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ে দিন দিন তলানিতে নামছে উচ্চ শিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানটি। শিক্ষা, গবেষণা ও প্রযুক্তির উদ্ভাবনে এক সময় দেশের শীর্ষস্থানে অবস্থান ছিল এ বিশ্ববিদ্যালয়ের। বিগত কয়েক বছর ধার দেশে গুণগত মান ও গবেষণায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে প্রথম স্থান ধরে রেখেছিল দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। 

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থা কোয়াককোয়ারেলি সাইমন্ডসের (কিউএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশে শাবিপ্রবির অবস্থান ছিল ৮ম (বিশ্বে ৪০১-৪৫০)। তবে ২০২৪ সালে পিছিয়ে ১৩তম অবস্থানে চলে আসে। এরপর কিউএস র‍্যাঙ্কিং-২০২৫ অনুযায়ী দেশে শাবিপ্রবির অবস্থান ১০ম, যা বিশ্বে ১২০০-১৪০০তম। গত ৫ জানুয়ারি নেদারল্যান্ড ভিত্তিক চিকিৎসা ও বিজ্ঞান বিষয়ক নিবন্ধ প্রকাশনা সংস্থা এলসেভিয়ার কর্তৃক প্রকাশিত গবেষণাপত্রের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা প্রকাশ করা হয়। তালিকায় দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে তৃতীয় এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ১২তম স্থানে ছিল শাবিপ্রবি।

সম্প্রতি স্পেনের শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিমাগো র‍্যাঙ্কিং-২০২৫ অনুসন্ধান করে দেখা যায়, গবেষণা, সামাজিক প্রভাব ও উদ্ভাবনে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ১৭ ধাপ পিছিয়ে ২৭তম স্থানে চলে এসেছে শাবিপ্রবি। এমনকি সিমাগো র‍্যাঙ্কিং অনুযায়ী, ২০২৫ সালে গবেষণায় দেশের সেরা দশ বিশ্ববিদ্যালয়েও জায়গা হয়নি। যা এক দশকে গবেষণা র‍্যাঙ্কিংয়ে বড় ধাক্কা। বিশ্বের প্রথম সারির চিকিৎসা ও বিজ্ঞানবিষয়ক প্রকাশনা নিবন্ধ সংস্থা এলসেভিয়ার কর্তৃক স্কোপাস ডাটা অনুসন্ধান করলে দেখা যায়, সর্বশেষ র‍্যাঙ্কিংয়ে দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে দুই ধাপ পিছিয়ে তৃতীয় স্থানে চলে এসেছে। 

এর আগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে প্রথম ছিল শাবিপ্রবি। এক দশকে গবেষণায় বাজেট বাড়লেও দিনদিন পিছিয়ে পড়ছে শাবিপ্রবি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে গবেষণা ও উদ্ভাবন খাতে বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৯ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা। যা এক দশকে সর্বোচ্চ। তবে বাজেট বাড়লেও দিনদিন উল্লেখযোগ্য হারে গবেষণা কমছে।

গত ১০ বছরে সিমাগোর গবেষণা তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে শাবিপ্রবির গবেষণা হার ছিল সর্বোচ্চ। এমনকি ২০১৬ সালে দেশের সেরা রিসার্চ ইউনিভার্সিটি হিসেবে জায়গা করে নিয়েছিল। ২০১৮ সালে সেই হার কিছুটা কমলেও ২০১৯-২০ সালে বৃদ্ধি পায়। ২০২০ সালের পর থেকে ২০২৪ পর্যন্ত গবেষণা উল্লেখযোগ্য হারে কমে প্রায় শূন্য কোটায় নেমে এসেছে।

বিগত সময়ে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এটিই প্রথম বাংলা সার্চ ইঞ্জিন ‘পিপীলিকা’র উদ্ভাবন, যানবাহন ট্র্যাকিং ডিভাইস উদ্ভাবন, চালকবিহীন বিমান (ড্রোন) উদ্ভাবন, বাংলায় কথা বলা সামাজিক রোবট ‘রিবো’, হাঁটতে-চলতে সক্ষম রোবট ‘লি’, অনলাইনে ট্রান্সক্রিপ্ট উত্তোলনের সুবিধা চালু, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কিবোর্ড তৈরি, তাৎক্ষণিক সার্টিফিকেট যাচাইয়ের জন্য ‘ব্লক চেইন’ পদ্ধতি, গবেষণায় নকল যাচাই করার জন্য ‘টার্ন-ইট-ইন’ পদ্ধতি চালু, পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যানসার নির্ণয়ের পদ্ধতি উদ্ভাবন ও সর্বশেষ তারবিহীন বৈদ্যুতিক গাড়ি উদ্ভাবনসহ অসংখ্য উদ্ভাবন কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

বর্তমানে এসব কার্যক্রম নেই বললেই চলে। ফলে বৈশ্বিক র‍্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে পড়ছে শাবিপ্রবি। এর জন্য বাজেট বাড়ানো স্বত্বেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণায় অনীহা, স্বজনপ্রীতি, গবেষণা বাজেটের যথাযোগ্য ব্যবহার না হওয়া, অনিয়ম, স্কোপাস, গুগল স্কলারস ও রিসার্চ গেট ইত্যাদিতে প্রোফাইল আপডেট না তাকা, হায়ার ইনডেক্স জার্নালে পর্যাপ্ত প্রকাশনা না হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে পিছিয়ে পড়ছেন বলেও অভিযোগ করেন অনেকে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বিগত সময়ে গবেষণায় অনেক গ্যাপ রয়ে গেছে। বর্তমান প্রশাসন আসার পর, আমরা গবেষণায় মান উন্নয়নে বেশ কিছু ক্রাইটেরিয়া ও পদ্ধতিগত পরিবর্তন নিয়ে এসেছি। বিগত সময়ে শুধু রিসার্চ প্রপোজাল মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ১০০ নম্বর দেওয়া হতো। এখন আমরা সেটা ৭৫ করেছি এবং অতিরিক্ত ২৫ মার্ক পাবলিকেশন, ওয়েবসাইট ডেভলপমেন্ট, পিএইচডি সুপারভিশন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বরাদ্দ রেখেছি। আশাকরি শীঘ্রই গবেষণা র‍্যাংকিংয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয় ভালো অবস্থানে চলে আসবে।’


সর্বশেষ সংবাদ